আরও একবার ভোরের ঘুম ভাঙাল বাইশে শ্রাবণ, চোখ মেলতেই দেখি সামনে রবীন্দ্রনাথের আবক্ষ ছবি, তাঁর মন-ভালো-করা দুটি চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, 'তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম'।
বাইরে থেকে দু দণ্ড ঘুরে এসে মেঝেয় পায়চারি করছি, এক-একবার তাকাচ্ছি তাঁর দিকে আর বলছি, 'তুমি ছিলে বলেই তো আমি আজ আমি।'
এখন এই ভোরবেলা, জানালার বাইরে কেউ গুনগুন করে গাইছেন, 'তোমার পূজার ছলে তোমায় ভুলেই থাকি'। গানটা তো আমারও প্রিয়, কিন্তু আমি তো তাঁকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলে থাকতে পারি না।
কোনও কারণে যদি বিপর্যস্ত বোধ করি, ব্যথিত হই, একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকি তাঁর সৃষ্টির দিকে, অমনি আমার মন ভালো হয়ে যায়, আমি উজ্জীবিত হই, আমি নতুন করে কাজে হাত দিই। রবীন্দ্রনাথ তাঁর গানের কলি দিয়ে বাঙালির জীবনে নিশ্বাস-প্রশ্বাসের মতো থাকছেন সারাক্ষণ। তাঁর যে-গানই আমরা শুনি বা পড়ি না কেন, সেই গান আমাদের জীবনের কোনও না কোনও অনুভূতি ছুঁয়ে থাকে, আমাদের ভাবায়, ভাবতে শেখায়, কাঁপায়, কাঁদায়, আনন্দে উদবেল করে, উল্লসিতও করে কোনো নিভৃত মুহূর্তে।
এমন বহু বহু পঙক্তি নিয়ে কোনও মানুষ যদি সারাদিন গুনগুন করেন তো তাঁর সমস্ত ভাবনা এক তারে বাঁধা হয়ে যাবে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে।
বাইশে শ্রাবণ শুধু একদিনের নয়, আমাদের সত্তার সঙ্গে মিশে আছে হাজার বাইশে শ্রাবণ। এমন দিনে আমাদের কি একটু মন খারাপ! না, একটুও নয়। তিনি সশরীরে আমাদের সামনে নেই, কিন্তু না-থেকেও আরও বেশি করে আছেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন