দিন প্রতিদিন বিশেষ

 হাথরস বিশেষঃ সিবিআই তদন্তে


   ।। হাথরসকাণ্ডের তদন্তে নামলো সিবিআই ।।




  কাজল ভট্টাচার্য , কলকাতা, ১৩ অক্টোবর

১৪ সেপ্টেম্বর রাতে কার মৃতদেহ সৎকার করেছিল হাথরস পুলিস? 
বারেবারে প্রশ্ন তুলেছিল মৃত হাথরস কন্যার পরিবার। সন্দেহের কারণ, সৎকারের আগে মৃতার মুখও দেখতে দেয়নি পুলিস। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে পরিবারের অসম্মতিতেই দেহ সৎকার করা হয়। সে সময় ঘটনাস্থলে পরিবারের কেউ ছিলো না।
সেই দাহস্থল থেকেই নমুনা সংগ্রহ করলেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। অস্থি সমেত মৃতার দেহাবশেষের কার্বন টেস্ট করেই হয়তো নিশ্চিত করা হবে মৃতার পরিচয়। তাহলেই উত্তর মিলবে মৃতার পরিবারের তরফে তোলা প্রশ্নেরও।

মঙ্গলবার এগারোটার কিছু পরেই প্রতীক্ষার দিন গোনা শেষ। বুলগড়হি গ্রামে ঢুকে পড়ে সিবিআইয়ের চারটি গাড়ি। সীমা পাহুজার নেতৃত্বে কাজ শুরু করে পনেরো সদস্যের তদন্তকারী দল। তখন টানটান উত্তেজনা গোটা গ্রাম জুড়ে। এর আগে শনিবারেই গোটা গ্রাম জেনে গেছিলো, হাথরসে চলে এসেছে তদন্তকারী দল। ঘটনাস্থল মৃত হাথরস কন্যার গ্রাম বুলগড়হিতে পা রাখার আগে, স্থানীয় চঁদপা থানাতেও তাঁরা কথাবার্তা বলেন। খোঁজখবর নেন ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে ঠিক কী হয়েছিল। মৃতার পরিবারের অভিযোগও তাঁরা খুঁটিয়ে দেখেন বলে সূত্রের খবর। 




মৃতার পরিবারের অভিযোগ, গণধর্ষণের পর তার ওপর পাশবিক অত্যাচার চালায় চার অভিযুক্ত। যার ফলে ২৯ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় হাথরস কন্যার। পরিবারের এই অভিযোগ সরাসরি উড়িয়ে দেয় অভিযুক্তদের পরিবার। তাঁদের বক্তব্য, হাথরস কন্যার মৃত্যুর জন্য তাঁর মা, ভাই দায়ী। বিতর্ক দানা বাঁধে গণধর্ষণের ঘটনা নিয়েও। পুরো ঘটনার প্রেক্ষিত মাথায় রেখে তদন্তে নামার আগে এফআইআর দায়ের করে সিবিআই। গণধর্ষণ, হত্যা, হত্যার চেষ্টা এবং দলিত কন্যার ওপর অত্যাচারের অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগেই পরিষ্কার সিবিআই কর্তারা দু'পক্ষের অভিযোগই খতিয়ে দেখবেন।


এদিন সকাল থেকেই সাজসাজ রব পড়ে যায় গোটা গ্রাম জুড়ে। পুলিসের দখলে চলে যায় গোটা এলাকা।ঘিরে ফেলা হয় ঘটনাস্থল। প্রস্তুতিপর্ব শুরু হয় তদন্তের। গ্রামে ঢুকেই সিবিআই দুদলে ভাগ হয়ে একদল চলে যান স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে। অন্যদল পা বাড়ান গ্রাম লাগোয়া বাজরা খেতের দিকে। ১৪ সেপ্টেম্বর যেখানে হাথরস কন্যার গণধর্ষিতা হওয়ার অভিযোগ। ওই জায়গাতেই অভিযুক্তরা তাঁকে হত্যার চেষ্টাও করে। 

ওদিকে মঙ্গলবার সকালে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন মৃতার মা। তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে ছুটে আসে চিকিৎসকের দল। অসুস্থাকে হাসপাতালে জরুরি পরীক্ষা- নিরীক্ষার জন্য নিয়ে যেতে বলায়, বেঁকে বসে পরিবার। খোদ সিএমও তাঁদের বুঝিয়ে- সুঝিয়ে মৃতা হাথরস কন্যার মাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে রাজি করান। 

ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিজেদের মধ্যে প্রাথমিক কথাবার্তা সেরেই কাজে হাত লাগান সিবিআই কর্তারা। প্রথমেই ঘটনাস্থল আর তার চারপাশের এলাকার ভিডিওগ্রাফি করা হয়। গ্রামের পাকা রাস্তা থেকে খেতের যে জায়গাটিতে ধর্ষণ ও হাথরস কন্যার ওপর অত্যাচার চালানোর অভিযোগ, সে জায়গার দূরত্বের মাপজোক করেন তদন্তকারি দল। ঘটনাস্থলে আসতে বলা হয় মৃতার দাদাকে। সেখানে তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলেন সিবিআই কর্তারা। কিছুক্ষণ পরে হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে ঘটনাস্থলে যান মৃতার মা। তদন্তকারী দল তাঁর কাছ থেকেও ঘটনার বিবরণ শোনেন। এরপরেই গোটা দল ছোটে দাহ সংস্কারের জায়গায়। সেখানেও তাঁরা কুড়ি পঁচিশ মিনিট থাকেন। ঘটনাস্থল এবং মৃতদেহ সৎকারের জায়গা থেকে প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা।

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে সিবিআই কর্তারা মৃতার বাড়িতে যান। সেখানে পরিবারের সদস্যদের কাছে তাঁদের অভিযোগের কথা শোনেন। প্রায় আধঘণ্টা সেখানে কাটিয়ে বেরিয়ে আসেন তদন্তকারী দলের সদস্যরা। গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার সময় তাঁরা মৃতার দাদাকে সঙ্গে নিয়ে যান। মৃতার দাদাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গ্রামে উপস্থিত সাংবাদিকরা জানতে চাইলে, কোনও জবাব মেলেনি। পরিবারের সদস্যরা জানান, এব্যাপারে তাঁদেরও পরিষ্কার করে কিছু জানানো হয়নি। তবে আশ্বস্ত করা হয়েছে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।



তবে এই তদন্ত মৃতার পরিবারকে ঠিক কতটা স্বস্তি দিতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ মুখ্যমন্ত্রী সিবিআই তদন্ত ঘোষনা করার পরেও মৃতার পরিবার রীতিমতো অসন্তোষ প্রকাশ করে। এব্যাপারে তাঁদের যুক্তি, গোটা ঘটনায় পুলিস আর স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা দেখে, আর কোনও সরকারি পদক্ষেপে ভরসা করা যাচ্ছে না। তাই সিবিআইয়ের বদলে দাবি জানানো হয়েছিল বিচারবিভাগীয় তদন্তের। সরকার এবং পুলিস প্রশাসনের ওপর মৃতার পরিবারের আস্থা হারানোর ঘটনা স্পষ্ট হয়ে ওঠে সোমবার আদালতের শুনানিতেও। আবেদন জানানো হয়, মামলা উত্তরপ্রদেশের বাইরে দিল্লি বা মুম্বইয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুমতির জন্য। ওদিকে সিবিআই তদন্তকে গোড়া থেকেই স্বাগত জানায় চার অভিযুক্তের পরিবার। 

ঘটনার প্রায় একমাস পর সরেজমিন তদন্তে নামলো সিবিআই। এরমধ্যে ঘটনাস্থলে প্রচুর মানুষ যাতায়াত করেছে। তাতে অপরাধের সাক্ষ্যপ্রমাণ ঠিক কতটা অবিকৃত অবস্থায় আছে তা বলা মুশকিল। মঙ্গলবার তদন্তে নেমেই, প্রায় চার ঘণ্টা ধরে ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ, নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এখন দেখার সিবিআই তদন্ত কোন পথে এগোয়।




মন্তব্যসমূহ