রবিবাসরীয় সাহিত্যের বেহালার দিন প্রতিদিন - গোপাল মৈত্র'র ছোট গল্প / মধ্যবিত্ত

 ছোট গল্প

মধ্যবিত্ত



 

 গোপাল মৈত্র

হ্যাঁ আজও আমি সেই একাকী মধ্যবিত্ত। আজও আমি ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশের চেপ্টে যাওয়া অংশ দিয়েই ব্রাশ করি, ঘুম থেকে উঠেই একটু র চা একটা মেরি বিস্কুট আর তারপরই যেনো নিজেকে ধনী মনে করার একটা মধ্যবিত্ত অভ্যেস, একটা নেভিকাট সিগারেট সারাদিনের জন্য। তারপর ই শ্যামল এর লন্ড্রি তে একটু বসে পেপারে চোখ বুলিয়ে নিজেকে আপটুডেট রাখার এক চেষ্টা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের ছোট্ট নিউজ রুমে বসে বিভিন্ন জেলার খবরের অপেক্ষা। কোনোদিন কাজ কম থাকলেও বেস্ত থাকার এক অনবদ্য প্রয়াস। কোনো রখম দুপুরের খাওয়ার গোগ্রাসে খেয়ে কতো তাড়াতাড়ি নিউজ আপলোড করবো তার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ। চললো রাত্রি ৮ টা অব্দি। ৮ টা বাজলেই বদ অভ্যেসের ভালো জায়গায় বসে একটু রাজনৈতিক, খেলাধুলো, বিনোদন এর আলোচনায় অংশগ্রহণ করে আবার সমাজে টিকে থাকার, নিজের ব্যাক্তিত্ব প্রমাণের চেষ্টা। ব্যাক্তিগত আলোচনায় জড়াতে না চেয়েও কিছু রসিক বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে বেশি রাত করে বাড়ি ফেরা। ততক্ষণে ঘড়ি দেখতেও যেনো ইতস্তত বোধ হয়। কোনো রখম ঠান্ডা ভাত আলুসেদ্ধ  মেখে খেয়ে, গায়ে ঘামের গন্ধ দূর করতে একটু পাউডার লাগিয়ে ঘুম। স্বপ্নও যেনো ভয় পায় স্বপ্ন দেখাতে, পাছে লোডশেডিং হয়ে গেলে স্বপ্নও যেনো রাগ করে। জড়িয়ে শোয়ার ইচ্ছা গুলো যেনো মনের এক কোনায় পরে ধুলো জমে গেছে। হ্যা আমি মধ্যবিত্ত। কোথাও রাস্তায় দাড়িয়ে এক কাপ চা খেলে একটা সিগারেট ধরাতে হয় নাহলে যে সেই স্ট্যাটাস টাও থাকে না। আজও আমি রাস্তায় লিফলেট দিলে হাত বাড়িয়ে নি, আজও আমি সপ্তাহে একদিন মাংস খেতে লোক দেখিয়ে বাজার যায়, আজও পেট্রোল পাম্পে তেল ভরতে গেলে মুখে না বলে ৫০ টাকা আগেই বাড়িয়ে দি, আজও LIC এজেন্ট দেখলে এড়িয়ে যায়, সেই পুরোনো রেকারিং ভাঙার প্রয়োজন হলেও আবার মন শক্ত করি, আজও জুতো ঠিক করতে গেলে মুচি মুখের দিকে তাকায়, সরকারি বাসে উঠে ভাড়ার জন্য আজও ঝগড়া করি, রাস্তায় হটাৎ স্কুটারের তেল শেষ হয়ে গেলে পামচারের বাহানা দেখাই, হ্যাঁ  আজও আমি মধ্যবিত্ত। বিয়ের কোর্ট প্যান্ট ছোটো হয়ে গেলেও শুধুমাত্র ছবি তোলার জন্য যে পড়তেই হয়, নাহলে ফেসবুকে ছবি ছাড়ার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হয়, পাহাড়ে না গিয়ে দীঘা কম খরচে ঘোড়ার মজা খুঁজে নিতে পারি, মুড়ি খেয়ে আজও সেই তৃপ্তি পাই, সাইকেল চালাতে ভালো না লাগলেও পেট্রোল ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি র সাথে তাল দিতে না পেরে মানুষকে জ্ঞান দি সাইকেলের উপকারিতা নিয়ে। আজও পিকনিক হলেই আগে জিজ্ঞাসা করি কতো টাকা? মেডিক্লেম না থাকলেও স্বাস্থ্যসাথী কার্ড, শ্রমিক কার্ড যত্ন করে রাখি। রেশন নিতে গেলে একটু ঘুরে অপরিচিত রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরি। 
কিন্তু আমি মধ্যবিত্ত বলে দুঃখিত নই। কারণ অভ্যেস গুলো যে অনেক পুরনো। তাই অভ্যেসের বাইরে যাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা হবে জেনে মানিয়ে নেওয়ার প্রবণতাটি ই বেশি। রাতের বোরোলিন, সকালের কলগেট, দুপুরের কোকোনাট, রাতের পন্ডস নিয়ে বেশ ভালই আছি। তবে কি জানো আজ ও শহর টা খুব ফাঁকা মনে হয়, আজও মনের একাকিত্ব মনকে খুঁজে বেড়ায়। সব কিছু পেয়েও যেনো না পাওয়ার আক্ষেপ গুলো মাথা চারা দিতে চায়। কিন্তু শেষে মনে পরেই যায় আমি যে মধ্যবিত্ত।
ক্যানভাসঃ সংগৃহীত 

মন্তব্যসমূহ