দিন প্রতিদিন বিশেষ

 

আজকের বিশেষ বিহারের মসনদ




।। বর্ণহিন্দুর তকমা ঝারতে চাইছে বিজেপি ।।





কাজল ভট্টাচার্য, কলকাতা, 
১৭ নভেম্বর 


কোনদিন মন্ত্রী পদে না থেকেও সরাসরি উপমুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসলেন তারকিশোর প্রসাদ। ওপরওয়ালা যখন দেন, তখন সম্ভবত এমন দুহাত উপুর করেই দেন। আবার বিনামেঘে বজ্রপাতও হয়। যার শিকার হলেন সুশীল মোদি। আচমকাই তিনি জানতে পারলেন, এবার আর উপমুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন না। ওদিকে এক চমক অপেক্ষা করছিলো রেণুদেবীর জন্য। তাঁকে উপমুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়ে বেশ একটা চমক দিলো বিজেপি। মন্ত্রীত্বের স্বাদ অবশ্য তিনি আগেও পেয়েছেন। নীতিশ মন্ত্রিসভায় রেণুদেবী এর আগেও রাজ্যের ক্রিড়া, কলা ও সংস্কৃতি মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন।


তবে এমন হঠাত করেই সুশীল মোদির দুর্দিন ঘনাবে, তা কেউই ভাবতে পারেননি। সোমবার নীতিশ মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অমিত শাহ পাটনায় এলেও, সুশীল মোদির সঙ্গে দেখা করার সময় পেলেন না। ঘটনায় অসন্তুষ্ট সুশীল শিবির। তাঁদের দাবি, দুর্নীতি নিয়ে লালু রাজের বিরুদ্ধে যে ভাবে লাগাতার তোপ দেগে গেছিলেন সুশীল মোদি, তার পরিণামেই আজ বিহারের ক্ষমতায় এনডিএর প্রত্যাবর্তন। 

ওদিকে সাদা চোখে আপাতত যা ধরা পড়ছে, বিহার রাজনীতিতে এবার নতুন ছক সাজাচ্ছে পদ্ম শিবির। যে ছকে আপাতত নীতিশ কুমারকে সামনে রেখে, রাজদন্ড হাতে রাখবে বিজেপি। শাসক নীতিশ কুমার, শাসন বিজেপির। সেই ছকে সুশীল মোদি বেমানান। কারণ নীতিশ কুমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলা দলের কোনও নেতা এখন নাপসন্দ বিজেপির কাছে। নির্বাচনের আগে বা পরে সুশীল যে ধরনের বক্তব্য রাখেন তাতে বিজেপির ভাবমূর্তির লাভ থেকে লোকসান হয়েছিল বেশি। এমন একটা ধারনা তৈরি হয়েছিল যাতে মনে হয়, জনতা দল ইউনাইটেডের কাছা ধরেই বিজেপির এগিয়ে চলা। আগামীতে বিহার রাজনীতিতে নিজের সুস্পষ্ট স্বতন্ত্র এক পরিচয় তৈরি করতে চাইছে দল।




ভোটের ফলাফলের চুলচেরা বিচার বিশ্লেষন করেই নয়া রণকৌশল সাজিয়েছে পদ্ম শিবির। নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই বোঝা গেছিলো, নীতিশ কুমারের জায়গায় এবার নির্বাচনের মুখ ছিলো নরেন্দ্র মোদি। ভোটের ফলাফল হাতে আসতেই বোঝা গেছিলো, মানুষ এবার ভোট দিয়েছিলো বিজেপিকে। অনেক কেন্দ্রেই অবশ্য আসন সমঝোতার জন্য বিজেপির বিকল্প ছিলো নীতিশের জনতা দল ইউনাইটেড। রাজ্য রাজনীতির অভিজ্ঞ মহলের ধারনা, এনডিএ'র শরিক না হলে এবার আরও পিছিয়ে পড়তেন নীতিশ কুমার। এনডিএ জোটসঙ্গী হওয়ার সুবাদেই বিজেপির বিকল্প হিসেবে ইজ্জতরক্ষা হয়েছে জনতা দল ইউনাইটেডের।

মতদানের এই প্রবণতা দেখেই বিহার রাজ্য রাজনীতির ওয়াকিবহাল মহলের মনের কথাটি শোনা গিয়েছে ছত্তিশগড় মুখ্যমন্ত্রী ভুপেশ বাঘেলার মুখে। বাংলার নির্বাচন চুকলেই নীতিশ মন্ত্রিসভার দিন শেষ। ওদিকে বিজেপিও যে সেই লক্ষ্যে এগোচ্ছে তা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। বর্ণহিন্দু দলের তকমা ঝেরে এখন সার্বজনীন হতে চাইছে গেরুয়া শিবির। নয়া নীতিশ মন্ত্রিসভায় এবার এরকম দুজনকে উপমুখ্যমন্ত্রীর পদে বসানো হলো, যাঁদের দুজনের একজনও বর্ণের বিচারে কুলীন না। 

বিহারের নয়া উপমুখ্যমন্ত্রী তারকিশোর বৈশ্য সম্প্রদায়ের। আর রেণুদেবী নোনিয়া সমাজের। সরকারি খাতায় বৈশ্য সম্প্রদায় ওবিসি, আর নোনিয়া সমাজ এক্সট্রিম ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস। আর এক জায়গাতেও দুজনের বিস্তর মিল। তারকিশোর প্রসাদ আর রেণুদেবীর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের ঘনিষ্ঠতা। তারকিশোর প্রসাদের রাজনীতিতে হাতেখড়ি অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদে। রেণুদেবী দায়িত্ব সামলেছেন বিহার প্রদেশ দুর্গা বাহিনীর। আজ হতদরিদ্র অবস্থা হলেও নোনিয়া সমাজের দাবি, তাঁরাই পৃথ্বীরাজ চৌহানের বংশধর।


প্রশ্ন একটাই। জাতপাতের ছক সরিয়ে কি বিহারে রাজনীতি করা যায় না? বিহারের সামাজিক প্রেক্ষিতে এখনই হয়তো তা পুরোপুরী সম্ভব না। সুশাসন, উন্নয়নের শ্লোগান দিয়ে এবার রাজনীতির মোড় ঘোরানোর চেষ্টা করেছিল দুই প্রতিদ্বন্দী শিবিরই। লালুপ্রসাদ যাদবের মুসলিম যাদব ভোটব্যাঙ্কের সমীকরণ ছাপিয়ে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের শ্লোগান ছিলো দশ লক্ষ বেকারের চাকরি। আর তাতে সফলতার অনেকটা পথই পেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন তেজস্বী প্রসাদ যাদব।








মন্তব্যসমূহ