দিন প্রতিদিন বিশেষ

 হাথরস বিশেষঃ সিবিআই তদন্ত 


 ।। হাথরসে পদে পদে বাধার মুখে সিবিআই তদন্ত ।।




  কাজল ভট্টাচার্য , কলকাতা, ১৪  অক্টোবর


আঁটঘাট বেঁধেই হাথরসে ডেরা গেড়েছে সিবিআই। আপাতত তদন্তকারী দলের ঠিকানা, সেচ বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর অফ এগ্রিকালচারের অফিস। এদিকে দেখতে দেখতে আজই একমাস পূর্ণ হলো হাথরস গণধর্ষণকাণ্ডর।
মঙ্গলবার সকাল গড়াতেই দলবল নিয়ে মৃত হাথরস কন্যার গ্রাম বুলগড়িতে পা রাখে সিবিআই। কাজে লেগে পড়ে ফরেন্সিক দল। তদন্তকারী দলের সক্রিয়তায় স্পষ্ট সঙ্কেত, রহস্যের পর্দা সরিয়েই ছাড়বে তারা। 
এডিজি(আইনশৃঙ্খলা) প্রশান্ত কুমার যতোই গণধর্ষণের ঘটনা অস্বীকার করুন না কেন, সিবিআই তাতে কর্ণপাত করতে রাজি নয়। বরং শিরোধার্য করা হয়েছে মৃতার পরিবারের অভিযোগ। সে কারণেই তদন্ত শুরুর আগেই সিবিআই যে অভিযোগ দায়ের করে, তাতে গণধর্ষণ, হত্যা, হত্যার চেষ্টার উল্লেখ করা হয়। 





এদিকে ময়দানে নেমেই পদে পদে বাধা সিবিআই তদন্ত এগনোর। আর প্রতিটি ঘটনাতেই বেড়ে চলেছে পুলিস প্রশাসনের অপদার্থতার বহর। ঘটনার প্রায় একমাস পরে সরেজমিন তদন্ত করতে মঙ্গলবার বুলগড়ি গ্রামের ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় সিবিআই। ১৪ সেপ্টেম্বর বাজরা খেতের মধ্যে ঠিক যে জায়গায় ঘটনা ঘটেছিল, গত একমাস সেখানে বিভিন্ন কারণে মানুষের ভিড় লেগেই ছিলো। ঘটনাস্থল সংরক্ষণের কোনও ব্যবস্থাই করেনি পুলিস। যার ফলে ঘটনার সাক্ষ্যপ্রমানের নমুনা সংগ্রহে অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় ফরেন্সিক দলকেও। 

এরপরে আজ ফের আর এক বাধার মুখে পড়তে হয় তদন্তকারী দলকে। ঘটনার পরেই হাথরস কন্যাকে নিয়ে তাঁর মা, দাদা ছুটেছিল হাথরসের সরকারি জেলা হাসপাতালে। আজ তদন্তকারী দল হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারে, সেদিনের কোনও ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া সম্ভব না। হাসপাতাল প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, সাতদিনের 'ব্যাক আপ' ধরা থাকে। যার ফলে একমাস আগের ওই ঘটনার কোনও ছবি দেওয়া সম্ভব নয়। সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণে পুলিসও কোনও আগ্রহ দেখায়নি। হাসপাতাল প্রশাসনের কাছে এই খবর শুনে তদন্তকারী দল অসন্তুষ্ট হয় বলে খবর। তাঁরা হাসপাতালের যেখানে হাথরস কন্যার চিকিৎসা হয়েছিল, এমার্জেন্সি বিভাগ ঘুরে দেখেন।

ওদিকে মঙ্গলবার মৃতার দাদাকে নিজেদের ক্যাম্প অফিসে নিয়ে গেছিলো সিবিআই। সেখানে প্রায় চারঘণ্টা টানা জেরা করা হয়। এরপর আজ ফের ডেকে পাঠানো হয় মৃতার দুই ভাই আর বাবাকে। সেখানে লম্বা সময় ধরে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চলে। তদন্ত যেভাবে এগোচ্ছে তাতে আপাতত সন্তুষ্ট মৃতার পরিবার। সিবিআই নিয়ে তাঁদের যে অস্বস্তি ছিলো, তা সম্ভবত কাটতে বসেছে। "আশা করি ন্যায়বিচার পাবো," বলেন মৃত হাথরস কন্যার দাদা। 

সিবিআই তদন্ত নিয়ে যাতে ফের কোনও বিতর্ক না বাঁধে, সে ব্যাপারেও সাবধানি পদক্ষেপ করেছে যোগী সরকার। শীর্ষ আদালতের নজরদারিতেই তদন্ত হোক, ইতিমধ্যেই হলফনামায় সে আবেদন জানানো হয়েছে। আদালত প্রয়োজনে সিবিআইকে তদন্তে অগ্রগতির 'স্টেটাস রিপোর্ট' জমা দেওয়ার আদেশ দিক। আসলে এই সিদ্ধান্তে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তদন্ত নিয়ে রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক বিতর্ক এড়ানোর পাশাপাশি, মৃতা পরিবারের তরফেও যাতে সন্দেহ প্রকাশ করার রাস্তা না খোলা থাকে, সেকথা মাথায় রেখেই এগিয়েছে সরকার। প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী সিবিআই তদন্তের কথা ঘোষনা করতেই, ঘোর আপত্তি করেছিল মৃতার পরিবার। 




তদন্তে প্রাধান্য পাচ্ছে মৃতার মায়ের বক্তব্য। মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে তিনি খেতে কাজ করার সময় ঘটনাটি ঘটে। প্রয়োজনে সিবিআই ফের তাঁর সঙ্গে কথা বলবে বলে অনুমান। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে রেকর্ড করা হতে পারে তাঁর জবানবন্দী। ওদিকে অভিযুক্তদের জেরা করতে তাদের হেপাজতে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানাতে পারে সিবিআই। 
ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ জানতে জেলা হাসপাতালের যে চিকিৎসকরা হাথরস কন্যার প্রাথমিক চিকিৎসা করেন, তাঁদের কাছেও ঘটনার বিবরণ শুনতে চাইবেন তদন্তকারীরা। জেরার মুখে পড়তে পারেন ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিস আধিকারিকরাও। মৃতার পরিবার ছাড়া ঘটনার অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীদের ব্যাপারেও খোঁজখবর চলছে। 

তবে অভিজ্ঞ মহলের ধারনা, তদন্তে চমক আনতে পারে সেই রহস্যজনক মোবাইল কল ডিটেলস। মৃতার দাদা সন্দীপ বাল্মিকী আর গণধর্ষণের মূল অভিযুক্ত সন্দীপ ঠাকুরের মধ্যে মোবাইলে ঠিক কোন ধরনের কথাবার্তা চলতো? কেনই বা আচমকা গত মার্চ মাস থেকে বন্ধ হয়ে গেছিল তাঁদের মোবাইলবার্তা?  ( ছবি সৌজন্যঃ বিভিন্ন সংবাদপত্র ) 


মন্তব্যসমূহ