হাথরস এই মুহূর্তের বিশেষ
।। মৃত্যুর পরেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন হাথরস কন্যা ।।
কাজল ভট্টাচার্য , কলকাতা
কার শরীর দাহ করা হয়েছিল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে?
প্রশ্ন তুলেছে মৃত হাথরস কন্যার পরিবার। কিসের এত গোপনীয়তা? শোকে ভেঙে পড়া পরিবারকে ঘরবন্দি করে গভীর রাতে সৎকার করে দেওয়া হয়েছিলো মৃতদেহ। সেই থেকেই কড়া পুলিস পাহারায় মানসিকভাবে বিধ্বস্ত গোটা পরিবার। বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ঘরে খাবার দাবার বাড়ন্ত। তবু চৌকাঠ পেরনো মানা। মৃতার বাড়ির দখল নিয়েছিলো পুলিস। গোটা গ্রাম জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল শুধুই খাকি উর্দিধারীরা। কাল পর্যন্ত টিভির পর্দায় সেই ছবিই দেখেছিলেন মৃতার পরিবারের সবাই।
শনিবার সকালে আচমকাই ছবিটা একেবারে বদলে গেলো।
পুলিস অবরোধ থেকে মুক্তি পেয়ে, বাঁধভাঙা আবেগ, উত্তেজনা, কান্নায় ভেঙে পড়লো হাথরস কন্যার গোটা পরিবার। খোলা বাতাস শোকের আবহে। গৃহবন্দির কড়াকড়ি উঠে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘরের দাওয়ায় হাজির মিডিয়াকর্মীরা। সবকিছু দেখেশুনেও নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না পরিবারের কেউ। তারপরেই মনের কোণে উঁকি মারলো অন্য এক আশঙ্কা। চোখে সন্দেহের ছায়া। আজকের এই পরিবর্তনের পেছনেও কোনও ছক নেই তো? গত কয়েকদিনের অভিজ্ঞতায় তখন এমনটাই ভাবতে শুরু করেছে গোটা পরিবার।
এমনকি পুলিসের কাছে রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব অবিনাশ অবস্থির আসার কথা শুনেও অস্বস্তিতে পড়ে যায় গোটা পরিবার। দুপুর দুটোর খানিক পরেই ডিজিপি হিতেশ চন্দ্র অবস্থিকে নিয়ে মৃতার বাড়িতে পৌঁছে যান অতিরিক্ত মুখ্য সচিব। প্রায় ঘণ্টাখানেক পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলেন অবিনাশ অবস্থি। পরিবারের ওপর চেপে বসা আতঙ্ক নিশ্চয়ই তাঁর চোখ এড়ায়নি। গত দুদিনের অভিজ্ঞতা রক্ষককেই ভক্ষক বলে ভাবতে শিখিয়েছে মৃতার পরিবারকে।
"মুখ বন্ধ রাখতে গোটা পরিবারকে বারবার ধমকেছেন, শাসিয়েছেন হাথরস জেলা শাসক," বলেন মৃতার ভাই। তাঁর ভয়ে তটস্থ থেকেছেন বাড়ির সবাই। অভিযোগ উঠেছে মারধোর করারও। এদিকে শনিবার সকালেই এক সাংবাদিক বৈঠক করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি জানিয়েছেন, সিটের সুপারিশ মেনে দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। একই কথা শোনা গেছে অবিনাশ অবস্থির সাংবাদিক সম্মেলনেও। কিন্তু যতক্ষণ না জেলা শাসকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ প্রশাসনের ওপর ভরসা রাখতে পারছে না পরিবার। বারবার ক্ষোভের আঙুল উঠেছে জেলা শাসক প্রবীণ কুমারের দিকে। এই নির্মম মৃত্যুর ঘটনাকেও তিনি বিচার করতে চেয়েছিলেন টাকার অঙ্ক দিয়ে। মৃতার ভাই বলেন, "আমরা কোনও টাকা নিতে চাইনি। তখন ডিএম বাবাকে জিজ্ঞেস করেন, মেয়ে করোনায় মারা গেলে কি ক্ষতিপূরণ নিতেন না?"
দিদি মারা গেলো কীভাবে? প্রশ্ন তুলেছেন মৃতার ভাই। তিনি বলেন, "পুলিস বলছে দিদির সঙ্গে কোনও গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। ওর শরীরের কোনও হাড়ও ভাঙেনি। কেউ গলা কাটেনি। জিভও কাটেনি। তাহলে দিদি মারা গেলো কীভাবে?"
বাস্তবে এক মিথ্যাকে ঢাকতে আর এক গল্প ফাঁদতে গিয়ে, এক মিথ্যার পাহাড় বানিয়ে ফেলেছিল উত্তরপ্রদেশ পুলিস। 'সিট' তদন্তের নামে গ্রামের বাইরে সাংবাদিকদের আটকে রাখার ঘটনাও যে গোটাটা মনগড়া, শনিবার মৃতার পরিবারের কথাতেই তা পরিষ্কার। মৃতার দেহ সৎকারের আগেও এমনই মনগড়া গল্প শুনিয়েছিলেন জেলা শাসক প্রবীণ কুমার। মৃতার মা, বৌদি, কাকিমা বলেন, "আমরা শেষবারের মতো মেয়ের মুখ দেখতে চেয়েছিলাম। জেলা শাসক রাজি হননি। আমাদের ভয় দেখাতে তিনি পোস্ট মর্টেমের বিভৎসতার কাহিনি শোনান। বলেন, মেয়ের ওই কাটাছেঁড়া করা দেহ দেখে সহ্য করতে পারবেন না।"
বাস্তবে হাথরস কন্যার মৃত্যুর পর মুহূর্তেই, কোনও এক অজানা কারণেই শুরু হয়ে গেছিল নাটকের পর নাটক। "সন্ধ্যা সওয়া ছ'টা নাগাদ হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, দিদি মারা গেছে। ময়না তদন্তের পরেও দিদির মৃতদেহ আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি," বলেন মৃতার ভাই।
সফদরজং হসপিটালের মর্গ থেকেই মৃতদেহ চলে যায় পুলিসের হাতে। রাত দেড়টা নাগাদ এমবুলেন্সে মৃতার শরীর পৌঁছায় বুলগড়হিতে। কোনরকম প্রথাতো দূরের কথা, মৃতার মুখও কাউকে দেখতে দেয়নি পুলিস। পরিবারের সবাইকে ঘরে আটকে রেখেই মৃতার দেহ সৎকার করে দেয় পুলিস। এখানেই প্রশ্ন হাথরস কন্যার পরিবারের- গভীর রাতে কার মৃতদেহ দাহ করলো পুলিস।
জেলা শাসকের সম্মতি ছাড়া মৃতদেহের সৎকার সম্ভব ছিলো না বলে মত ওয়াকিবহাল মহালের। খোদ মুখ্যমন্ত্রীও ওই ঘটনায় মর্মাহত বলে পরিবারকে জানিয়েছেন। জেলা শাসকের অতি সক্রিয়তাকে যোগী আদিত্যনাথ কোন চোখে দেখছেন? রাজ্য রাজনীতিতে এনিয়েই চলছে জল্পনা- কল্পনা। আজ জেলা শাসককে সঙ্গে না নিয়েই মৃতার পরিবারের সঙ্গে অবিনাশ অবস্থির দেখা করতে যাওয়ার ঘটনাকে ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করা হচ্ছে। তাহলে কি এবার রাজ্য প্রশাসনের ক্ষোভের মুখে পড়তে চলেছেন হাথরসের সেই প্রভাবশালী 'ওপরওয়ালা'?
কার শরীর দাহ করা হয়েছিল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে?
প্রশ্ন তুলেছে মৃত হাথরস কন্যার পরিবার। কিসের এত গোপনীয়তা? শোকে ভেঙে পড়া পরিবারকে ঘরবন্দি করে গভীর রাতে সৎকার করে দেওয়া হয়েছিলো মৃতদেহ। সেই থেকেই কড়া পুলিস পাহারায় মানসিকভাবে বিধ্বস্ত গোটা পরিবার। বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ঘরে খাবার দাবার বাড়ন্ত। তবু চৌকাঠ পেরনো মানা। মৃতার বাড়ির দখল নিয়েছিলো পুলিস। গোটা গ্রাম জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল শুধুই খাকি উর্দিধারীরা। কাল পর্যন্ত টিভির পর্দায় সেই ছবিই দেখেছিলেন মৃতার পরিবারের সবাই।
শনিবার সকালে আচমকাই ছবিটা একেবারে বদলে গেলো।
পুলিস অবরোধ থেকে মুক্তি পেয়ে, বাঁধভাঙা আবেগ, উত্তেজনা, কান্নায় ভেঙে পড়লো হাথরস কন্যার গোটা পরিবার। খোলা বাতাস শোকের আবহে। গৃহবন্দির কড়াকড়ি উঠে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘরের দাওয়ায় হাজির মিডিয়াকর্মীরা। সবকিছু দেখেশুনেও নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না পরিবারের কেউ। তারপরেই মনের কোণে উঁকি মারলো অন্য এক আশঙ্কা। চোখে সন্দেহের ছায়া। আজকের এই পরিবর্তনের পেছনেও কোনও ছক নেই তো? গত কয়েকদিনের অভিজ্ঞতায় তখন এমনটাই ভাবতে শুরু করেছে গোটা পরিবার।
এমনকি পুলিসের কাছে রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব অবিনাশ অবস্থির আসার কথা শুনেও অস্বস্তিতে পড়ে যায় গোটা পরিবার। দুপুর দুটোর খানিক পরেই ডিজিপি হিতেশ চন্দ্র অবস্থিকে নিয়ে মৃতার বাড়িতে পৌঁছে যান অতিরিক্ত মুখ্য সচিব। প্রায় ঘণ্টাখানেক পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলেন অবিনাশ অবস্থি। পরিবারের ওপর চেপে বসা আতঙ্ক নিশ্চয়ই তাঁর চোখ এড়ায়নি। গত দুদিনের অভিজ্ঞতা রক্ষককেই ভক্ষক বলে ভাবতে শিখিয়েছে মৃতার পরিবারকে।
"মুখ বন্ধ রাখতে গোটা পরিবারকে বারবার ধমকেছেন, শাসিয়েছেন হাথরস জেলা শাসক," বলেন মৃতার ভাই। তাঁর ভয়ে তটস্থ থেকেছেন বাড়ির সবাই। অভিযোগ উঠেছে মারধোর করারও। এদিকে শনিবার সকালেই এক সাংবাদিক বৈঠক করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি জানিয়েছেন, সিটের সুপারিশ মেনে দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। একই কথা শোনা গেছে অবিনাশ অবস্থির সাংবাদিক সম্মেলনেও। কিন্তু যতক্ষণ না জেলা শাসকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ প্রশাসনের ওপর ভরসা রাখতে পারছে না পরিবার। বারবার ক্ষোভের আঙুল উঠেছে জেলা শাসক প্রবীণ কুমারের দিকে। এই নির্মম মৃত্যুর ঘটনাকেও তিনি বিচার করতে চেয়েছিলেন টাকার অঙ্ক দিয়ে। মৃতার ভাই বলেন, "আমরা কোনও টাকা নিতে চাইনি। তখন ডিএম বাবাকে জিজ্ঞেস করেন, মেয়ে করোনায় মারা গেলে কি ক্ষতিপূরণ নিতেন না?"
দিদি মারা গেলো কীভাবে? প্রশ্ন তুলেছেন মৃতার ভাই। তিনি বলেন, "পুলিস বলছে দিদির সঙ্গে কোনও গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। ওর শরীরের কোনও হাড়ও ভাঙেনি। কেউ গলা কাটেনি। জিভও কাটেনি। তাহলে দিদি মারা গেলো কীভাবে?"
বাস্তবে এক মিথ্যাকে ঢাকতে আর এক গল্প ফাঁদতে গিয়ে, এক মিথ্যার পাহাড় বানিয়ে ফেলেছিল উত্তরপ্রদেশ পুলিস। 'সিট' তদন্তের নামে গ্রামের বাইরে সাংবাদিকদের আটকে রাখার ঘটনাও যে গোটাটা মনগড়া, শনিবার মৃতার পরিবারের কথাতেই তা পরিষ্কার। মৃতার দেহ সৎকারের আগেও এমনই মনগড়া গল্প শুনিয়েছিলেন জেলা শাসক প্রবীণ কুমার। মৃতার মা, বৌদি, কাকিমা বলেন, "আমরা শেষবারের মতো মেয়ের মুখ দেখতে চেয়েছিলাম। জেলা শাসক রাজি হননি। আমাদের ভয় দেখাতে তিনি পোস্ট মর্টেমের বিভৎসতার কাহিনি শোনান। বলেন, মেয়ের ওই কাটাছেঁড়া করা দেহ দেখে সহ্য করতে পারবেন না।"
বাস্তবে হাথরস কন্যার মৃত্যুর পর মুহূর্তেই, কোনও এক অজানা কারণেই শুরু হয়ে গেছিল নাটকের পর নাটক। "সন্ধ্যা সওয়া ছ'টা নাগাদ হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, দিদি মারা গেছে। ময়না তদন্তের পরেও দিদির মৃতদেহ আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি," বলেন মৃতার ভাই।
সফদরজং হসপিটালের মর্গ থেকেই মৃতদেহ চলে যায় পুলিসের হাতে। রাত দেড়টা নাগাদ এমবুলেন্সে মৃতার শরীর পৌঁছায় বুলগড়হিতে। কোনরকম প্রথাতো দূরের কথা, মৃতার মুখও কাউকে দেখতে দেয়নি পুলিস। পরিবারের সবাইকে ঘরে আটকে রেখেই মৃতার দেহ সৎকার করে দেয় পুলিস। এখানেই প্রশ্ন হাথরস কন্যার পরিবারের- গভীর রাতে কার মৃতদেহ দাহ করলো পুলিস।
জেলা শাসকের সম্মতি ছাড়া মৃতদেহের সৎকার সম্ভব ছিলো না বলে মত ওয়াকিবহাল মহালের। খোদ মুখ্যমন্ত্রীও ওই ঘটনায় মর্মাহত বলে পরিবারকে জানিয়েছেন। জেলা শাসকের অতি সক্রিয়তাকে যোগী আদিত্যনাথ কোন চোখে দেখছেন? রাজ্য রাজনীতিতে এনিয়েই চলছে জল্পনা- কল্পনা। আজ জেলা শাসককে সঙ্গে না নিয়েই মৃতার পরিবারের সঙ্গে অবিনাশ অবস্থির দেখা করতে যাওয়ার ঘটনাকে ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করা হচ্ছে। তাহলে কি এবার রাজ্য প্রশাসনের ক্ষোভের মুখে পড়তে চলেছেন হাথরসের সেই প্রভাবশালী 'ওপরওয়ালা'?
ওদিকে শনিবার সন্ধ্যা সাতটা পঁচিশ নাগাদ মৃতার বাড়িতে পৌঁছে যান রাহুল গাঁধি, প্রিয়াঙ্কা ভাদরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বাংলার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। পঁয়ত্রিশজন সাংসদ, হাজার খানেক সমর্থককে নিয়ে কংগ্রেসের বিশাল মিছিল হাইওয়েতেই আটকে দেয় পুলিস। হাথরসে একশো চুয়াল্লিশ ধারা জারী থাকায়, মোট পাঁচজনকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। প্রায় পঞ্চাশ মিনিট মৃতার পরিবারের সঙ্গে কথা সেরে রাহুল বলেন, "উত্তরপ্রদেশ সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। পরিবারের পাশে আছি।"
শুক্রবার পর্যন্ত পুলিসের অতি সক্রিয়তার পর শনিবার থেকে শুরু হলো রাজনৈতিক সক্রিয়তা। ঘটনার যাবতীয় ধারাবাহিকতা ধরা থাকলো মিডিয়ার ক্যামেরায়। সবার অলক্ষ্যে থেকে গোটা ঘটনা দেখে হয়তো অবাক হচ্ছেন মৃতা হাথরস কন্যা। শেষ নিঃশ্বাস নেওয়ার আগের মুহূর্তেও, তিনি নিজেই জানতে পারেননি তাঁর গুরুত্বের কথা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন