দিন প্রতিদিন বিশেষ

 হাথরস বিশেষঃ


। আদালতে নথিভুক্ত হলো মৃত হাথরস কন্যার পরিবারের ক্ষোভের কথা ।



  কাজল ভট্টাচার্য , কলকাতা, ১২ অক্টোবর


 রাতের অন্ধকারে মৃতা হাথরস কন্যার দেহ সৎকার করা নিয়ে প্রশ্ন তুললো আদালত। প্রশ্ন উঠলো গণধর্ষণের প্রমাণ ও পুলিসের কাছে সেই মর্মে মৃতার পরিবারের অভিযোগ দায়ের করা নিয়েও। নথিভুক্ত করা হলো মৃতার পরিবারের পাঁচ সদস্যের যাবতীয় অভিযোগ। পুলিস প্রশাসন নিয়ে তাঁদের ক্ষোভের কথা। পরিবারের বিশ্বাস, এবার সুবিচার পাওয়া যাবে।


অভিযোগ, গত ১৪ সেপ্টেম্বর মায়ের সঙ্গে খেতে কাজ করতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হন, উন্নিশ বছরের এক দলিতকন্যা। তাঁকে হত্যার চেষ্টাও করা হয়। স্থানীয় চাঁদপা থানায় পরিবারের তরফে প্রথমে যে অভিযোগটি দায়ের করা হয়, তাতে গণধর্ষণের উল্লেখ ছিলো না। পরে পরিবারের তরফে সেই অভিযোগে গণধর্ষণে গ্রামের চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়। এরপর দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে ২৯ তারিখে মৃত্যু হয় হাথরস কন্যার। পরিবারের অভিযোগ, তাঁদের অসম্মতিতেই কয়েকঘণ্টার মধ্যে পুলিস তড়িঘড়ি করে দেহ সৎকার করে ফেলে। ওই ঘটনা নিয়ে মৃতার পরিবার প্রতিবাদ করায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। এরপরেই শুরু হয়ে যায় রাজনৈতিক তৎপরতা।



ঘটনার তদন্ত শুরু করে 'সিট'। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এরপরেই সিবিআই তদন্তের ঘোষনা করেন। তবে পরিবারের দাবি ছিলো বিচারবিভাগীয় তদন্তের। ওদিকে হাথরস কন্যার গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই ওই মামলা রুজু করে। আজ সেই মামলার প্রথম শুনানি হলো এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চে। 


সোমবার সকালে কড়া নিরাপত্তায় মৃতা হাথরস কন্যার পরিবারকে নিয়ে লখনউ পৌঁছায় উত্তরপ্রদেশ পুলিস। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হাথরস জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও ছিলেন পুলিস সুপার।


রাতারাতি মৃতার দেহ সৎকার নিয়ে আদালতে তাঁদের ক্ষোভ উগড়ে দেন মৃতার পরিবারের সদস্যরা। ওদিকে প্রশাসনের বক্তব্য ছিলো, দেহ সৎকার নিয়ে ব্যাপক অশান্তি হওয়ার আশঙ্কা ছিলো। ওই আশঙ্কা এড়াতেই সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করার মতো পরিস্থিতি ছিলো না। প্রশাসনের তরফে অ্যাডিশনাল অ্যাডভোকেট জেনারেল বিনোদ কুমার শাহির ওই যুক্তি উড়িয়ে মৃতার পরিবারের আইনজীবী সীমা কুশওয়াহা প্রশ্ন তোলেন, প্রায় দু, তিনশো পুলিস মোতায়েন করা হয়েছিল গ্রামে। আর মৃতার পরিবারের তরফে হাজির ছিলেন মাত্র চল্লিশ থেকে পঞ্চাশজন। তারপরেও কীভাবে প্রশাসন অশান্তির যুক্তি দেখিয়ে পরিবারের অমতে রাতের অন্ধকারে দেহ সৎকার করার সিদ্ধান্ত নেন?

মৃতার পরিবারের আইনজীবীর দাবি, আদালত দেহ সৎকারের ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ জাহির করে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন করা হয়, কোনও সম্পন্ন পরিবারে ওরকম ঘটনা ঘটলেও কি প্রশাসন ওই একই পদক্ষেপ করতো?



এই ঘটনার পাশাপাশি মৃতার পরিবারের তরফে আদালতের কাছে আরও তিনদফা আর্জি জানানো হয়। প্রথম আর্জিটি ছিলো তদন্তের গোপনীয়তা রক্ষার। দ্বিতীয়, মামলা উত্তরপ্রদেশের বাইরে দিল্লি অথবা মুম্বইয়ে সরিয়ে নেওয়ার। তৃতীয় আর্জি ছিলো মৃতা হাথরস কন্যার পরিবারের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার। আইনজীবী সীমা কুশওয়াহা জানান, আদালত তিনটি আর্জিই গ্রহণ করেছে।


ধর্ষণের সত্যতা প্রমাণ নিয়েও সরকার পক্ষের বক্তব্যে আদালত সন্তুষ্ট হতে পারেনি বলে সীমা কুশওয়াহার মন্তব্য। মৃতার শরীরে শুক্রানু না পাওয়া গেলেই যে তিনি ধর্ষিতা হননি, এমন সিদ্ধান্তে আসা যায় না। ধর্ষণের সংশোধিত সংজ্ঞার কথাও উল্লেখ করা হয়। আইনজীবীর দাবি, হাথরস কন্যার মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতেও গণধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছিল।


মৃতার পরিবারের পাশাপাশি হাথরসকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রশাসনের পদস্থ কর্তাদেরও তলব করেছিল আদালত। আদালতে রাজ্য স্বরাষ্ট্র বিভাগের অ্যাডিশনাল চিফ সেক্রেটরি অবনিশ কুমার অবস্থি, ডিজিপি এইচসি অবস্থি ছাড়াও জেলা প্রশাসনের তরফে হাজির ছিলেন হাথরস ডিএম প্রবীণ কুমার, তৎকালীন এসপি বিক্রান্ত বীর।


সরকার পক্ষের অ্যাডিশনাল অ্যাডভোকেট জেনারেল বিনোদ কুমার শাহি বেশি কথা বলতে রাজি হননি। তিনি জানান, আদালত উভয় পক্ষের অভিযোগ রেকর্ড করেছে। এরপরের শুনানি হবে আগামী ২ নভেম্বর।

ওদিকে রবিবারেই হাথরসে পা রেখেছেন সিবিআই কর্তারা। তাঁদের সঙ্গে ফরেন্সিক দলের বিশেষজ্ঞরাও আছেন বলে খবর।

মন্তব্যসমূহ