দিন প্রতিদিন বিশেষ

 হাথরসঃ রহস্য আরো ঘনীভূত 


।। রহস্যের ফোন কল, হাথরসে ঘটনার মোড় ঘুরছে ।।




  কাজল ভট্টাচার্য , কলকাতা 

মৃতার ভাই সন্দীপ বাল্মিকীর মোবাইলে, গণধর্ষণে অভিযুক্ত সন্দীপ ঠাকুরের সঙ্গে কে কথা বলতো? ঘটনার কথা সরাসরি অস্বীকার করেছেন মৃতার ভাই। ওদিকে বুলগড়ি গ্রামে কান পাতলেই এখন শোনা যাচ্ছে এক অন্য কাহিনি। 

মৃতা আর সন্দীপের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই গড়ে উঠেছিলো এক সম্পর্ক। মিডিয়ার ক্যামেরার সামনে গ্রামবাসীরা অনেকেই সেকথা সরাসরী জানিয়েছেন। রহস্যের ফোনকল, গ্রামবাসীদের মুখ খোলা, সব মিলিয়ে ক্রমেই জট পাকিয়ে চলেছে বুলগড়ি কন্যার হত্যারহস্য। সেই জট যে মাত্র সাতদিনের তদন্তে খোলা সম্ভব নয়, তা বোঝা গেল সিটকর্তাদের সিদ্ধান্তেই। কথা থাকলেও সাতদিনের মধ্যে জমা পড়লো না তদন্ত রিপোর্ট। আরও দশ দিনের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। 


ওদিকে দিন গড়ানোর সঙ্গে নানা সূত্রে যা তথ্যপ্রমাণ হাতে উঠে আসছে, তাতে ঘুরে যেতে বসেছে সন্দেহের তিরটাও। প্রশ্ন উঠেছে, মৃতার পরিবার কোনও ঘটনার কথা চেপে যাচ্ছে নাতো? সেই সঙ্গে হাথরস কন্যার মৃত্যুর পরবর্তী ঘটনাক্রমের সঙ্গে ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠেছে রাজনিতীর সম্পর্কও। ইতিমধ্যেই প্রমাণ মিলেছে তলে তলে দাঙ্গা বাঁধানোর ষড়যন্ত্রেরও। সব মিলিয়ে এখন টানটান উত্তেজনা গোটা হাথরস জুড়ে।




ওদিকে সন্দেহ দেখা দিয়েছে মৃতার পরিবারের কিছু অনিচ্ছা, ইচ্ছা নিয়েও। সিট, নার্কো টেস্ট, সিবিআই কোনও কিছুতেই ভরসা রাখতে পারছে না মৃত হাথরস কন্যার পরিবার। কেউ কি তাঁদের শিখিয়ে পড়িয়ে দিয়েছে? মৃতার বাবা, বৌদির পাল্টা প্রশ্ন - সবকিছুই তো ওদের। যারা শেষবারের মতো মেয়েটার মুখও দেখতে দেয়নি। সৎকারের অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছিল। তাদের বিশ্বাস করি কীভাবে?

তাঁদের ইচ্ছা, ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হোক।


আর ঠিক এজায়গাতেই গলার স্বর উঁচু করেছে অভিযুক্ত পক্ষ। তাঁদের বক্তব্যও আদৌ উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। ঠাকুর সম্প্রদায়ের মানুষরা পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন- এতকাল শুনে এসছি, অভিযুক্তরা নার্কো টেস্ট, সিবিআইকে ভয় পায়। এখানে তো দেখছি উল্টোটা। ওই সম্প্রদায়ের তরুণ তরুণীদের সাফ কথা, প্রয়োজনে দু'পক্ষেরই নার্কো টেস্ট করা হোক। তাহলেই বোঝা যাবে কারা সত্যি আর কারা মিথ্যা কথা বলছে। 

"তাহলে কী চায় মৃতার পরিবার?" পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে অভিযুক্ত পক্ষ। ঠাকুর সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে এবার গলা মিলিয়েছে মৃতার বাল্মিকী সমাজের অনেকেও। তাঁদের দাবি, গ্রামে ছোটখাটো মনোমালিন্যের ঘটনা ঘটলেও, এর আগে কোনদিন এধরনের মারাত্মক ঘটনা ঘটেনি। শান্তিতেই সহাবস্থান করে এসছে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। কিন্তু হাথরস কন্যার মৃত্যুর পরেই রাজনৈতিক সক্রিয়তায় নষ্ট হতে বসেছে পারস্পরিক সৌহার্দ্য।




ঘটনার গোড়া থেকেই বারেবারে প্রশ্ন উঠেছিল হাথরস কন্যার ধর্ষিত হওয়া নিয়ে। পুলিস প্রশাসনের তরফেও জানানো হয়েছিল, এপর্যন্ত তার কোনও প্রমাণ মেলেনি। অভিযোগ, মৃতার পরিবার থানায় প্রথমে যে অভিযোগটি দায়ের করেছিল তাতেও কোনও ধর্ষণের কথা বলা হয়নি। একাধিকবার অভিযোগের বয়ান পাল্টানো হয়েছিল। পরে গণধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছিল।


ওদিকে তদন্তকারী দলের হাতে মোবাইলের কল রেকর্ডের এক তালিকা উঠে আসার সঙ্গে সঙ্গেই, এক অন্য সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। তালিকার মোট একশো চারটি কলের দুটি নাম্বারে পরিষ্কার, মৃতার ভাই সন্দীপ বাল্মিকী আর গণধর্ষণের এক অভিযুক্ত সন্দীপ ঠাকুরের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরেই কথাবার্তা চলতো। ঘটনার কথা সরাসরি অস্বীকার করেছে মৃতার ভাই। প্রশ্ন উঠেছে, মৃতার ভাইয়ের নাম্বারে তাহলে কি পরিবারের অন্য কেউ অভিযুক্ত সন্দীপের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলতো? 

মৃতার পরিবার ঘটনার কথা উড়িয়ে দিলেও, গ্রামবাসীদের গলায় অন্য সুর। অনেকেই সোজাসুজি স্বীকার করেছেন, হাথরস কন্যার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন অভিযুক্ত সন্দীপ ঠাকুর। সেই সন্দীপকে অভিযুক্ত করার ঘটনা অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। তাঁদের সন্দেহ, মৃতার পরিবারকে কেউ সমানে উসকানি দিয়ে চলেছে। তবে এব্যাপারে এখনই কেউ কোনও সিদ্ধান্তে আসতে চাইছেন না। সবার বক্তব্য, তদন্ত হলেই গোটা ঘটনা জানা যাবে।

"তদন্ত করে সত্যপ্রকাশ করতে কিছু সময় লাগবেই," স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন গ্রামবাসীরা। "মৃতা সঠিক বিচার পাক। কঠোর শাস্তি পাক এধরনের নৃশংস ঘটনার অপরাধী। আমরা তারজন্য অপেক্ষা করতে রাজি।" তবে এব্যাপারে তাঁদের একটাই দাবি, নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। তাতে যেন কোনও রাজনৈতিক পক্ষপাত প্রভাব না ফেলে। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কোনও নিরপরাধকে দোষের ভাগী করা চলবে না। পাশাপাশি গ্রামবাসীরা আবেদন জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে, গ্রামের শান্তিরক্ষা করতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হোক। তাঁদের অভিযোগের আঙুল বহিরাগতদের দিকে। তারা যেন কোনভাবেই উত্তেজনা ছড়ানোর সুযোগ না পায়। নেতারা দু- চারজন সঙ্গী নিয়ে মৃতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে, কোনও আপত্তি নেই বুলগড়িবাসীদের। গত কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা থেকে তাঁদের অনুরোধ, "দয়া করে, কেউ দলবেঁধে মৃতার পরিবারকে সহানুভূতি জানাতে আসবেন না।"

মন্তব্যসমূহ