বেহালার দিন প্রতিদিন ' ফ্রেন্ডশিপ ডে' বিশেষ কাজল ভট্টাচার্যের কলমে- " হরি হে 'দীনবন্ধু' "

 ফ্রেন্ডশিপ ডে বিশেষ 

হরি হে 'দীনবন্ধু'



-  কাজল ভট্টাচার্য 

বন্ধু মানেই তো অনুরাগী। ভক্ত। পরমবন্ধুর স্থান মনের মন্দিরে। সেই বন্ধুর থেকে বিচ্ছেদ আসন্ন। আর কোনও উপায় নেই সেই বিচ্ছেদ এড়ানোর। তখন? উধাও রাতের ঘুম। 
'দিল হাকুপাকু মন হাকুপাকু!'

অবশেষে সেই পরমবন্ধু দীনবন্ধুই হলো মুশকিল আসান। তাঁর দুই অনুরাগী জয় বিজয়। পরমবন্ধুর সঙ্গে অনুরাগীর বিচ্ছেদ আসন্ন। বিধির বিধান টলানোর উপায় নেই। কিন্তু প্রতিটি সমস্যার সমাধান আছে। আর তাই ফিরে আসারও উপায় আছে। হৃদয়ের টান যখন দুর্দম, তখন হবে পুনর্মিলনও।

এ সেই বৈকুন্ঠপুরের 'হরি হে দীনবন্ধু' যাকে নিয়ে গান বেঁধেছিলেন সমীর চ্যাটার্জি। লোপামুদ্রা, আগন্তুকের গলায় সেই গান বেশ বাজার মাতিয়েছিলো।
'হরি হে দীনবন্ধু 
তুমি আমারও বন্ধু 
বাপেরও বন্ধু.......'

ব্রহ্মার চার মানসপুত্রের কোপে পড়ে অস্থির জয় বিজয়। দীনবন্ধু তাদের ভরসাতেই স্ত্রী লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে অবসর যাপন করছিলেন। কেউ যাতে সেসময় ঘরে না ঢুকে পড়ে, তার নজরদারিতে ছিলো জয় বিজয়।

এপর্যন্ত শুনে কলেজের দিনগুলির কথা মনে পড়ে গেলো নাকি? গরমের ছুটিতে কলেজের এক্সকার্সনে যাওয়া। তারপর দুই বন্ধুকে আড়াল করে একটু 'ইয়ে- টিয়ে'র সুযোগ করে দেওয়া। এসব অবশ্য সিনেমা হলের আধা আলোছায়াতেও চলতো।

বৈকুন্ঠপুরীর দরজাতেই চার ভাইকে আটকে দিলো জয় বিজয়। তারাই দ্বারপালের দায়িত্বে।
- পরে এসো তখন দেখা হবে।
ব্রহ্মার মানসপুত্র বলে কথা! চটে লাল চার ভাই। পত্রপাঠ অভিশাপ জয় বিজয়কে- 'যা ব্যাটা তোদের আর বৈকুন্ঠপুরীতে কাজ নেই। মর্তে যা। সেখানেই পচে মর।'

'হরি হে দীনবন্ধু' বলে কথা। জয় বিজয়কে ছাড়তে তাঁরও মন চায় না। কিন্তু অভিশাপ খণ্ডানোর ক্ষমতাও তাঁর নেই। অগত্যা কপালে ভাঁজ ফেলে শুধুই ভাবা আর ভাবা। শেষ পর্যন্ত এক উপায় বার করলেন শ্রীহরি।
মর্তে জন্মাতেই হবে জয় বিজয়কে। সেখান থেকে বৈকুন্ঠে ফেরার দুটোই রাস্তা। এক, ভক্ত বা বন্ধু হয়ে দীনবন্ধুকে ফিরে পাওয়া। তাতে কেটে যাবে সাতজন্ম। আর শত্রু হয়ে দীনবন্ধুর কাছে ফিরে আসতে লাগবে মাত্র তিনজন্ম।
 

ফিরে আসাটাই সব। তার আবার শত্রু মিত্র! জয় বিজয় লুফে নিয়েছিলো তিনজন্মে দীনবন্ধু হরির কাছে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাবটাই। 
বাংলা অনার্সের সুন্দরী ইন্দ্রাণীর কথা মনে আছে? কমার্সের পালোয়ান টাইপের স্বপনকে দেখলেই তিড়বিড় করে জ্বলে উঠতো। আর স্বপনটাও তেমনি। সবসময় যেন ওত পেতে থাকতো। যেখানে ইন্দ্রাণী, সেখানেই স্বপন। খিস্তিখাস্তা, চেঁচামেচি করে সবসময় ইন্দ্রাণীর নজরে পড়ার চেষ্টা। তিনজন্মের সুযোগ ছিলো না স্বপনের কাছে। যা করার কলেজের ওই তিন বছরের মধ্যেই করতে হয়েছিলো। তবে কলেজ থেকে বিদায় নেওয়ার দিন পর্যন্ত আমরা যা দেখেছিলাম, তাতে ইন্দ্রাণী হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলো। 
- 'ওফ রক্ষা পেলাম। আর ওই দত্যিটার মুখদর্শন করতে হবে না,' বলেছিলো ইন্দ্রাণী। বছরখানেক পরেই একদিন হাওড়ার প্ল্যাটফর্মে দেখা ইন্দ্রাণীর সঙ্গে। পাশে বত্রিশ পাটি বার করে স্বপন- কী বস, কোথায় ডুব মেরেছিলে?
তিন বছরেই ঠিকঠাক জায়গায় পৌঁছে গেছিল দত্যিরূপী স্বপন।

সাদাচোখে আজ যাকে শত্রু বলে মনে হচ্ছে, বাস্তবে সে শত্রু নাও হতে পারে। সে হয়তো তোমার নজর কাড়তে চাইছে যত্ত সব বদামি করে। ঠিক যেমন জানবাজি রেখে তুখোড় শত্রুতায় নেমে পড়েছিলো জয় বিজয়। আসলে ওই বদটাও পৌঁছতে চায় তোমারই কাছে। তার তর সইছে না তোমাকে পেতে। 
আর যাদের ভক্ত বলে মনে হচ্ছে, তাদের ওই তাড়া নেই। তাদের হাতে সাতজন্মের এক্সপায়ারি। অনর্গল গোলগোল কথা বলে তোমার মনের চিড়া ভেজানো। সাবধানী মানুষজন। তোমাকে পাওয়ার জন্য শত্রুতা করার মতো কোনও ঝুঁকি নেবে না। ভেবে দেখো, তারা সত্যি তোমাকেই পেতে চায় তো? বন্ধু নাকি তারা শুধুই মতলববাজ স্তাবকের দল।

আবার অনেকসময় বন্ধু শত্রু মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। চেনা মুশকিল হয় কে বন্ধু, কে শত্রু। বন্ধু হয়ে যায় শত্রু, শত্রু হয়ে যায় বন্ধু। কোনটা প্রোমোসন কোনটা ডিমোসন বুঝে উঠতে পারি না। 

ওদিকে আবার কেমন ঝাপসা হয়ে যাও তুমিও। তুমিই সেই বন্ধুতো, যাকে ফিরে পেতে চাই? বুঝে ওঠা দায়। আবার কখনও তুমি বন্ধু না, শত্রুও না। তবু, সেই তোমাকেই চাই। সেই তোমার জন্যই গান বেঁধেছিলো সুমন কবিয়াল-
'শান্তি অশান্তিতে তোমাকে চাই
এই বিভ্রান্তিতে তোমাকে চাই।'

বন্ধু, ভালো থেকো। ভালো না রাখার দায়িত্ব শত্রু স্বেচ্ছায় নেয়। চাপাচাপিতেও ভালো রাখার দায়িত্ব নেয় না বন্ধু।

চিত্র সৌজন্যঃ সংগৃহীত 

মন্তব্যসমূহ