হাথরস আপডেট
।। গোপন ক্যামেরার চোখে হাথরস ।।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjtPIoI7EQWofJi_PRzxUQEUfu_lvsSkdWxHcBJ8hfHgi4yF9PQXKDT4sDrYM2Cglh_-BWxF7RWSCq9-ss4aaDSOUGQubMDWniatiuGLoQfu_BvgIWLB1WtfkyIhPEfTem0-q8QYqpVhAC8/w58-h58/56644805_2393383010718940_1315221390940438528_n.jpg)
প্রকাশ্যে এলো আরও এক স্টিং অপারেশনের ছবি।
গোপন ক্যামেরার কারসাজিতে ধরা পড়লো পুলিসের সর্বনাশা ভুল, অসত্য ভাষন, কিছু চেপে যাওয়া ঘটনা। আবার অন্য এক চ্যানেলে মৃতা এবং অভিযুক্তের পরিবারের আরোপ প্রত্যারোপে দেখা গেলো এক অন্য ছবি। সবমিলিয়ে হাথরসকাণ্ডের জল ক্রমেই ঘোলা হয়ে চলেছে। সঙ্গতি, অসঙ্গতি দুই ধরা পড়ছে বিভিন্ন বক্তব্যে।
এরই মধ্যে গ্রামের চল্লিশজনকে জেরা করে সত্যানুসন্ধানের চেষ্টা চালাচ্ছে 'সিট'। যদিও মৃত হাথরস কন্যার পরিবারের তরফে গোড়াতেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো, সিট সিবিআই তদন্তে ভরসা নেই। চাই বিচারবিভাগীয় তদন্ত। ওদিকে আগামী ১২ অক্টোবর, এলাহাবাদ হাইকোর্টে হাজির হতে চলেছেন মৃতার পরিবার।
স্টিং অপারেশনে এক মহিলা কনস্টেবলকে বলতে শোনা গেল, হাথরস কন্যাকে আলিগড় জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেছিল তাঁর পরিবারের লোকজন। সঙ্গে কোনও পুলিস ছিলো না। আবার হসপিটালের এক মহিলা চিকিৎসককে দেখা গেল চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে- মৃতার সঙ্গে অন্যায় হতে দেবো না। বরদাস্ত করবো না কোনও বেইমানি। নিউজ চ্যানেল জানালো, পেশায় তিনি মহিলা রোগ বিশেষজ্ঞ হলেও এক সক্রিয় সমাজকর্মী। তিনিই অসুস্থ হাথরস কন্যাকে চিকিৎসা করেন।
ঘটনার দিন হাথরস কন্যাকে স্থানীয় থানায় নিয়ে যাওয়ার পর, পুলিস তেমন সক্রিয়তা দেখায়নি বলে গোড়া থেকেই অভিযোগ উঠেছিল একাধিক মহলে। নেওয়া হয়নি ধর্ষণের অভিযোগ। কিন্তু এক চ্যানেলের সঙ্গে কথাপ্রসঙ্গে মৃতার এক ভাই নিজেই জানালেন, থানায় তিনি নিজে হাতেই অভিযোগ লিখে জমা দেন। তখন তিনি ধর্ষণের কথা জানতে পারেননি বলেই অভিযোগে তার উল্লেখ করেননি।
হাথরস কন্যা তখন কিছু বলার মতো অবস্থাতেও ছিলেন না। বারেবারে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন বলে তিনি জানান। শুক্রবার নিউজ চ্যানেলের সঙ্গে সাক্ষাতকারে মৃতার ভাই স্বীকার করেন ঘটনার আটদিন পর, ২২ তারিখে ধর্ষণের কথা পরিবার জানতে পারে। তারপরেই ধর্ষণের কথা জানিয়ে চার অভিযুক্তের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়। এই বক্তব্য জানার পরেই দুটি অভিযোগের জবাব মিললো। প্রথমত, পুলিস ধর্ষণের অভিযোগ নেয়নি একথা ভুল। দ্বিতীয়ত, বোঝা গেল মৃতের পরিবার কোন পরিস্থিতিতে অভিযোগের বয়ান বদল করতে বাধ্য হয়েছিল।
তবে ১৪ সেপ্টেম্বরের সেই ঘটনায় পুলিস যে গুরুত্ব দেয়নি তা মৃতার ভাইয়ের কথাতেও পরিষ্কার। খেত থেকে বাইকে গুরুতর জখম বোন আর মাকে বসিয়ে প্রথমেই তিনি পৌঁছে যান থানাতে। সেখান থেকে নিজের উদ্যোগেই বোনকে নিয়ে ছোটেন হাসপাতালে। পুলিসের কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি।
শুক্রবারের স্টিং অপারেশন চললো বুলগড়হি গ্রামপ্রধান রামকুমার সিসোদিয়ার ওপরেও। তিনি সরাসরি স্বীকার করলেন, ঘটনার দিন দুই অভিযুক্ত সন্দীপ ঠাকুর আর লবকুশ দুজনেই ঘটনাস্থল ফসলের খেতে উপস্থিত ছিলো। পুলিসের ভিডিওতে গতকাল প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, খেতের যে জায়গায় গোটা কাণ্ডটি ঘটে বলে অভিযোগ, তার থেকে মেরেকেটে দশ ফুটের মধ্যেই কাজ করছিলেন মৃতার মা। মেয়ের সঙ্গে ওই পাশবিক কাণ্ড ঘটার সময়, তিনি কেন কোনও চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পাননি? ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয় চপ্পল, চারটে কাস্তে। ওই কাস্তে দেখেই অনুমান ঘটনার সময় কমপক্ষে আরও চারজন ছিলো।
"মা আসলে কয়েকদিন ধরে কানে কম শুনছিলো," নিউজ চ্যানেলের সাক্ষাতকারে জানান মৃতের ভাই। এক কান থেকে বেশ কয়েকদিন ধরেই জল গড়াচ্ছিল বলে তাতে তুলো গোঁজা ছিলো। মৃতার ভাইয়ের দাবি, মা কমপক্ষে চল্লিশ/ পঞ্চাশ হাত দূরে কাজে ব্যস্ত ছিল। তাই তিনি কোনও চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পাননি।
স্টিং অপারেশনে গ্রামপ্রধান জানিয়ে দিলেন হাথরস কন্যার জন্য জল এনে দিয়েছিল লবকুশ। অভিযুক্ত লবকুশের মায়ের দাবিও এক। তিনি জানান, মেয়ের ওই অবস্থা দেখে লবকুশকে বলি জল নিয়ে আসতে। ও জল এনে হাথরস কন্যার মা বউদির হাতে তুলে দেয়। তবে ওই ঘটনার সময় সে খেতে ছিলো না বলে এসপিকে লেখা চিঠিতে জানিয়েছিল অভিযুক্ত সন্দীপ। । বাড়িতে বসে প্রতিবেশীদের মুখে সে ঘটনার কথা শোনে। অভিযুক্ত সন্দীপ, রবীর মা দাবি করেছেন, ঘটনার সময় তাঁদের ছেলেরা বাড়িতেই ছিলো।
অভিযুক্তদের কথা মানতে নারাজ মৃতার ভাই। তাঁর দাবি, ঘটনাস্থলে ছুটে যেতেই বোন সন্দীপের নাম বলে। কিন্তু আর কিছু বলার আগেই সে সংজ্ঞা হারায়। ওই ঘটনা কেন্দ্র করে গোটা গ্রাম এককাট্টা হয়েছে বলে তিনি ভয় পাচ্ছেন।
তাহলে কি অভিযুক্তদের তরফে গোটাটাই মনগড়া গল্প শোনানো হচ্ছে? অভিযুক্তদের দাবি, নার্কো টেস্ট করা হোক। তারপর তদন্ত তো আছেই। তাহলেই জানা যাবে প্রকৃত ঘটনা কী?
ওদিকে মৃতার পরিবার কিন্তু এখনও ভরসা করতে পারছেন না সরকারি ভূমিকায়। আজও তাঁরা এক আশঙ্কার মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে হাজির হন ডিআইজি শলভ মাথুর। মৃতার পরিবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার পর, বুলগড়হি গ্রামের পুলিস প্রহরার ব্যবস্থাও দেখেন। ওদিকে তদন্ত শুরু হতেই বোঝা যাচ্ছে, জাতিদাঙ্গার ষড়যন্ত্র অনেক দূর পর্যন্ত শেকড় ছড়িয়েছিল। পিএফআই- এর পর 'ফান্ডিং' নিয়ে সন্দেহের আওতায় চলে এসছে ভীম সেনা। তবে সেনাপ্রধান চন্দ্রশেখরের চ্যালেঞ্জ, অভিযোগ প্রমাণ করে দেখাক সরকার। আসলে মূল ঘটনার থেকে নজর সরিয়ে দিতেই নানারকম ফন্দিফিকির আঁটা হচ্ছে বলে তাঁর দাবি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন