গড়িয়ার মহামায়া তলায় চলছে ফ্রিউইংসের চিত্র প্রদর্শনী - একটি প্রতিবেদন

ক্যানভাস  

দৃষ্টিনন্দন ছবির বাহার ফ্রিউইংসের গ্যালারিতে

সুমন চৌধুরীর সৃষ্টি

- কাজল ভট্টাচার্য, কলকাতা

অজস্র ছবি এঁকেছেন। আজও এঁকে চলেছেন। তাঁর ক্যানভাসের এমন টান যে তার সামনে, দু'দন্ড না দাঁড়ালেই নয়। তাতেও সন্তুষ্টি আসে না শিল্পীমনে। নতুন কিছু চাই। যা দেখে দর্শকমন ভরে উঠবে পরিপূর্ণতার আস্বাদে।
ক্যানভাসের বুকে সেই চমক জুড়ে দিতে নিত্যনতুন পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন সুমন চৌধুরী। কেতাবি ভাষায় যাকে বলছেন, সারফেস এক্সপ্লোর। 
ক্যানভাসের সমতলে যে ঘোড়া ছুটে চলেছে, তার দুরন্ত কেশর যদি ওই সমতল ছেড়ে বেরিয়ে আসতো! ইমপ্যাস্টোর কাজে ঠিক এই এফেক্টটাই আনার চেষ্টা চালাতেন শিল্পীরা। সুমন সেই চিরাচরিত রাস্তায় পা বাড়াননি। তিনি আরও চমক আনতে চাইছেন। ক্যানভাসের বুকে জুড়ে দিচ্ছেন পেরেক, সুতলির মতো টুকিটাকি জিনিস। এমনকি সেসব জিনিসের মধ্যে ঢুকে পড়ছে মাছের আঁশ। সবমিলিয়ে বড়ো দৃষ্টিনন্দন কাজ সুমনের।

মিহির কয়াল এর সৃষ্টি 

সারস্বত সাধনায় হংসের চেয়ে ভালো প্রতীক আর কিই বা হতে পারে? ঠোঁটে ঠোঁট ঠেকিয়ে হংসীকে চুম্বন করে হংস। এ যেন প্রিন্সেপ ঘাটে একগুচ্ছ প্রেমিক প্রেমিকা। আড়াল থেকে ক্যানভাসে তাদের ছবি ধরে ফেলেছেন মিহির কয়াল। 
'ধবধবে হাঁস দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়,' বলেন শিল্পী।
মিহিরের পছন্দ ফিগারেটিভ কাজ। তাঁর শিল্পচেতনার সবটুকু জুড়ে মানুষ। সেই আবেগকেই নানারূপে দর্শকের দরবারে হাজির করেন শিল্পী। ভারী মিষ্টি হাতের কাজ। প্রতীক ব্যবহারের প্রবণতা থাকলেও, কোনও জটিলতার ছোঁয়া নেই তাঁর ক্যানভাসে। স্মৃতির দুনিয়ায় ডুব মেরে ছবি তুলে আনেন মিহির।

প্রতীক মল্লিক এর সৃষ্টি 

প্রতীকের দৃষ্টি ঘুরে বেড়ায় তাল খেজুরের মাথা ছুঁয়ে গ্রামের শ্যাওলা পড়া পুকুরের জলে। সেই জল খেতে নামে গৃহস্থের গরু। আর ঠিক সে মুহূর্তটাকেই কন্টির আঁচড়ে ধরে ফেলেন প্রতীক মল্লিক। আবার পরমুহূর্তেই তিনি টগবগ করে ঘোড়া ছুটিয়ে পাড়ি দেন তাঁর কল্পলোকে। 
'আউটডোর স্টাডি করতে গিয়েই অশ্বপ্রেমে পড়ে যাই,' সরল স্বীকারোক্তি শিল্পীর। পেন্টিং করার সময় প্রতীক মল্লিকের পছন্দ মিক্স মিডিয়া। আর ড্রইংয়ের জন্য কন্টি। আর সবশেষে কাজ করে প্রতীকের কবজির জোর।

রিমঝিম সিনহা দাসগুপ্তের সৃষ্টি 


রিমঝিমের পছন্দ নীলের এক আকাশ গভীরতা। কিন্তু ক্যানভাসের বুকে ভার্মিলনের ছোঁয়া আচমকাই তার মন চুরি করে বসে। তারপর থেকেই লালের নেশায় বুঁদ শিল্পী। আইটি'র চাকরি ছেড়ে মেতেছেন রক্তিম আভায়।
তাঁর কল্পনায় দেবী মহিষাসুরমর্দিনী না, শিবের প্রেমিকা উমা। সাজগোজ করে কিশোরী উমার শবরীর প্রতীক্ষা ভৈরবের জন্য। তার রক্তবর্ণ শাড়ির আঁচলে ধরা থাকে পতিতোদ্ধারিণী গঙ্গে।
খুব যত্ন নিয়ে নীলশহরে ঢুকে পড়ার সিঁড়ি আঁকেন রিমঝিম সিনহা দাসগুপ্ত। শহরে ঢোকার নানা পথ। তবে খুব সহজে সেখানে ঢুকে পড়া যায় না। আবার একবার ঢুকে পড়লে বেরনোর পথ পাওয়া মুশকিল। শহর যেন নারীর মনোজগত। সেই জগতের ওপর যতোই হানাদারি চলুক না কেন, সহজে তার পতন হয় না।

মন্তব্যসমূহ