রবিবাসরীয় সাহিত্যের দিন প্রতিদিন

  আমাদের নিয়মিত সাহিত্য সাধনার দিন প্রতিদিন  


আধুনিক বাংলা সাহিত্যের নবীন লেখক সন্দীপ চক্রবর্তী । সন্দীপ লেখেন, নিজের অনুভুতি দিয়ে। সেখানে পাওয়া যাবে নিজেকে খুঁজে। বর্তমানে সন্দীপ একটি সাপ্তাহিকপত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগের অন্যতম । আজ তাঁর ধারাবাহিক থেকে একটু চোখ ফিরিয়ে আবার স্বাদ নিই  ধারাবাহিক উপন্যাসের।এবার থেকে  প্রতি রবিবার প্রকাশিত হবে এক একটি পর্ব। কারণ কিছুই নয় সন্দীপের উপন্যাসের এক একটি অধ্যায় মানে এক একটি গল্প। তাই রবিবাসরীয় একটা সাহিত্যের আড্ডা ভরানো থাক সন্দীপের উপন্যাসে।   আজ সন্দীপের উপন্যাসের শেষ পর্ব।  আপনারা , মানে পাঠকরা , আমাদের এই সাধনায় যে ভাবে পাশে ছিলেন , আমরা অবিভুত । আসছে সন্দীপের নতুন উপন্যাস। একেবারে এক নতুন চিন্তা ধারার প্রতিফলন। সঙ্গে থাকবেন। 

ঝুলবারান্দার নীচে #৪০





সন্দীপ চক্রবর্তী
কথা কখনও মরে না। কথা দিয়ে কথা রাখতে পারলে মনে হয় সত্যরক্ষা করলাম। যাকে কথা দিয়েছি তার সঙ্গে আর যদি কখনও দেখা নাও হয়, আমি ওই মুহূর্তের সত্যের মধ্যে চিরকালের হয়ে বেঁচে থাকব।
মৌরিপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে নেমে কথাগুলো মনে হল। আজ দুর্গাষষ্ঠী। মোহরকে কথা দিয়েছিলাম পুজোয় আসব। আমি কথা রাখতে পেরেছি। আশ্চর্য এক আনন্দের অনুভূতি আমার মন জুড়ে। পাখির মতো হালকা পায়ে স্টেশনের বাইরে এলাম। মাথার ওপর নীল আকাশ। মাঝে মাঝে মন কেমন করা হাওয়া। আর দূর থেকে ভেসে আসা ঢাকের আওয়াজ। আমার আনন্দ বহুগুণে বাড়িয়ে দিল মৌরিপুর।
স্টান্ডে রিকশা নেই। অগত্যা টোটোর শরণাপন্ন হতে হল। মুশকিল হল, বাহন দ্রুতগামী হলে রাস্তা তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়। বাউন্ডুলের পক্ষে যা মেনে নেওয়া কঠিন। পৌঁছনোর তাড়া আমার ছিল না। অল্পবয়েসি ড্রাইভারটিকে রয়েসয়ে যাবার কথা বলেওছিলাম। কিন্তু সে চোখ কপালে তুলে বলল, কী বলছেন স্যার! স্টান্ডে সবাই আমাকে বলে রকেট তাপস। সবার আগে পৌঁছতে না পারলে বদনাম হয়ে যাবে।
বসন্তবাবু বাড়িতেই ছিলেন। আমি সবেমাত্র উঠোনে পা রেখেছি, তিনি দেখতে পেয়ে বেরিয়ে এলেন৷ মুখে একগাল হাসি, জানতাম আসবেন। আপনি আপাদমস্তক ভদ্রলোক। কথা দিয়ে কথার খেলাপ করবেন না।
আপনাদের খবর সব ভালো তো বসন্তবাবু?
আমরা ভালো আছি। মেয়ে আমার সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। আপনার ঋণ আমরা বাপ-বেটিতে কোনওদিন শোধ করতে পারব না।
মোহর স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে শুনে মন আরও ভালো হয়ে গেল। এটাই আমি চেয়েছিলাম। তবে শুধু এটাই চেয়েছিলাম কি? জানি না। হয়তো আজ থেকে অনেকদিন পর এ প্রশ্নের উত্তর পাব। সেই উত্তর যাই হোক, চাওয়া-পাওয়ার দাঁড়িপাল্লায় মেপে তাকে যে আমি কোনওদিনই ছোট করব না--সেটা আমি এখনই হলপ করে বলতে পারি। বললাম, যা হবার তাই হয়েছে বসন্তবাবু। এখানে আমি নিমিত্ত মাত্র।
আপনি মহান তাই এ কথা বলছেন। আমরা তো জানি আপনি না থাকলে হত না। যাক, ওসব কথা। ওপরে চলুন। হাতমুখ ধুয়ে বিশ্রাম করবেন।
ওপরে গেলাম। এবারও মোহরের পাশের ঘরটি আমার জন্য নির্দিষ্ট। মোহরের ঘরের দরজায় শেকল তোলা। নীচেও ওকে দেখিনি। জিজ্ঞাসা করলাম, মোহর কোথায় বসন্তবাবু? ওকে দেখছি না!
ও একটু বেরিয়েছে। এক্ষুনি ফিরে আসবে। আপনি হাতমুখ ধুয়ে নিন। আমি বরং আপনার জন্য চায়ের ব্যবস্থা করি।
মোহর ফিরুক না। তারপর না হয় চা হবে।
মোহরই বলে গেছে। আপনি এলে যেন চা দেওয়া হয়। কাজের মেয়েটাও আছে৷ বললে চা করে দেবে। মোহর এলে না হয় আর এক কাপ খাবেন।
বসন্তবাবু চলে গেলেন। ফ্রেশ হয়ে এসে আরাম করে বসলাম। ট্রেনে সিগারেট খেতে পারিনি। রকেটের টোটোতেও না। কিন্তু সিগারেট ধরাতে গিয়ে মনে পড়ল অ্যাশট্রের কথা। আমি যেখানে-সেখানে সিগারেটের ছাই ফেলতে পারি না। জানলা দিয়ে বাইরে যে ফেলব সে উপায়ও নেই। কারও গায়ে পড়তে পারে। কী করা যায় ভাবছি, ঠিক তখনই হঠাৎ চোখ পড়ল টেবিলে। দেখলাম যথাস্থানে রয়েছে অ্যাশট্রেটা৷ কাছে যেতে আরও একটি সত্য প্রকাশিত হল। আগের বারের সিগারেটের টুকরো একটিও নেই। একদম ঝকঝক করছে অ্যাশট্রেটা। অদ্ভুত এক তৃপ্তিতে ভরে গেল মন। কারণ একা বসন্তবাবুই জানতেন না, মোহরও জানত আমি আসব। কথার খেলাপ করব না। তাই আমার প্রয়োজনের জিনিসটি ঠিক জায়গায় রেখে দিয়েছে।
তবে এখানেই শেষ নয়। টেবিলের ড্রয়ারে ঘড়ি রাখতে গিয়ে দেখি সেখানে একগুচ্ছ ফুলস্ক্যাপ কাগজ যত্ন করে রাখা। যদি আমার লেখার ইচ্ছে হয় সেইজন্য আর কী! অন্য ড্রয়ারটি বন্ধ। কী আছে জানার কৌতূহল হল। মোহর কি এই ঘরের সর্বত্র আমাকে নিয়ে ওর দিনযাপনের চিহ্ন ছড়িয়ে রেখেছে? খুলে ফেললাম ড্রয়ারটা। না, কিছু নেই। স্নিগ্ধ এক শূন্যতা উঠে এল ড্রয়ার থেকে। স্নিগ্ধ কারণ এটুকু না থাকলে জীবনের ভারসাম্য রক্ষা পেত না। ব্যাগ থেকে দুটো প্যাকেট বের করলাম। দুটোই ব্রাউন কাগজে মোড়া। একটা ছোট আর একটা বড়ো। রেখে দিলাম খালি ড্রয়ারটায়। মোহর এলে দেব।
আয়েশ করে সিগারেট ধরালাম। এবারে মোহরের আচরণে আমি বিন্দুমাত্র অবাক হইনি। ওর যা বলার তা আমাকেই শুধু বলেছে। যা বোঝানোর আমাকেই বুঝিয়েছে। আর কেউ বোঝেনি। বুঝবেও না। এই কথাই তো ছিল আমাদের। আমরা কেউ কাউকে বাইরে আনব না। ভয় শুধু একটাই। যে ভালোবাসার কোনও পরিণতি নেই, কোনও দেশ নেই, ঘর নেই--তাকে বুকের মধ্যে রেখে বেঁচে থাকা খুব সহজ নয়। পারবে তো মোহর?
ঘরের বাইরে পায়ের শব্দ পেলাম। মনে হল বসন্তবাবু ফিরে এলেন বুঝি। কিন্তু না, বসন্তবাবু নন। ঘরে এল মোহর। হাতে চায়ের কাপ আর একটা প্লেটে শিঙাড়া এবং কড়াপাকের সন্দেশ। টেবিলে সব নামিয়ে রেখে বলল, নিন, খেয়ে নিন। খিদে পেয়েছে তো?
আমি ওকে দেখছিলাম। আলো ছাড়া ওকে আর কিছু ভাবা যায় না। মাঝে মাঝে মনে ধাঁধা লেগে যায়। এই আলোয় তো একটা সংসারও আলোকিত হয়ে উঠতে পারে, তা হলে প্রদীপের পিলসুজ হতে আমার এত দ্বিধা কেন? একজন মানুষ চার দেওয়ালের মধ্যে থাকলেই কি তার বিশ্ব ফুরিয়ে যায়?
জিজ্ঞাসা করলাম, কেমন আছ মোহর?
ভালো আছি। আপনি?
আমিও ভালোই আছি। এবারে এখানে এসেই তোমার হাতের ছোঁয়া পেলাম। অ্যাশট্রে, কাগজ তারপর এই কড়াপাকের সন্দেশ। এত যত্ন করে আমায় মনে রেখো না মোহর। কষ্ট পাবে।
মোহর হাসল, কষ্টকে মেনে নিলে আর কষ্ট কী! খেয়ে নিন। চা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।
ড্রয়ার থেকে প্যাকেটদুটো বের করে বললাম, নাও। পুজোয় তোমার উপহার।
কী আছে এতে?
নিজেই খুলে দ্যাখো।
ছোট প্যাকেটটা খুলে আলতার শিশি বের করে মোহর কোন সুদূরে হারিয়ে গেল কে জানে! আমার কোনও তাড়া নেই। ও ঘুরে আসুক। ফিরে আসুক। আমি অপেক্ষা করব।
কিছুক্ষণ পর মোহর বলল, আপনিও তো যত্ন করে আমায় মনে রেখেছেন।
মনে মনে বললাম, আমি তো মনে রাখবই। মনে না রাখলে আত্মস্থ করব কী করে?
বড়ো প্যাকেট খুলে শাড়িটা বের করে মোহর অবাক হয়ে বলল, এ কী! এ তো রঙিন শাড়ি। আমি পরব কী করে?
রঙিন শাড়ি কোথায় দেখলে! শুধু পাড় আর কয়েকটা বুটি রঙিন। বাকিটা তো সাদাই।
গ্রামের বিধবার কাছে এই রংই অনেক। লোকে তো ছি ছি করবে। না না, আমি পারব না।
তুমি রঙিন শাড়ি পরলে যারা ছি ছি করে তাদের হিসেবের মধ্যে রেখো না মোহর। যাদের ভালো লাগে তাদেরই শুধু রাখো।
সে তো শুধু আপনি আর বাবা।
বেশ, না হয় আমাদের জন্যেই পরলে
মোহর কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল,এই শাড়ি পরে বাবার সামনেও আমি যেতে পারব না। আমার লজ্জা করবে। শুধু আপনার জন্য পরব। তা হলে হবে তো?
যে পুরুষের জন্য একজন নারী তার লজ্জা ত্যাগ করতে পারে সে-ই তো তার প্রেমিক। আমি মোহরের প্রেমিক ঠিকই কিন্তু যে-প্রেম মনকে মোহগ্রস্ত করে তোলে আমার তাতে বিশ্বাস নেই। আমার প্রেম যেন ওর জীবনে অফুরান শক্তির ভাণ্ডার খুলে দিতে পারে। স্বামীর মৃত্যু একটা দুর্ঘটনা কিন্তু তার জন্য ওকে যারা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে বিধবা বানিয়ে রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমার প্রেম যেন ওর প্রেরণা হতে পারে। তাই বললাম, বসন্তবাবুর কাছে তোমার কীসের লজ্জা! তিনি তো তোমার বাবা।
বাবা পুরনো দিনের লোক। হয়তো মানতে পারবেন না।
পারবেন মোহর। মিছিমিছি চিন্তা করো না।
আমি যদি শুধু আপনার জন্য পরি তা হলে হবে না?
হবে। নিশ্চয়ই হবে। কিন্তু আমি চাই তোমার রং সবাই দেখুক।
মোহর হেসে বলল, সবাই তো আমায় রং দেয়নি। যে দিয়েছে আমার রং আমি শুধু তাকেই দেখাব। দোহাই, এবার খেয়ে নিন। চা তো জুড়িয়ে শরবৎ হয়ে গেল।
দুই
পরের দিন সকালে খুকুমণির সঙ্গে দেখা করব বলে বেরিয়ে পড়লাম। ওদের বাড়ি পাকুড়তলায়। জায়গাটা এখান থেকে অনেকটাই দূরে। আগের বার মেলার মাঠ থেকে গিয়েছিলাম বলে কাছে হয়েছিল। সেবার রাস্তা ছেড়ে জন্মাষ্টমীর মেলায় গিয়েছিলাম মাঠ দিয়ে। মাঠেই দেখা হয়েছিল খুকুমণির সঙ্গে। একপাল হাস নিয়ে ও বাড়ি ফিরছিল। পিছনে সার বাঁধা সাত-আটটা হাঁস আর সামনে মিলিটারি কমান্ডারের ভঙ্গিতে আগুয়ান এক বালিকার অপরূপ ছবি আজও আমি ভুলিনি।
আমার হংসবালিকা এখন কেমন আছে কে জানে! দিকবিজয়ী হংসবাহিনীকে অনাথ করে ওর যাবার দিনক্ষণ তো ঠিক হয়েই গেছে। এই যে যাচ্ছি, জানি না দেখা হবে কি না!
যে বাড়ির চৌকাঠে মৃত্যুর ছায়া পড়ে তাকে দূর থেকেই চেনা যায়। খুকুমণিদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আমার এই কথাই মনে হল। পুজোর সময় এমন নিস্তব্ধতা ভাবা যায় না। আশেপাশের বাড়িগুলোতেও কোনও শব্দ নেই।
চৌকাঠ পেরিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখলাম উঠোনে একটা লোক দুই হাঁটুর মধ্যে মাথা গুঁজে বসে আছে। বসে থাকার ভঙ্গিটা ভালো লাগল না। তবে কি খুকুমণি আর নেই?
পায়ের শব্দে মুখ তুলল লোকটা। চিনলাম। কানামাছি। মেলার মাঠের সেই হরবোলা। শ্বাস গোপন করে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার গিন্নি কেমন আছে কানামাছি?
কে? কে গ?
পরিচয় দিলাম। চিনতে পারল কানামাছি। ওর অন্ধ চোখদুটি জলে ভরে গেল, বাবু আলেন! কারে দ্যাখতে আলেন গ? একেবারে শ্যাষ অবস্থা। ওরা গিন্নিরে কইলকাতায় নিয়া গেছিল। ওখানাকার ডাক্তাররাও কোনও আশার কথা বলেন নাই। বড়োজোর আর মাসখানেক। এখন খাতে পারে না আমার গিন্নি। শুধু ঝলকে ঝলকে রক্ত ওঠে।
ডাক্তাররা কী বলতে পারেন আমি অনুমান করতে পারি। এসব কথায় আমার কোনও কাজ নেই। আমি কাজের কথা জিজ্ঞাসা করলাম, গাঙশালিকের খোঁজ তুমি পেয়েছ কানামাছি?
ইখানে তো লদি লাই। গাঁয়ের একজন বলল, ডায়মন্ডহারবারে চলে যাও। সিখানে তারা ঝাঁকে ঝাঁকে আসেন। গ্যালাম সিখানে। তা, বাবু লোকটা মিছা বলেনি। কানভরে শোনলাম তাদের ডাক। তারপর গলায় তুলে নিয়া আলাম ইখানে।
খুকুমণি শুনেছে?
শোনেছে গ। শোনার পর আমার গিন্নির সে কী খিলখিল হাসি! এত আনন্দ সে বোধহয় কোনওদিন পায়নি। কিন্তু তবুও শ্যাষরক্ষা হল না গ বাবু। গিন্নির এখন শখ হয়েছে দ্যাখার। ডাক শোনে আর মন ভরে না। আমাকে রোজ বলে, একবার দ্যাখাও না কানামাছি। সে পাখি কত সুন্দর দেখি। সেই কথাডাই এখন বসে ভাবছিলাম। আমি নিজে চখে দেখি না, গিন্নিরে কী করে দ্যাখাই--
আমি জানতাম কানামাছি একদিন নদীর খোঁজ পাবে। খুকুমণির সাধও অপূর্ণ থাকবে না। মানুষ চাইলে যে-কোনও বাধা পেরিয়ে যেতে পারে৷ কিন্তু খুকুমণির নতুন শখ মেটানো একজন অন্ধ মানুষের পক্ষে সম্ভব কি? কান থাকলে ডাক শোনা যায় কিন্তু যার ডাক তাকে ধরতে গেলে চোখ চাই। মনে পড়ল আমার নতুন কেনা অ্যান্ড্রয়েড ফোনটির কথা। নিজের প্রয়োজনেই কিনেছি। আজ অন্য এক প্রয়োজনে ব্যবহার করব। বললাম, দুঃখ করো না কানামাছি। ডাক তুমি শুনিয়েছ৷ দেখা আমি করিয়ে দেব।
খুকুমণির বাবা বাড়িতেই ছিল। আমায় দেখে ম্লান হেসে বলল, আপনি এসেছেন! আপনার কথা মাঝে মাঝে বলে। আসুন, ভেতরে আসুন।
সেই ঘর। খাটে চোখ বুজে শুয়ে আছে খুকুমণি। পাশে ওর মা। হাতপাখার হাওয়া দিচ্ছে। মাত্র একমাসে বিছানায় প্রায় মিশে গেছে মেয়েটা। চোখের নীচে কালি। খাঁচা ফেলে উড়ে যাওয়ার সব আয়োজন শেষ করে ফেলেছে পাখি। ওর মা বলল, জেঠু এসেছে খুকু। কথা বলবি না?
খুকুমণি চোখ খুলে আমায় দেখে হাসল। হংসবালিকার অপরাজিত হাসি। বললাম, কেমন আছিস খুকু?
সব হলুদ রংয়ের জানো। আকাশ হলুদ, মাটি হলুদ, মানুষ হলুদ। তুমিও হলুদ। এরকম কেন হয় বলো তো?
ওর মা ডুকরে উঠল। ওর বাবার মুখ অন্যদিকে ফেরানো। আমার মুখ লুকোবার জায়গা নেই। বললাম, তুইও সব হলুদ দেখিস! আমিও তো দেখি। ভোরবেলায় সূর্য ওঠার আগে আকাশ এরকম হলুদ হয়ে যায়। এইসময়েই তো গাঙশালিকেরা বাসা থেকে বেরোয়। তুই তো ওদের ডাক শুনেছিস।
শুনেছি। কী সুন্দর ডাক! এবার আমি ওদের দেখব। কানামাছি বলেছে একদিন দেখাবে।
একদিন নয় খুকু। আজই তোকে দেখাব।
খুকুমণি উদ্ভাসিত চোখে বলল, সত্যি!
হ্যাঁ রে!
পকেট থেকে ফোন বের করলাম। তারপর নেট ঘেঁটে গাঙশালিকের একটা ভিডিও দেখিয়ে বললাম, এই দেখ কেমন হলুদ রংয়ের আকাশে ওরা উড়ছে৷ ওরা তো নদীর কাছে থাকে। নদীটাও হলুদ হয়ে গেছে। একটু পরেই সূর্য উঠবে। অপেক্ষা কর। তখন রং পালটে যাবে। কিছুই আর হলুদ থাকবে না।
বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না৷ খুশি আর আনন্দে মাতোয়ারা খুকুমণি বলল, হ্যাঁ গো জেঠু। সূর্য উঠেছে। কমলা রংয়ের সূর্য। হলুদ রং কমলা হয়ে যাচ্ছে৷ গাঙশালিকেরা ডাকতে ডাকতে উড়ে যাচ্ছে৷ কী মজা! সূর্য উঠলে আমার হলুদ রংও পালটে যাবে, তাই না জেঠু?
হ্যাঁ খুকু।
কখন উঠবে সূর্য?
এই তো, সময় হয়ে গেছে৷ আর মাত্র কয়েকটা দিন।
ভিডিও শেষ হয়ে গেল। হাই তুলল খুকুমণি। বুঝলাম গাঙশালিক দেখার উত্তেজনায় ওর দুর্বল শরীরে ক্লান্তি নামছে। হয়তো ঘুমিয়ে পড়বে এবার। জিজ্ঞাসা করলাম, গাঙশালিক দেখে ভালো লেগেছে খুকু?
খুব ভালো লেগেছে। ভেবেছিলাম পুষব। কিন্তু আমার তো নদী নেই। খাঁচায় ওদের কষ্ট হবে।
মানুষের নিজস্ব নদী থাকে না। মানুষ চাইলে নদী হতে পারে। কিন্তু এই কথা বললে কি ছোট্ট মেয়েটা বুঝবে? দেখলাম ওর চোখ বন্ধ। ঘুম নামছে ওর শরীরে। বড়ো শান্তির ঘুম। ওর ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসিটা বলে দেয়, আজ ও কত সুখী। মনে মনে বললাম, ঘুমো খুকু। নিশ্চিন্তে ঘুমো।
খুকুমণির বাবা-মা'র সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম। মনটা ভালো নেই। খড়ির দাগের বাইরে সবাই যেতে পারে না। খুকুমণি পেরেছিল। সময় পেলে আরও কতদূর যেত কে জানে! হয়তো একদিন নদী হয়ে যেত।
মৃত্যুকে এই প্রথম বড়ো নিষ্ঠুর বলে মনে হল।
তিন
দামোদরের এক মাঝি একবার আমায় বলেছিল, জলে ডুবে সুখ নাই গো বাবু। ডাঙায় ডুবে সুখ। হাসি বলেন কান্না বলেন সব তো ওখানেই।
সেদিন কথাগুলো হেঁয়ালির মতো মনে হয়েছিল। কান্নায় ডুবে মানুষ কী সুখ পায় বুঝিনি। মৃত্যুপথযাত্রী এক বালিকা আমায় বুঝিয়ে দিল। গাঙশালিক দেখার পর খুকুমণির নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ার দৃশ্যটা কি কম সুখের? কিংবা ওর ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসিটা! ঠিক সেই মুহূর্তে রানির মতো লাগছিল খুকুমণিকে। কেউ কি বিশ্বাস করবে আমি তখন মনে মনে কাঁদছিলাম, আবার অন্য এক সুখের জোয়ারে ভেসেও যাচ্ছিলাম?
শোক আমি আত্মস্থ করতে পারি। চোখের সামনে বাবা-মা'র মৃত্যু দেখেছি। আমার দুই প্রিয় মানুষের মৃত্যু আমাকে আঘাত করলেও বাইরে তার আঁচ লাগতে দিইনি। কিন্তু খুকুমণির শোক আমি আত্মস্থ করতে পারলাম না। সারাদিন নিজের ঘরেই ছিলাম। মোহরের সঙ্গে কথা হয়েছে বারদুয়েক। ওর চোখে যে কিছু পড়েছে বুঝতে পারিনি। বুঝলাম সন্ধ্যেবেলায়। চা দিতে এসে মোহর জিজ্ঞাসা করল, কী ব্যাপার বলুন তো! আজ আপনি এত গম্ভীর কেন?
মনে হল সব বলি। বলে হালকা হই। কিন্তু খুকুমণির কথা শুনলে যদি মোহরের সন্তানশোক জেগে ওঠে? তাই হেসে বললাম, কই কিছু হয়নি তো! আমি তো ঠিকই আছি।
মোহর হাসল, আপনি ঠিক আছেন কি নেই, আমি বুঝতে পারি। ব্যক্তিগত কোনও কথা হলে আমি জানতে চাইব না। কিন্তু তা যদি না হয় বলতে পারেন।
অবাক লাগল। যে মেয়েটা এই সেদিনও পাথরের মতো চুপ করে বসে থাকত, কারও সঙ্গে কথা বলত না--মাত্র একমাসে কোন ভোজবাজিতে সে এমন সাবলীল হয়ে গেল! ভালোবাসা অপার শক্তি ধরে জানি। কিন্তু এত শক্তি কি ধরে? কী জানি! তবে মনে হল এই মোহরকে সব বলা যায়। বললাম খুকুমণির কথা। মোহর কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলল, মেয়েটা যখন এত কষ্ট পাচ্ছে তখন চলে যাওয়াই তো ভালো। আপনি কি চান ও আরও কষ্ট পাক?
না৷ তা চাই না।
তা হলে? জানি, ওর বাবা-মা'র পৃথিবীটাই ভেঙে যাবে। কিন্তু আবার সয়েও যাবে। আমার যেমন গেছে।
বুবুকে হারানোর শোক তুমি সত্যিই কি ভুলতে পেরেছ মোহর?
মোহর হেসে বলল, শোক কি ভোলা যায়? সয়ে যায়। এখন আর ওর জন্য কাঁদি না। জানি তো যেখানে আছে ভালোই আছে৷ এখানে তো ওর কিছু ভালো লাগত না।
ভালো লাগত না মানে?
সারাদিন চুপ করে বসে থাকত৷ কারও সঙ্গে বিশেষ কথা বলত না। শুধু আমাকে মাঝে মাঝে বলত, আমাকে সেখানে নিয়ে যাবে মা? আমি জিজ্ঞাসা করতাম, কোথায় নিয়ে যাব বুবু? ও বলত, সেই যে যেখানে অনেক পাহাড় আছে। একটা নদী আছে। আর আমার বন্ধু আছে।--আশ্চর্যের ব্যাপার কী জানেন, কে ওর বন্ধু বলতে পারত না। এখন মনে হয়, হয়তো স্বয়ং ঈশ্বরই ওর বন্ধু। মাকে এখানে ফেলে বন্ধুর কাছে দিব্যি আছে বুবু।
নীচে বসন্তবাবুর গলা পাওয়া গেল। মোহরের নাম ধরে ডাকাডাকি করছেন। মোহর যেতে যেতে দাঁড়াল, একটা কথা বলব?
বলো
ভাববেন না আমি নিজের জন্য বলছি। বাচ্চা যখন এত ভালোবাসেন তখন বিয়ে করেননি কেন? করলে তো খুকুমণির মতো একটা মেয়ে আপনারও থাকতে পারত।
জানি না মোহর। তবে মনে হয় সংসার আমার জায়গা নয়। সংসারে থাকলে আমি কাউকে সুখী করতে পারব না, নিজেও সুখী হব না।
অষ্টমীর সকালে বসন্তবাবু আমায় ধরলেন। মানুষটি সরল। মন আর মুখে কোনও তফাৎ নেই। কিছুক্ষণ এলোমেলো গল্প করার পর বললেন, পুজোর দিনে মেয়েটা ঘরে বসে আছে দেখলে খারাপ লাগে। আমার কথা তো শুনবে না। আপনি বললে শুনবে। চাই কি আপনার সঙ্গে কাছেপিঠে কোথাও ঘুরেও আসতে পারে৷
সেটা ভালো দেখায় না বসন্তবাবু। যেদিন মোহরের ইচ্ছে হবে বাইরে যাবার, সেদিন ও নিজেই যাবে। আমাকে ওর দরকার লাগবে না।
না মানে, জানি। আসলে এবারে সন্ধিপুজো খুব তাড়াতাড়ি পড়েছে। সাড়ে আটটায়। আগে মোহর যত রাতই হোক সন্ধিপুজো দেখতে যেত। তাই বলছিলাম আর কী!
এ বছরটা যেতে দিন। মনে হয় পরের বছর মোহর আবার আগের মতো সন্ধিপুজো দেখতে যাবে।
বসন্তবাবু আকাশের দেবতাকে প্রণাম করে বললেন, তাই যেন হয় ঠাকুর। মোহর যেন আবার আগের মতো হয়ে যায়।
গতকাল সকালে খুকুমণিকে দেখতে যাওয়া ছাড়া আর কোথাও যাইনি। সারাদিন বাড়িতেই ছিলাম। আজও আমার কোথাও যাবার ইচ্ছে ছিল না। তবুও বেরিয়ে পড়লাম। অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে হাঁটতে হাঁটতে একসময় পৌঁছে গেলাম মদনমোহনের মন্দিরে। চাতালে কেউ নেই। একটা থামের গায়ে হেলান দিয়ে বসলাম। দূরে আদিগন্ত আকাশ। আশ্বিনের মেঘ। পাখিদের ওড়াওড়ি। কেন কে জানে হঠাৎ আমার দু'চোখ জলে ভরে গেল। মনে হল আমার মতো সুখী এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। সবই তো আছে আমার। সবই তো থাকবে। কিন্তু এই সুখের যে এত মায়া, কই আগে তো এমন করে কখনও বুঝিনি!
বাড়ি ফিরতে দুপুর হয়ে গেল। স্নান-খাওয়া সেরে আবার নিজের ঘরে। মোহর বাড়িতে নেই। কোথায় গেছে বসন্তবাবু বলতে পারলেন না। আপাতত আমার কিছু করার নেই। সিগারেট খেতে খেতে মোবাইলে গান শুনছিলাম। ঘুম নামছিল আমার চোখে। শেষ কবে আমি দুপুরে ঘুমিয়েছি মনে নেই। কিন্তু আজ খুব ইচ্ছে করছে। চোখ বুজে শুয়ে ঘুমের কথা ভাবতে ভাবতে কখন সত্যি-সত্যি ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। ঘুম যখন ভাঙল দেখলাম সন্ধ্যে হতে আর বিশেষ দেরি নেই।
কিছুক্ষণ পর বসন্তবাবু চা নিয়ে ঘরে এলেন। অবাক হলাম, কী ব্যাপার আপনি! মোহর কোথায়?
ওর মাথা ধরেছে বলে শুয়ে আছে। আমাকে বলল, চা হয়ে গেলে তুমি একটু ওর ঘরে পৌঁছে দিয়ো বাবা। আমি একটু পরে যাচ্ছি।
ছি ছি আপনি তো আমায় ডাকতে পারতেন। আমি নীচে গিয়ে চা খেয়ে আসতাম।
তাতে কী হয়েছে? আপনি আমার অতিথি। আপনার জন্য এটুকু তো আমি করতেই পারি।
চা খেতে খেতে গল্প হচ্ছিল। বসন্তবাবু বললেন, বলছিলাম কী, যাবেন না কি সন্ধিপুজো দেখতে?
ইচ্ছে করছে না বসন্তবাবু।
ঠিক আছে। আপনি তা হলে বাড়িতেই থাকুন। আমি একবার ঘুরে আসি।
বসন্তবাবু চলে গেলেন।
সত্যি কথাটা ওকে বলতে পারলাম না বলে খারাপ লাগল। মোহর একটু পরে আমার কাছে আসবে বলেছে। আমি কি এইসময় কোথাও যেতে পারি?
মোহর এল আরও অনেকক্ষণ পর। সন্ধিপুজো বোধহয় তখন শুরু হয়ে গেছে। আমি চুপ করে শুয়েছিলাম। হঠাৎ পায়ের শব্দ পেয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি মোহর! কিন্তু এ কাকে দেখছি আমি? এই কি সেই মোহর? সাদার চিহ্ন নেই কোথাও। শুধু রং আর রং। আমার উপহার দেওয়া শাড়ি পরেছে মোহর। পায়ে দিয়েছে আলতা। এক মুঠো রং যে কাউকে এমন আমূল বদলে দিতে পারে আমি জানতাম না। বললাম, দেখো তো কত সুন্দর লাগছে!
আপনার ভালো লেগেছে?
হ্যাঁ মোহর। খুব ভালো লেগেছে। আর সেইজন্যেই তোমাকে কয়েকটা কথা বলব। বোসো এখানে।
মোহর খাটে বসে বলল, কী কথা!
সাদা থেকে তুমি রঙে এসেছ। কাল থেকে আর সাদায় ফিরে যেয়ো না।
আপনাকে তো বললাম আমার রং সবার জন্য নয়। শুধু আপনার জন্য। তা ছাড়া এটা গ্রাম। বিধবা মেয়ে রঙিন শাড়ি পরে বাইরে বেরোলে লোকে যা তা কথা বলবে। যারা আপনার কথা জানে তারা আপনাকেও অপমান করবে।
করুক। তবু তুমি রং ছাড়বে না। তোমার বয়েসে রঙিন থাকাটাই স্বাভাবিক। তুমি যত স্বাভাবিক হবে তত তোমার শক্তি বাড়বে।
কী করব আমি শক্তি নিয়ে?
বাঁচবে। মাথা উঁচু করে বাঁঁচবে।
মোহর এতক্ষণ অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলছিল। হঠাৎ আমার চোখে চোখ রেখে বলল, একটা কথা বলুন তো, আজ আমায় কেন বলছেন এসব কথা?
কাল আমি চলে যাচ্ছি। তাই--
আর আসবেন না?
আমাদের গল্প তো এই পর্যন্তই মোহর। এরপর যদি আমরা গল্পটা টেনে বাড়াই তা হলে প্রত্যাশার চাপ বাড়বে। সেই চাপে আজকের এই সুন্দর মুহূর্তটা হারিয়ে যাবে। ঘর-সংসার আমাকে দিয়ে হবে না। আর আমার খেয়ালখুশির জীবনের সঙ্গে তুমি পাল্লা দিয়ে চলতে পারবে না।
মোহর হেসে বলল, এসব আমি জানি। আপনার কাছে আমার কোনও প্রত্যাশা নেই। শুধু মাঝে মাঝে যদি দেখতে পেতাম--
সেইজন্যেই তো বলছি রং ছেড়ো না। তোমার রঙে আমি থাকব। তোমার আত্মবিশ্বাসে থাকব। তোমার বেঁচে থাকায় থাকব।
নীচে সদর দরজা খোলার শব্দ হল। বসন্তবাবু সন্ধিপুজো দেখে ফিরলেন বোধহয়। মোহর বলল, আমাকে এবার যেতে হবে।
এসো মোহর। যা বললাম মনে রাখবে তো?
রাখব। তবে কাল থেকেই হয়তো পারব না। পরে যদি কখনও আসেন দেখবেন আমার শাড়িতে রং লেগেছে। আসলে ভেতরের সাদাটাকে কিছু একটা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে তো-- রং ছাড়া সাদা আর কী দিয়ে ঢাকব বলুন!
মোহর ওর কান্না গোপন করার চেষ্টা করল না। ওর কূল ভাসানিয়া চোখ আমাকে অনেক কথা বলে গেল। আমি মনে মনে বললাম, ভালোবাসি বলেই আজ তোমায় কাঁদালাম মোহর। আমায় ক্ষমা করো।
সারারাত অদ্ভুত এক প্রশান্তির মধ্যে কেটে গেল। পরশু আমার প্রদীপের পিলসুজ হতে না পারার দুঃখ ছিল। নিজেকে প্রশ্ন করেছিলাম, চার দেওয়ালের মধ্যে থাকলে বিশ্ব কি ফুরিয়ে যায়? আজ বুঝি সেই দুঃখ আর সেই জিজ্ঞাসা তাৎক্ষণিকের। আমি তৃপ্ত কারণ তাৎক্ষণিকের মোহে চিরকালীনকে ভুলিনি। প্রতারণা করিনি মোহরের সঙ্গে। মিথ্যে স্বপ্ন দেখাইনি ওকে। আমার অন্তরের সত্য অকপটে স্বীকার করতে পেরেছি। মানুষের মুখ দেখতে বেরিয়ে মানুষের মন পেয়েছি, সেই মনের সঙ্গে নিজের মনটিকে মেলাতে পেরেছি-- এর থেকে আনন্দের আর কী হতে পারে! মনে মনে তাই ধন্যবাদ দিলাম আমার পথের দেবতাকে। আবহমান জীবনকে। বললাম, রং দিতে এসেছিলাম। রং আমার দেওয়া হয়েছে জীবন। এবার আমায় অন্য কোথাও নিয়ে চলো।
(শেষ)

মন্তব্যসমূহ