দিন প্রতিদিন বিশেষ

 হাথরস বিশেষ 

।। সাজানো বৌদিকে নিয়ে রহস্য হাথরসে ।।




  কাজল ভট্টাচার্য , কলকাতা,  ১১অক্টোবর: 

হাথরস রহস্যের কেন্দ্রবিন্দুতে এবার এক 'সাজানো বউদি'।

এর আগেই রহস্য দানা বেঁধেছিল পিএফআই, ভীম সেনার ভূমিকা নিয়ে। এবার সেই তালিকায় যোগ হলো আরও এক নাম- রাজকুমারী বনসল।

মৃতার ভাই, অভিযুক্ত সন্দীপের মোবাইল কলের মধ্যে কী কথা চালাচালি হতো? সেই ধাঁধাঁর জট আজও খোলেনি। ওদিকে মাঝরাতে তড়িঘড়ি হাথরস কন্যার মৃতদেহ সৎকার নিয়ে আজও বারবার প্রশ্ন তুলে চলেছে পরিবার। উত্তরপ্রদেশ পুলিস অবশ্য ইতিমধ্যেই সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে আদালতে পেশ করা হলফনামায়। এখনও বিতর্ক রয়ে গেছে হাথরস কন্যার গণধর্ষণের ঘটনায়। 


ওদিকে চল্লিশজন গ্রামবাসীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার শেকড়ে পৌঁছনোর চেষ্টা চালাচ্ছে তদন্তকারী দল 'সিট'। একাধিক নিউজ চ্যানেলের ক্যামেরাও ঘুরে বেড়াচ্ছে গ্রামের এমাথা থেকে ওমাথা। উঠে আসছে ঘটনার নানা অসঙ্গতি, পরস্পরবিরোধী বক্তব্য। এরমধ্যেই দেখতে দেখতে পার হতে চললো একমাস। রহস্য মেটার বদলে, বরং রহস্য বেড়েই চলেছে হাথরসকাণ্ডে। সেই রহস্য ভেদ করতে এবার তদন্তে নেমে পড়লো সিবিআই।


মধ্যপ্রদেশের জবলপুর থেকে হাথরসে ছুটে এসেছিলেন রাজকুমারী বনসল। "মৃতার পরিবারের অসহায়তা শুনে অস্থির হয়ে উঠি। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ছুটে যাই," বলেন মহিলা। কিন্তু কবেই বা তিনি এলেন, গেলেনই বা কবে, তা নিয়ে একমত হওয়া যায়নি। একপক্ষের দাবি, ১৬ সেপ্টেম্বর ওই মহিলা বুলগড়হি গ্রামে মৃতার বাড়িতে ওঠেন। সেখানেই তিনি ২২ তারিখ পর্যন্ত ছিলেন। ওদিকে সংবাদমাধ্যমের কাছে মহিলা বলেন, "৩ অক্টোবর জবলপুল থেকে রওনা দিয়ে পরদিন হাথরসে পৌঁছই। ইচ্ছে ছিলো, একদিন মৃতার পরিবারের সঙ্গে কাটিয়ে ফিরে আসবো। কিন্তু ওদের অনুরোধে তা হয়নি। ৬ তারিখ ফিরে আসি।" 



অসঙ্গতি আছে রাজকুমারী বনসলের সঙ্গে মৃতার পারিবারিক সম্পর্ক নিয়ে দুপক্ষের বক্তব্যেও। গ্রামবাসীরা জানান, মৃতার বউদি বলে তাঁর পরিবারের তরফে পরিচয় দেওয়া হয়েছিল। ওদিকে রাজকুমারী দেবীর দাবি, কে কী পরিচয় দিয়েছিল তিনি তা জানেন না। তবে তিনি আদৌ ওরকম কোনও পরিচয় দেননি। মৃতার পরিবারের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি সবাইকে পরিষ্কার ভাষায় জানিয়েছিলেন, মৃতার পরিবার যাতে সুবিচার পায় সেব্যাপারে মদত করতেই তাঁর হাথরসে যাওয়া। এব্যাপারে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে, মুখ খুলতে চাননি মৃতার পরিবারের কেউ। মৃতার বউদির পাল্টা প্রশ্ন, সব সম্পর্কই কি রক্তের সম্পর্ক হয়? রাজকুমারী দেবী তাঁদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় বলে জানানো হয়। 


তাহলে কে এই রাজকুমারী বনসল? 

তিনি নিজের সম্পর্কে যা জানিয়েছেন তা হলো, তিনি জবলপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক। কলেজ কর্তৃপক্ষকে তাঁর অনুপস্থিতির কথা জানিয়েই তিনি হাথরসে গেছিলেন। কলেজের ডিন অবশ্য জানিয়েছেন, গোটা ব্যাপারটা সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হবে। সরকারি কর্মী হয়ে কোনও আন্দোলনে যোগ দিতে গেলে, কর্তৃপক্ষের আগাম অনুমতি নিতে হয়। প্রয়োজনে ওই মহিলা অধ্যাপককে কারণ দর্শানোর নোটিসও দেওয়া হবে। রাজকুমারীদেবীর সাফ বক্তব্য, নোটিস পেলে তিনি অবশ্যই তার জবাব দেবেন। 


সন্দেহ করা হচ্ছে পুলিস তাঁর গন্ধ পেয়েছে বুঝতে পেরেই, রাজকুমারী বনসল চটজলদি হাথরস থেকে কেটে পড়েন। একাধিক সংবাদ সূত্রের খবর, ওই মহিলা কোনভাবে মৃতের পরিবারকে প্ররোচিত করছিলেন কিনা, খতিয়ে দেখবে তদন্তকারী দল। কোনও সংগঠনের সঙ্গে ওই মহিলার যোগাযোগের ব্যাপারেও অনুসন্ধান করা হবে। পাশাপাশি তদন্ত চলবে তাঁর হাথরস আগমনের উদ্দেশ্য নিয়েও। 

সব ঘটনার মুখোমুখী হতে তৈরি আছি, সাফ জানিয়ে দিয়েছেন রাজকুমারী বনসল। সেই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, মোবাইল ট্যাপ করা হচ্ছে। পরিচিতদের কথা শুনেই ডক্টর বনসল সন্দেহ করছেন, তাঁর ফোনে কারসাজি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনার কথা তিনি সাইবার সেলকে জানিয়েছেন।



হাথরস কন্যার মৃত্যু নিয়ে গ্রামের কোথাও কোনও চক্রান্ত চলছে কিনা সে ব্যাপারে সতর্ক আছে পুলিস। জায়গায় জায়গায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিস। সিসিটিভি ক্যামেরার সাহায্যে চলছে চব্বিশ ঘণ্টার কড়া নজরদারি। নজর রাখা হচ্ছে গ্রামে বহিরাগতদের আসা যাওয়া নিয়েও। পাশাপাশি খেয়াল রাখা হচ্ছে যাতে কোনভাবেই মৃতার পরিবারের শান্তি বিঘ্নিত না হয়।


ওদিকে পুলিসের ঢিলেমিতেই আজ লখনউ যাওয়া হলো না বলে মৃতার পরিবারের দাবি। এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চে সোমবার হাথরসকাণ্ডের শুনানি শুরু হওয়ার কথা। রবিবার মৃতার পরিবারকে নিয়ে কড়া নিরাপত্তায় লখনউ রওনা দেওয়ার কথা ছিলো পুলিসের। কিন্তু পুলিস বিকেল নাগাদ রওনা দিতে চাইলে, মৃতার পরিবার রাজি হয়নি। এখনও তাঁরা রাতের অন্ধকারে পুলিসের সঙ্গে যেতে ভরসা পাচ্ছেন না। আগামিকাল সকালে পুলিস, মৃতার পরিবারকে নিয়ে লখনউয়ের দিকে রওনা দেবে।


অপরাধীকে চিহ্নিত করতে জোরদার তদন্ত চালাচ্ছে সিট। গ্রামে তদন্তকারী দলের যাতায়াত বেড়ে গেছে। বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলছেন তাঁরা। জানতে চাইছেন মৃতার পরিবারের সঙ্গে অভিযুক্তদের পরিবারের সম্পর্ক কেমন ছিলো। এরমধ্যেই রহস্যের পর্দা তুলতে তদন্তে নেমে পড়লো সিবিআই। ইতিমধ্যেই হত্যা, হত্যার চেষ্টা এবং গণধর্ষণের ধারায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে মূল অভিযুক্ত হিসেবে একমাত্র সন্দীপের নাম আছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর। পুলিস, সিটের তদন্তের কাগজপত্র হাতে এলে অন্যান্য অভিযুক্তদের নামও যোগ হবে বলে আইন বিশেষজ্ঞদের মত। ( ছবি সৌজন্যঃ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম)

মন্তব্যসমূহ