দিন প্রতিদিন বিশেষ

 

হাথরস বিশেষঃআপডেট 

।। আমরা নির্দোষ, দাবি হাথরসকাণ্ডের চার অভিযুক্তের ।।







  কাজল ভট্টাচার্য , কলকাতা ,৮ অক্টোবর  

এবার চক্রান্তের অভিযোগ আনলো মৃতার পরিবার।

একটি মৃত্যুর ঘটনা। তার পরতে পরতে রহস্য। যত দিন যাচ্ছে, ততই একের পর আর এক নিত্যনতুন ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসছে।

ঘটনার কয়েকদিন পর থেকেই হাথরস কন্যার গণধর্ষণ ও মৃত্যু কেন্দ্র করে, নানাস্তরে একাধিক চক্রান্তের পরিকল্পনার কথা শোনা গেছিল উত্তরপ্রদেশ সরকার, রাজ্য পুলিস প্রশাসনের তরফে। এবার সেই চক্রান্তের বৃত্তে যোগ হলো আরও এক চক্রান্তের দাবি।


চার অভিযুক্তের তরফে হাথরসের এসপিকে হাতে লেখা এক আবেদন জানানোর খবর প্রকাশ্যে আসে। অভিযুক্তদের হয়ে সন্দীপ ঠাকুর দাবি করে, তাদের অকারণেই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। হাথরস কন্যার ধর্ষণ এবং মৃত্যুর সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। আবেদনে সন্দীপ স্বীকার করে, মৃতার সঙ্গে তার বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু সেই সম্পর্কে মৃতার পরিবার আপত্তি ছিলো। ঘটনার দিন খেতে মৃতার সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। তবে মৃতার পরিবার চলে যেতে বলায়, সন্দীপ চলে আসে। এরপর সে প্রতিবেশীদের মুখ থেকে ঘটনার খবর জানতে পারে। পরে ওই ঘটনার সঙ্গে অন্য তিনজনের নামও জুড়ে দেওয়া হয় বলে দাবি। অভিযুক্তদের সন্দেহ, হাথরস কন্যার বাড়িতেই কিছু গণ্ডগোল হয়েছিল। সেখানেই তাঁকে মারধোর করা হয়।



সন্দীপের সঙ্গে মৃতার পরিবারের সম্পর্ক নিয়ে এর আগেও প্রশ্ন উঠেছিল। মোবাইল কল ডিটেলসে দেখা গেছিল ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত সন্দীপ ঠাকুরের সঙ্গে মৃতার ভাই সন্দীপ বাল্মিকীর কথাবার্তা হতো। কিন্তু গত মার্চ মাস থেকে তা বন্ধ হয়ে যায়। তাহলে কি সম্পর্কে কোনও তিক্ততা চলে আসায়, কথাবার্তা বন্ধ হয়ে গেছিল? এই রহস্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে মৃতার ভাইয়ের কথা। তিনি জানিয়েছেন, অভিযুক্ত সন্দীপের সঙ্গে তাঁর কোনও কথা হতো না। গোটা ঘটনায় তিনি চক্রান্ত দেখতে পাচ্ছেন। মৃতার চরিত্র হনন করবেন না, টুইটার বার্তায় অনুরোধ করেছেন প্রিয়াঙ্কা ভাদরা।


এসপি'র কাছে সন্দীপের লেখা চিঠি নিয়ে মিডিয়ার প্রতিনিধিরা মৃতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে, পরিবারের সদস্যরা পারতপক্ষে মুখ খুলতে চাননি। শেষ পর্যন্ত মৃতার বউদি মন্তব্য করে- শ'কথার এককথা। পুলিস আগে জবাব দিক, সেদিন তড়িঘড়ি মৃতার দেহ সৎকার করা হলো কেন। প্রসঙ্গত, এর আগেও ওই একই ঘটনার উল্লেখ করে মৃতার পরিবার জানিয়ে দিয়েছিল, সিট সিবিআই তদন্তে তাঁদের কোনও ভরসা নেই। সবই ওদের(সরকার) ব্যাপার। দাবি করা হয়েছিল, বিচারবিভাগীয় তদন্ত চাই।



বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরগুলিও মাঝরাতে, পরিবারের অনুপস্থিতিতে দেহ সৎকারের ঘটনার চরম বিরোধ করে। তাঁদের অভিযোগ, ধর্ষণের প্রমাণ লোপাট করতেই পুলিস চটজলদি মৃতদেহের সৎকার করে ফেলে। ওদিকে এর আগেই আদালতে এক হলফনামায় সরকার পক্ষ জানিয়েছে, সকাল হলেই মৃতদেহ নিয়ে ঝামেলা পাকানোর চক্রান্ত করা হয়েছিল। আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কথা বিবেচনা করেই পুলিস মৃতদেহ সৎকারের জন্য সকালের অপেক্ষা করতে পারেনি।


পুলিসের বক্তব্য শিরোধার্য না করে গোটা ব্যাপার খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই নেমে পড়েছেন 'সিট'- এর তদন্তকারীরা। মৃতদেহ সৎকারের রাতে ঠিক কী ঘটেছিল জানতে তলব করা হয়েছে গ্রামের চল্লিশজনকে। ওদিকে ধর্ষণকাণ্ডের দিন ঘটনাস্থলে ঠিক কী হয়েছিল, তার এক ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। মৃতার পরিবারের অভিযোগের পরেই পুলিস ঘটনাস্থলে এসে ওই ভিডিও তৈরি করেছিল বলে দাবি। পুলিসের প্রশ্ন, মেয়ের আট- দশ পা দূরেই কাজ করছিল মা। এতো কাছে থেকেও মা কেন মেয়ের চিৎকার শুনতে পেলো না? ঘটনার সময় ওই জায়গায় আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলো বলে জানানো হয়েছে।


গোড়া থেকেই রহস্য দানা বেঁধেছিল হাথরস কন্যার গণধর্ষণের ঘটনা নিয়েও। রাজ্য এডিজি(আইনশৃঙ্খলা) প্রশান্ত কুমার জানান, মৃতার ধর্ষিত হওয়ার প্রমাণ মেলেনি। জিভ কেটে নেওয়ার অভিযোগও ঠিক নয়। প্রাথমিক মেডিক্যাল রিপোর্ট, সফদরজং হসপিটালের ময়না তদন্ত, ফরেন্সিক রিপোর্টেও জানানো হয়েছে মৃতার শরীরে কোনও শুক্রাণু পাওয়া যায়নি। মৃত্যুর কারণ বলা হয়েছে, গলায় মারাত্মক চোট ও তার ফলে ট্রমা। সরকারী এই বক্তব্যে এক চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছেন বিরোধীরা। কিছু আইনজ্ঞের মত, হাথরস কন্যা আজ বেঁচে নেই। তাই তাঁর মৃত্যুকালীন জবানবন্দীই শেষকথা। হসপিটালে তিনি জানিয়েছিলে, দু'জন তাঁকে বলাৎকার করে। যাঁর মধ্যে একজন সন্দীপ। অন্য দুজন মৃতার মাকে দেখে পালিয়ে যায়।


ওদিকে জেরার জন্য পুলিস কংগ্রেস নেতা শ্যোরাজ জীবন বাল্মিকীকে আজ তলব করে বলে খবর। এক নিউজ চ্যানেলের স্টিং অপারেশনে তাঁকে বলতে শোনা গেছিল, দাঙ্গা বাঁধানোর প্রস্তুতির কথা। রাজনীতিতে তিনি গাঁধি পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। অসমর্থিত খবরে জানানো হচ্ছে, হাথরস পুলিস তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চোদ্দ দিনের বিচারবিভাগীয় হেপাজতে পাঠানো হয়েছে পিএফআই- এর ধৃত চারজনকেও। 

যত দিন যাচ্ছে হাথরসকাণ্ডে ততই একের পর আর এক রহস্য জুড়ে যাচ্ছে। রহস্যের জট খুলতে ইতিমধ্যেই সিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি চান, শীর্ষ আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্তে নামুক।


মন্তব্যসমূহ