বেহালার সেন পল্লীতে জোড়া খুনের ঘটনা স্থলে মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় , তদন্তে ফরেন্সিক দল
বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা,৭ সেপ্টেম্বরঃ বেহালা পর্ণশ্রী থানা এলাকার সেন পল্লীতে ৬ সেপ্টেম্বর জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতীরা খুন করে মা ও ছেলেকে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। দফায় দফায় গত রাত্রী থেকে লাল বাজার থেকে হোমিসাইড শাখা, ফরেনসিক টিম এসে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। কেন খুন হতে হলো এই মা ও ছেলেকে, সেটা নিয়ে ধন্ধে পুলিশ।
আজ বিকেলে ঘটনাস্থলে ছুটে যান স্থানীয় বিধায়ক ও রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী ডঃ পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি স্থানীয় মানুষদের আশ্বাস দেন এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত হবে, দোষীদের খুঁজে বার করতে সরকার সবরকম সহযোগিতা করবে।
এই খুন প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারা হতবাক হয়ে গেছেন। মাত্র এক বছর হয়েছে মন্ডল পরিবার সেন পল্লীর ওই আবাসনেরএকেবারে টপ ফ্লোরে আসেন। একেবারে নির্ঝঞ্ঝাট ছিল এই মন্ডল পরিবার। পাড়ার লোকের সাথে খুব একটা মিশতো না। বছর তেরোর তমোজিত কিন্তু সবার সঙ্গে মিশত। এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা এও জানিয়েছেন যে ওই পরিবারে কোনদিনও ঝগড়া হতে দেখেননি । কি কারণে এমনটা ঘটল , বুঝে উঠতে পারছেন না প্রতিবেশিরা। এদিকে সন্দেহের দানা মৃতার স্বামীকে ঘিরেও। তার অসংলগ্ন কথা , ও কিছু বিষয় পুলিশের কাছে সন্দেহ জনক লাগায় , তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের কাছে রেখেছে পুলিশ। প্রসংগতঃ বেশ কয়েক বছর আগে বেহালার অক্সি টাউনে ঘোষ পরিবারে কর্ত্রী ও পরিচারিকার হত্যা রহস্যের কথা মনে পড়ছে। সেখানে নানা ভাবে তদন্তকে বিপথে চালিত করেছিলেন মৃতার স্বামী। এমনকি খুব স্বাভাবিকও ছিলেন তিনি। পরে দেখা যায় , তিনি ভাড়াটে খুনি দিয়ে হত্যা করিয়েছিলেন। সেখানেও পুলিশের তদন্তে প্রথম দিকে নানা স্বাভাবিকতার মধ্যে অস্বাভাবিকতা আড়ালে চলে যায়। এখানেও কি সেরকম কিছু আছে নেপথ্যে ?
যাই হোক , ফিরে আসা যাক সেন পল্লীর ঘটনায় । এখানে খুনের মোটিভ এখনও অধরা । পেশায় ব্যাঙ্ক কর্মী তপন মন্ডল গতকাল থেকেই এমন আচরণ করছেন , বা তিনি এমন কিছু ঘটনা , যেমন মোবাইল বন্ধ থাকা , বা নিজের স্ত্রীর খোঁজ করা বাড়ি ফিরে এসে। সেখান থেকেই একটা সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়ে গেছে। অন্যদিকে তদন্তকারীদের একটি সুত্র মারফত জানা গেছে যে , আততায়ীরা আগে মাকে খুন করে , পরে ছেলেকে। এবং তাঁরা স্নান করেও নেয়। ঐ সুত্র মারফৎ আরো জানা গেছে যে ঘর থেকে কোন দামী দ্রব্য খোয়া যায়নি। ফলে ডাকাতির তথ্য একটু বাইরে রাখছেন তাঁরা। মৃতার মোবাইল ফোন মিসিং। সেটা পেলেও তদন্ত অনেকটাই এগোবে বলে তাঁদের ধারণা। এদিকে মৃতার স্বামীর কল লিস্ট দেখা হচ্ছে।
আজ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় বহু মানুষ ভিড় করেছে । এসেছেন মৃতা সুস্মিতা মন্ডলের আত্মীয়রাও। তারাও বলছেন , স্বামী - স্ত্রীর মধ্যে খুব মিল দেখেছেন তাঁরা।
এদিকে তদন্তকারীদের একটি বিস্বস্ত সুত্র জানাচ্ছে যে , মৃতার ছেলের অন লাইন ক্লাশের সুযোগ নেয় আততায়ী। এক্ষেত্রে একাধিক মানুষের মানুষের উপস্থিতি ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। আর পেশাদার খুনিও ছিল বলে মনে করা হচ্ছে । এই খুন হয়ত মৃতার ছেলে দেখে ফেলেছিল বলেই ,তাঁকে চলে যেতে হল। যেখানে আই হোল দিয়ে দেখে তবেই দরজা খোলা হত , তাহলে এমন কেউ চেনা এসেছিলেন , যাকে দেখে সন্দেহ না করেই দরজা খুলে দেওয়া হয়েছিল বলে ধারনা তদন্ত কারীদের। সেই ব্যাক্তিটি কে ?
এত বড় একটি ঘটনা ঘটে গেল অথচ যে সময়টা ভাবা হচ্ছে , সেই সময়ে পাশের বাড়ির ছাদে কাজ করতে থাকা মিস্ত্রিরা আওয়াজ পেলেন না, সামনের ফ্ল্যাটের কেউ ,কোনোরকম শব্দই পেলেন না , আশপাশের বাড়ির লোকেরাও কিছু টেরটিও পেলেন না । তাহলে কি তাঁদের কোন ভাবে অজ্ঞ্যান করে দেওয়া হয়েছিল ? সেটাও ভাবনার স্তরে আছে।
এদিকে আর একটি বিষয় হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে। মৃতার স্বামীর হাতে থাকা আংটিতে নাকি রক্তের দাগ পাওয়া গেছে । যদি এমনটা হয় , তাহলে সেই রক্ত কার ? অনেক প্রশ্ন উঠে আসছে এই রহস্য জনক মৃত্যকে ঘিরে। তবে পুলিশের ধারণা , খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা এই খুনের কিনারা করবেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন