আজ করোনা বিধি নিষেধের মধ্যেই ছট পুজো

 
আজ ছট পুজো, গঙ্গাসহ সব নদীর ঘাটে প্রস্তুতি সম্পুর্ণ , এবছরও রবীন্দ্র ও সুভাষ সরোবরে দেওয়া হচ্ছেনা ছট পুজোর অনুমতি
 

বিশেষ সংবাদদাতা , কলকাতা ও উত্তরবঙ্গ , ১০ নভেম্বরঃ ছট বা ছঠ, ষষ্ঠী নাম থেকেই মুলতঃ এসেছে । এই দিন তিথি অনুসারে সূর্য ষষ্ঠী ব্রত হওয়ার কারণে এই পালনীয় রীতি  ছট নামে পরিচিত। বাংলা ক্যান্ডারের কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে হওয়া দীপাবলি পালনের পর এটি চার দিনের ব্রত , এই ব্রত শুরু হয় কার্তিক শুক্লা চতুর্থী থেকে , চলে সপ্তমী অবধি। এই পুজোর সবচেয়ে কঠিন ও তাৎপর্যপূর্ণ রাত্রি হল কার্তিক শুক্লা ষষ্ঠী। শাস্ত্রমতে কার্তিক মাসের শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতে এই ব্রত উদযাপিত হওয়ার কারণে এর নাম ছট রাখা হয়েছে।
একসময়ে বিহার বা ঝাড়খন্ডের মানুষেরা এই লৌকিক আচার ও ব্রত পালন করলেও এখন সারা দেশে এই ছট উৎসব সাড়ম্বরে পালিত হয়। এই লৌকিক উৎসব পূর্ব ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছাড়াও পূর্ব উত্তরপ্রদেশ এবং নেপালের তরাই অঞ্চলে পালিত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হিন্দুদের দ্বারা পালিত হওয়া এই উৎসবটি এখন অবশ্য অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষদের মধ্যেও পালিত হতে দেখা যাচ্ছে , তবে এখন আমাদের অনেক বাঙ্গালী পরিবারের মধ্যেও এই ছট উৎসবে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে। আর মুলতঃ ভারতের মধ্যে থাকা এই উৎসব বর্তমানে ধীরে ধীরে এই পার্বণ প্রবাসী ভারতীয়দের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত হয়েছে।
 কি এই ছট পুজো , আর কোন দেবতাকে পুজো করা হয় এদিন ? 
ছট পুজো সূর্য ও তার পত্নী ঊষা যিনি ছোটী মাঈ নামে পরিচিত, তাঁর প্রতি সমর্পিত হয়। ছট পুজোতে সূর্য ও ছোটী মাঈ-কে পৃথিবীতে জীবনের স্রোত বহাল রাখার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও আশীর্বাদ প্রদানের জন্য কামনা করা হয়। ছটে কোনও মূর্তি পূজা করা হয় না সূর্য এই পুজোর প্রধাণ আরাধ্য দেবতা।
কেমন আচারে হয় এই পুজো ?
 চারদিনের এই ব্রতের প্রথম দিনে যিনি ব্রত পালন করেন, তিনি বাড়িঘর পরিষ্কার করে স্নান সেরে শুদ্ধাচারে নিরামিষ ভোজন করেন। পরদিন থেকে উপবাস শুরু হয়। দিনভর নির্জলা থেকে উপবাস পালনের পর সন্ধ্যায় পুজোর শেষে ক্ষীরের ভোগ গ্রহণ করতে হয়। এই জন্য এই রীতির নাম খরনা। তৃতীয় দিনে নিকটবর্তী নদী বা জলাশয়ের ঘাটে গিয়ে অন্যান্য ব্রতীদের সঙ্গে অস্তগামী সূর্যকে অর্ঘ্য অর্থাৎ দুধ অর্পণ করা হয়। ব্রতের শেষ দিনে গঙ্গা ঘাটে গিয়ে উদীয়মান সূর্যকে পবিত্র চিত্তে অর্ঘ্যপ্রদানের পর উপবাসভঙ্গ করে  মিষ্টান্ন, ক্ষীর, ঠেকুয়া, নাড়ু এবং আখ, কলা, মিষ্টি লেবু প্রভৃতি ফল খেয়ে উপবাস ভঙ্গ করতে হয় ও পরিচিত সকলকে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
এবছর করোনা অতিমারিকে মাথায় রেখে প্রশাসন বেশ কয়েকদিন ধরেই প্রস্তুতি নিয়েছে। এবছর কলকাতার গঙ্গার ঘাটে যেমন থাকছে কড়া বিধি নিষেধ, তেমনি কলকাতার অন্যতম ছট পুজোর ঘাট , দহি ঘাটের পাশের পুন্যার্থীদের ভিড় এড়াতে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম জলাশয় , সেখানেও করা যাবে ছট পুজো। এদিকে এবছরও রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবরে করা যাবে না ছট পুজো। ছট পুন্যার্থীদের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন করোনা স্বাস্থ্য বিধি কড়া ভাবে প্রয়োগ করবে বলে জানা গেছে। আজ এবং আগামীকাল রাত্রের কারফিউতে শিথিলতা দেওয়া হয়েছে রাজ্য জুড়ে। পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী রবীন্দ্র সরোবরে ছট পুজো করা নিষিদ্ধ। কিন্তু আদালতের নির্দেশ কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ২০১৯ সালে রবীন্দ্র সরোবরের ছট পূজা আয়োজন করা হয়েছিল। এবং ভয়ঙ্কর রকম ভীষণ হয়েছিল সেই সময় । তাই সেই বছরের পুনরাবৃত্তি যাতে এই বছরে না ঘটে এই জন্য পুলিশ প্রশাসন এখন থেকে সজাগ। তবে গত বছর ২০২০ সালে রবীন্দ্র সরোবরকে  প্রশাসনের তৎপরতায় ছট পুজোর সময় দূষণের হাত থেকে বাঁচানো গিয়েছিল ।
প্রশাসন থেকে আগেভাগেই জানানো হয়েছে বুধবার দিন দুপুর থেকে বৃহস্পতিবার দিন বিকেল পর্যন্ত রবীন্দ্র সরোবরে প্রবেশ নিষিদ্ধ । এই সময় যতগুলো গেট রয়েছে প্রত্যেকটা গেট শিকল দিয়ে বন্ধ থাকবে। এবং রবীন্দ্র সরোবর চত্বরে পুলিশি পাহারায় থাকবে জোরদার। এর পিছনে একটাই কারন যাতে কোনোভাবেই দূষণের কবলে না করতে পারে রবীন্দ্র সরোবর । পুলিশ প্রশাসন থেকে ব্যানার টাঙানো হয়েছে । ব্যানারে উল্লেখ করা হয়েছে অন্যত্র পুজো করার জন্য।
 এদিকে কলকাতায় ছটের দিন শব্দবাজি দূষণ রোধেও পথে নামছে প্রশাসন। 


এদিকে মালদায় ছোট পুজোর প্রস্তুতি সম্পুর্ণ।মঙ্গলবার সকালে ইংরেজবাজার পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে মহানন্দা নদীর তীরবর্তী ছটঘাট গুলি পরিদর্শন করেন ইংরেজবাজার পুর প্রশাসক সুমালা আগরওয়াল। এদিন তিনি পরিদর্শন করেন ইংরেজবাজার পৌরসভার ১, ২, ৮, ৯ ,১২ নং ওয়ার্ডের মহানন্দা তীরবর্তী ঘাট। মহানন্দা নদীতে জল থাকার কারণে ঘাট গুলির বেহাল দশা। তাই পুন্যার্থীদের যাতে পুজো করতে কোনরকম সমস্যা না হয় তারজন্য বালির বস্তা এবং মাটি কেটে ভক্তদের নদীতে নামার উপযুক্ত করার নির্দেশ দেন পুর প্রশাসক। শুধু মহানন্দা নদী পারের ঘাটগুলিই নয়, যে সব পুকুরে ছট পুজো হয় সেই সব পুকুরগুলিও পরিদর্শন করেন সুমালা আগরওয়াল। ছট পূজা উপলক্ষে পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে ঘাট পরিষ্কার, আলোর ব্যবস্থা সহ সব রকম পরিষেবা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। আয়োজন সমুর্ণ জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়িতেও । 
তথ্য সৌজন্যঃ  বিভিন্ন শাস্ত্র ও সংবাদ পত্র 

মন্তব্যসমূহ