দিন প্রতিদিন বিশেষ

 বিহার নির্বাচন বিশেষ 


।। তেজস্বীর তেজে কি জল ঢালতে পারবে নীতিশের নীতি ।।



    



      কাজল ভট্টাচার্য, কলকাতা, ৩ নভেম্বর 
আজ মুখোমুখী নীতিশ কুমার, তেজস্বী যাদব। পাখীর চোখ বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি। ভোটযুদ্ধ দুই প্রজন্মের দুই প্রার্থীর। রাজধানী শহর পাটনাতেও বেশ উৎসবের মেজাজ। রাজ্যের দ্বিতীয় দফার ভোটে, ভোট দিলেন রাজ্যের, কেন্দ্রের একাধিক হেভিওয়েট নেতা, মন্ত্রী।

মঙ্গলবার সকালেই ভোট দিলেন নীতিশ কুমার। দিঘার এক সরকারি স্কুলের ভোটকেন্দ্রে। টুইটবার্তা দিলেন বিহারবাসীকে- পনেরো বছর ধরে কাজ করছি। তবেই বিহার এগিয়েছে। বিহারকে নিজের পরিবার ভেবেই সেবা করেছি। টুইটবার্তায় আবেদন নীতিশের- একটি ভোটও নষ্ট করবেন না। পরিবারের সবাই ভোট দিন।"

ওদিকে তেজস্বী যাদবও সকাল সকাল পাটনার এক ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়ে এলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মা রাবড়িদেবী। "নতুন যুগের নয়া বিহার তৈরির জন্য পরিবর্তন জরুরি," সকালেই টুইট করেছেন তেজস্বী যাদব। ওদিকে খাগারিয়ায় ভোট দিলেন চিরাগ পাসোয়ান। তিনি ডাক দিয়েছেন, নীতিশমুক্ত বিহার গড়ার।

বসে থাকেননি প্রধানমন্ত্রীও। টুইটে তিনি লেখেন- সবাই ভোট দিয়ে আজ গণতন্ত্রের উৎসবে মাতুন। ওদিকে ভোট দিয়ে বিহারে নিজেদের পছন্দ মতো সরকার গড়ায় রাজ্যবাসীকে উৎসাহিত করেছেন রাহুল গাঁধি। তবে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শিবির এনডিএ আর মহাজোটের দিল্লি থেকে উড়ে আসা, দুই স্টার ক্যাম্পেনারের এত ডাকাডাকির পরেও দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে ভোট পড়লো মাত্র ৫৩.৫১ শতাংশ। তবে সন্ধ্যা ছ'টার পরেও কিছু মতদান কেন্দ্রে ভোট চলায়, ওই হার বাড়বে বলে খবর। পাঁচবছর আগের নির্বাচনে ওই কেন্দ্রগুলিতে ভোট পড়েছিল ৫৫.৩৫ শতাংশ।

তবে তেজস্বীর তেজের সামনে নীতিশ কি খানিকটা বিচলিত? সন্দেহের ইন্ধন জুগিয়েছেন খোদ নীতিশ কুমার। গত কিছুদিন ধরেই নির্বাচনী সফরে তাঁর কথাবার্তায় স্পষ্ট সঙ্কেত ছিল মেজাজ হারানোর। বিরোধী শিবিরকে আক্রমণ করতে তিনি যে ধরনের মারমুখী আক্রমণ চালিয়েছিলেন, তা নীতিশের স্বভাববিরুদ্ধ বলেই মন্তব্য ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মহলের। প্রশ্ন উঠেছিলো প্রতিদ্বন্দী তেজস্বীকে কোণঠাসা করতে, তাঁর ভাষা ব্যবহার নিয়েও। 
নিজের শান্তশিষ্ট স্বভাবের জন্য বিহার রাজনীতিতে নীতিশ কুমারের পরিচয় 'সুশাসনবাবু'। কিন্তু গত পনেরো বছরের শাসনকালে ধুলো জমেছে 'সুশাসনবাবু'র ছবিতেও। অতীতে বিহার নির্বাচনে এনডিএ'র মুখ ছিলেন নীতিশ কুমার। এবার ছবিটা উল্টে গেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই ভরসা। মোদির হাত ধরেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাইছেন 'সুশাসনবাবু'।

ওদিকে তেজস্বীর হাল সান্টা ক্লজের। গোটা বিহার তিনি চষে ফেলছেন কাঁধের ঝোলাতে দশ লক্ষ সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি নিয়ে। নীতিশ কুমারের দাবি, ঝোলা খুললেই বেড়াল বেরিয়ে পড়বে। মধুবনির হরলাখির জনসভায় তেজস্বীকে বিঁধতে নীতিশ বলেন, "পনেরো বছরে ওরা ৯৫ হাজার চাকরি দিয়েছিল। আমরা দিয়েছি ছয় লক্ষ চাকরি।" আগামিদিনে বেকারদের কর্ম সংস্থানের আরও ব্যাপক ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেন নীতিশ। এরপরেই জনসভা থেকে তাঁর দিকে ছুটে আসে পেঁয়াজ। "ছুঁড়ুন, খুব ছুঁড়ুন," বলতে শোনা যায় নীতিশকে। এর আগে মজঃফরপুরের সকরাতে তাঁর চপারের দিকে এক ব্যক্তি চটি ছুঁড়ছিলেন। তখন অবশ্য নীতিশ মঞ্চে।



প্রথম দফায় ১৬ জেলার ৭১ বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট হওয়ার পর আজ দ্বিতীয় দফার নির্বাচন। ভাগ্যপরীক্ষা এক হাজার চারশো তেষট্টিজন প্রার্থীর। ভোট দেওয়ার কথা ছিলো প্রায় দু'কোটি পঁচাশি লক্ষ মানুষের। ঘড়ির কাঁটা সকাল সাতটা ছুঁতেই ভোট নেওয়া শুরু হয়ে যায় ১৭ জেলার ৯৪ বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য। ওদিকে করোনা সংক্রমিতদের জন্য ভোট দেওয়ার সময় বাড়ানো হয়েছিল একঘণ্টা। পাঁচটার বদলে ভোট নেওয়া হয় সন্ধ্যা ছ'টা পর্যন্ত। তবে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোটদানের যেরকম প্রবণতা ছিল, তাতে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে মজঃফরপুরে। আর কম ভোট পড়ার রেকর্ড করেছে পাটনা।

আজ ইভিএম বন্দি হলো এনডিএ জোটের বিজেপি'র ৪৬, জনতা দল ইউনাইটেডের ৪৩জন প্রার্থীর। মহাজোটের শরিক রাষ্ট্রীয় জনতা দলের ৫৬, কংগ্রেসের ২৪, সিপিআই সিপিএম দু'দলই লড়াই চালালো চারটি করে মোট আট আসনে। ভাগ্যপরীক্ষা হলো লোক জনশক্তির ৫২জন প্রার্থীর। গত এনডিএ মন্ত্রিসভার চারসদস্য আগামিদিনে ফের তাদের কুর্সি ফিরে পাবেন কিনা, মানুষের সেই রায় আজ ইভিএম বন্দি হলো। এই মন্ত্রিদের মধ্যে দুজন বিজেপির, দুজন জনতা দল ইউনাইটেডের।

"প্রথম দফার ভোটে স্পষ্ট সঙ্কেত, বিহারে এনডিএ সরকার ফিরছে," ফারবিসগঞ্জের জনসভায় বললেন মোদি। আজ তিনি রাজ্যের চার জায়গায় জনসভায় যোগ দেন। সেই সঙ্গে আজই শেষ হলো তাঁর নির্বাচনী সফর। তিনি বলেন, "বাড়ির মেয়েরা বলছেন, বাড়ির লোকরা যা করছে করুক। আমরাতো মোদির সঙ্গে। সোশাল মিডিয়ায় এরকমই দেখছি।" মোদি যাই বলুন না কেন, চিরাগ পাসোয়ান কিন্তু আজ ফের বুক ঠুকে বলেছেন- "নীতিশ কুমার তাঁর কুর্শিতে ফিরছেন না। লিখে দিতে পারি।" আজ বিহারে নির্বাচনী প্রচার করে গেলেন রাহুল গাঁধিও। তবে আগামিকালও তিনি প্রচার চালাবেন।



মন্তব্যসমূহ