বেহালার দিন প্রতিদিন বিশেষ - কলা বউ আসলে কে ?

  দুর্গা পুজোর কলা বউ গণেশ জায়া নন , তিনি গণেশ জননী 


সৌমাগ্নি দাস , কলকাতা , ১২ অক্টোবরঃ শারোদৎসবের সুচনা হয়েছে । আজ মহা সপ্তমী। দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু। গতকাল বেলতলায় হয়েছিল অধিবাস সহকারে আহ্বান। আজ সকাল থেকেই বাড়িতে বা মন্ডপে , হল নবপত্রিকা স্নান । এর পর সপ্তমীর পুজারম্ভ। এই নব পত্রিকা আসলে কি ? সেটা একবার দেখে নেওয়া যাক। 

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী সকলে ভাবেন যে, কলা বৌ গণেশের স্ত্রী। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত তথ্য। গণেশের দুই স্ত্রী। তাদের নাম রিদ্ধি ও সিদ্ধি। আর তাছাড়া দেবতাদের স্ত্রীরা সবসময় পতিদেবতার পাশে থাকেন। কলা বউ যদি গণেশের বউ হতেন, তাহলে তিনি গণেশের বাম দিকে অবস্থান করতেন। কিন্তু কলাবৌ গণেশের ডান দিকে অবস্থান করেন। তাই তিনি গণেশের বৌ নন। যারা ভাবেন কলা বউ গনেশ দেবতার বউ, তারা অঞ্জতার বশবর্তী হয়ে এমনটা বলেন।
কিন্তু কে এই কলা বৌ? কলাবউ এর পরিচয় শুনলে অনেকেই চমকে উঠবেন, হ্যাঁ যাকে গণেশের স্ত্রী ভাবা হয় তিনি আসলে গণেশের স্ত্রী নন, গণেশ জননী! কলা বৌ আসলে দেবী দুর্গার একটি রূপ আর দেবী দুর্গার একটি রূপ হিসেবেই কলাগাছকে মন্ডপের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়। কলা বৌ হল আসলে নবপত্রিকা যা‌ দেবী দুর্গার বৃক্ষ রূপ।
একটি কলাগাছের সঙ্গে অপর আটটি সমূল সপত্র উদ্ভিদ একত্র করে একজোড়া বেল সহ শ্বেত অপরাজিতার লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়। তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার দেবীপ্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পুজো করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম কলাবউ।
নবপত্রিকা দুর্গাপুজোর একটি বিশিষ্ট অঙ্গ। শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নয়টি গাছের পাতা। তবে বাস্তবে নবপত্রিকা নয়টি পাতা নয়, নয়টি গাছ। এগুলি হল: কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (ডালিম), অশোক, মান ও ধান। 
নবপত্রিকার নয়টি উদ্ভিদ আসলে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীকরূপে কল্পনা করা হয়েছে। কদলী গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী ব্রহ্মাণী। কচু গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী কালিকা। হরিদ্রা গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী উমা। জয়ন্তী গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী কার্তিকী। বিল্ব গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শিবা।দাড়িম্ব গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী রক্তদন্তিকা। অশোক গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শোকরহিতা। মান গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী চামুণ্ডা। ধান গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মী।
নবপত্রিকার পুজো প্রকৃতপক্ষে হচ্ছে শস্য দেবীর পুজো। ডঃ শশীভূষণ দাশগুপ্ত নবপত্রিকার পূজা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেছেন, “ এই শস্য বধূকেই দেবীর প্রতীক গ্রহণ করিয়া প্রথমে পুজো করতে হয় তাহার কারণ শারদীয়া পূজার মূলে বোধহয় রহিয়াছে এই শস্য দেবীর পূজা।' বহু গবেষক নবপত্রিকাকে শস্য দেবী রূপে মেনেছেন। আর শাস্ত্রে দেবী দুর্গাকেই তো শস্যদেবী বলা হয়,তিনি একাধারে অন্নপূর্ণা আবার অন্যরূপে তিনিই জগতের সমস্ত কিছুর সৃষ্টি করেন।
গোটা দুর্গাপুজো ধরে কলা বউ দেবী দুর্গার পাশে থাকেন ও পূজিতা হন। 
একটি ভিডিও প্রতিবেদন 



মন্তব্যসমূহ