রবিবাসরীয় সাহিত্যের দিন প্রতিদিন

 আমাদের নিয়মিত সাহিত্য সাধনার দিন প্রতিদিন  




আধুনিক বাংলা সাহিত্যের নবীন লেখক সন্দীপ চক্রবর্তী । সন্দীপ লেখেন, নিজের অনুভুতি দিয়ে। সেখানে পাওয়া যাবে নিজেকে খুঁজে। বর্তমানে সন্দীপ একটি সাপ্তাহিকপত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগের অন্যতম । আজ তাঁর ধারাবাহিক থেকে একটু চোখ ফিরিয়ে আবার স্বাদ নিই  ধারাবাহিক উপন্যাসের।এবার থেকে  প্রতি রবিবার প্রকাশিত হবে এক একটি পর্ব। কারণ কিছুই নয় সন্দীপের উপন্যাসের এক একটি অধ্যায় মানে এক একটি গল্প। তাই রবিবাসরীয় একটা সাহিত্যের আড্ডা ভরানো থাক সন্দীপের উপন্যাসে।   


ঝুলবারান্দার নীচে #৩৬





সন্দীপ চক্রবর্তী

জীবনের কোনও ঘটনায় অবাক হতে পারলে আমি সব থেকে বেশি আনন্দ পাই। বুঝতে পারি, যে হাঁ-করা ক্যাবলা ছেলেটাকে আমি অনেক যত্নে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছি, সে আছে। দুনিয়াদারির সাপলুডোয় মইয়ের লোভে সাপের মুখে পড়েনি।
কিন্তু কাল রাতে ছবির আচরণে আমি অবাক হয়েছি ঠিকই, তবে আনন্দ পাইনি। ছবির আগেও এমন অনেক মানুষের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে যারা ভালোবাসা বলতে শুধু শরীর বোঝেন। তাদের মধ্যে পুরুষ মহিলা, সফল অসফল, মধ্যবিত্ত বড়োলোক-- সব ধরনের মানুষ আছেন। কিন্তু তারাও বোধহয় তাদের ভালোবাসার মানুষটিকে এ কথা কখনও বলেননি যে, আমি তোমায় ভালোবাসি সেটাই যথেষ্ট। তুমি আমায় ভালোবাসো কিনা আমার জানার দরকার নেই। এইখানেই ছবি আলাদা। অসহ্য রকমের অকপট। এবং বেপরোয়া।
ছবির কথা ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম। আমার সংবিৎ ফিরল পাখিদের ডাকাডাকিতে। জানলা দিয়ে দেখলাম পুব আকাশে আলো ফুটেছে। আর দূর থেকে ভেসে আসছে বাঁশির সুর। সম্ভবত জীবন মাস্টার রেওয়াজ করছেন। ইচ্ছে হল আমিও বাইরে যাই। ভোরের আলোয় বল্লালদিঘি গ্রামটিকে কেমন লাগে, দেখে আসি একবার।
গড়ানে পাথরে বাস। গড়াবার ইচ্ছে হলে আর আমাকে পায় কে! বেরিয়ে পড়লাম। যাত্রিকের কুশিলবেরা এখন গভীর ঘুমে। তাই জীবন মাস্টারকেই বলে এলাম, একটু বেরোচ্ছি। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে ফিরে আসব।
স্কুলবাড়িটা রাস্তার ধারে। সেই রাস্তা ধরে কিছুদূর যাবার পর বাঁদিকে মাঠ শুরু। শেষ কোথায় অবশ্য জানি না। আবছা আলোয় পায়ে চলার সরু একটা পথও চোখে পড়ল। আর কী চাই! নেমে পড়লাম। আশ্বিন মাসে এ সব অঞ্চলে রাতে হিম পড়ে। হিমে ভেজা মাটির গন্ধই আলাদা। হয়তো কিশোরীর গায়ের গন্ধের সঙ্গে এই গন্ধের মিল আছে। কাল রাতে ছবি চলে যাবার পর থেকে অদ্ভুত এক আচ্ছন্নতায় ডুবে গিয়েছিলাম। মাটির এই গন্ধ আমাকে আবার ফিরিয়ে আনল। মনে হল এতক্ষণ আমি ভালো ছিলাম না। মানুষের আচরণে অসংগতি দেখলে আমি ভালো থাকি না। ইচ্ছে হয় তাকে ডেকে বলি, মানুষ যতই দেওয়াল ভেঙে বাইরে এসে দাঁড়াক, তার পায়ের কাছে একটা চৌকাঠ থেকেই যায়। সেই অদৃশ্য চৌকাঠ পেরোতে পারা খুব কঠিন কাজ। আজ তুমি যা চাইছ কাল সেটাই তোমার বোঝা হয়ে উঠবে না তো? ভেবে দেখো আর একবার।
আবির-রাঙানো দিগন্তে সূর্যের মুখ দেখা গেল। আমিও হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম এক দিঘির কাছে। নারকেল গাছ দিয়ে ঘেরা জায়গাটি বেশ মনোরম। এই দিঘির নামই বল্লালদিঘি কি না কে জানে! অবশ্য তা নাই বা জানলাম। আমি দিঘির বাঁধানো ঘাটে বসতে পেরেই খুশি। প্রকৃতির এমন ভুবন ভোলানো রূপ অনেকদিন দেখিনি। অনেকদিন আমার মন অনন্তের সাক্ষাৎ পায়নি। জীবনের কোনওকিছুই ফেলনা নয়। কাল ছবির আগুন আমার ভালো লাগেনি। কিন্তু আগুনে কষ্ট না পেলে আজ হয়তো আমি এই দিঘির কাছে পৌঁছতেই পারতাম না।
ফেরার সময় নাম সংকীর্তনের একটি দলের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। নানা বয়েসের পাঁচজন মানুষ গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে মনের সুখে গান গাইতে গাইতে ঘুরছেন। গানটি আমার খুব প্রিয়, প্রভাতের কালে শচীর আঙ্গিনার মাঝে কার গৌর নাচিয়া বেড়ায় রে। সর্বমান্য লোকশিল্পী অমর পালের কণ্ঠে এই গান অনেকবার শুনেছি। কিন্তু প্রথম শুনেছিলাম ছোটবেলায় নবদ্বীপে ছোট দিদার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে। সেবারও নাম সংকীর্তনের একটি দল পাঁচ বছরের এক বালকের নবীন কানে ঢেলে দিয়েছিল এই সুর। সেই বয়েসে গানের মর্ম আমি বুঝিনি। কিন্তু সকালটা আশ্চর্য সুন্দর হয়ে গিয়েছিল। গ্রামেগঞ্জে থাকলে আজও আমি এই গান খুঁজি। ছবির আগুনকে ধন্যবাদ। জলের পর ফেলে আসা এক ডাঙার সঙ্গেও সে আমার দেখা করিয়ে দিল।
স্কুলবাড়িতে ফিরে দেখলাম কেউই এখনও ঘুম থেকে ওঠেনি। না, ব্যতিক্রম একজন আছে। ছবি। সত্যিই তাকে এত সকালে আশা করিনি। কিন্তু ও শুধু ঘুম থেকেই ওঠেনি, ওর স্নানও সারা হয়ে গেছে। ছবির সদ্যস্নাত রূপ দেখলে অবাক হতে হয়। বিশেষ করে দুই ভুরুর মাঝখানে লাল বড়ো টিপটি যে ওর বিন্দুমাত্র প্রসাধনহীন স্বাভাবিক মুখশ্রীকে আরও শ্রীময়ী করে তুলেছে, সে কথা বলাই বাহুল্য। মনে হল যেন এক ফুলেভরা রাধাচূড়াই দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়।
আমাকে দেখে ছবি ছেলেমানুষের মতো বলল, কোথায় গিয়েছিলে তুমি? আমি কখন থেকে খুঁজছি। চলো, আমার ঘরে চলো। তোমার সঙ্গে আমার অনেক কথা আছে।
হেসে বললাম, কথা তো আমার ঘরে বসেও বলা যায়।
তা যায়। কিন্তু তুমি আমার ঘরেই চলো।
ওর বড়ো ইচ্ছেটা রাখতে পারব না। তাই ছোট ইচ্ছেটা মেনে নিলাম। গেলাম ওর ঘরে। দরজাটা ভেজিয়ে রেখে ছবি আমার পাশে এসে বসল। সত্যি কথা বলতে, খুব কাছে এসে বসল। ভারী মিষ্টি ল্যাভেন্ডারের গন্ধে ভরে গেল আমার বুকের বাতাস। বললাম, রোজই সকালে স্নান করো নাকি?
না তো। আজই করলাম। তোমার জন্য করলাম। তুমি মেক-আপ পছন্দ করো না৷ দেখো, করিনি। এসব অবশ্য তোমার লেখা পড়েই জেনেছি। আরও একটা কথা তোমার লেখায় পড়েছিলাম৷ তুমি বড়ো টিপ পছন্দ করো। আমায় কেমন লাগছে বললে না তো?
খুব সুন্দর লাগছে ছবি। কাল তোমার মধ্যে শুধু আগুনই দেখেছিলাম। মাত্র কয়েক ঘন্টায় যে সেই আগুন আলো হয়ে যাবে ধারণাও করতে পারিনি। কিন্তু এসব তুমি কেন করছ?
বিকজ আই লাভ ইউ। জীবনে দু'জনকেই আমার ভালো লেগেছে সন্দীপদা৷ রজতদা আর তুমি। তোমরা চাইলে আমি তোমাদের দু'জনের সঙ্গেই থাকতে পারতাম। মেয়েরা পুরুষ বলতে একটা ঘর বোঝে। আমার না হয় দুটো হত। কী এসে যায় তাতে! কিন্তু রজতদা আমার সঙ্গে থাকবে না। না, তার জন্য ওকে আমি দোষ দিই না। কারণ ওর ঘাড়ে যে চেপেছে সেও আমারই জাতের। আমি যেমন রাক্ষসী, সেও তাই। আর জানো তো, রাক্ষসী কখনও আর একটা রাক্ষসীর মাংস খায় না। সুতরাং বাকি রইলে তুমি। জানি, ঋষির সঙ্গে রাক্ষসীর রিলেশনশিপ ব্যকরণসম্মত নয়। কিন্তু প্লিজ, এবারের মতো রাক্ষসীটাকে মেনে নাও। পুনর্জন্ম বলে যদি কিছু থাকে, তা হলে কথা দিচ্ছি, পরের বার তোমার লক্ষ্মী বউ হব।
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ছবির মুখের দিকে। এভাবে কি কোনও মেয়ে ভালোবাসার কথা বলতে পারে? গল্প-উপন্যাসে ছবির মতো কোনও চরিত্র পেলে আমি নিজেই হয়তো কৃত্রিম বলে উড়িয়ে দিতাম। কিন্তু আমার সৌভাগ্য ছবি আমার কাল্পনিক চরিত্র নয়। ও আমার পাশে বসে আছে। মাথাটা হেলিয়ে দিয়েছে আমার কাঁধে। দেওয়ালে চোখ রেখে কোন সুদূর দিগন্তের কথা ভাবছে কে জানে! অবাক আমি আগেই হয়েছিলাম৷ এবার শ্রদ্ধায় আমার মাথা নত হল। কারণ যে মেয়ে নিজেকে রাক্ষসী বলতে পারে বা ভাবতে পারে, সে আর যাই হোক হিপোক্রিট নয়। বললাম, এবার আমার কিছু কথা তোমায় শুনতে হবে ছবি। আমার লেখা পড়ে তুমি আমায় ভালোবেসেছ। কিন্তু তুমি আমার কাছে যা চাও, তাই যদি পাও, তা হলে আমার লেখা শেষ হয়ে যাবে।
ছবি সোজা হয়ে বসে বলল, লেখা শেষ হবে কেন?
কারণ আমার শেকড় বহুদূর পর্যন্ত ছড়ানো বলেই আমি লেখক। সেই বিশ্বময় ছড়ানো শেকড়কে তুমি যদি বাগানে বা টবে বন্দি করো তা হলে আমি আর লেখক থাকব না। তোমার শোকেসের সাজানো পুতুল হয়ে যাব।
ছবির চোখ জলে ভরে গেল। ভেবেছিলাম ও বোধহয় ভেঙে পড়বে। কিংবা ছেলেমানুষের মতো জিদ করে আমার কথাগুলো উড়িয়ে দেবে। কিন্তু ও সেরকম কিছুই করল না। কয়েকটা নীরব মুহূর্ত পেরিয়ে এসে বলল, না সন্দীপদা। তোমার লেখা শেষ হয়ে যাক আমি চাই না। কিন্তু তোমার লেখা নষ্ট হবে না আবার আমিও তোমার কাছে থাকব, এরকম কোনও উপায়ই কি নেই?
আছে ছবি। আমার কাছে যদি থাকতে চাও তা হলে আমাকে ধরে রাখার কথা ভেবো না। ছেড়ে দাও। উড়িয়ে দাও। মুক্তির থেকে বড়ো বাঁধন তো আর কিছু হয় না। আজ যে পাখিকে তুমি খাঁচার দরজা খুলে উড়িয়ে দিলে কাল তাকে কোথাও না কোথাও তোমার কাছে ধরা দিতেই হবে। তোমার শক্ত বাঁধন সে খুলতেও পারবে না, ভুলতেও পারবে না।
ছবি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলল, বেশ, পাখিটাকে আমি উড়িয়েই দিলাম। দেখি সে ধরা দেয় কিনা। তবে একটা কথা জানতে খুব ইচ্ছে করছে। মোহরকেও কি তুমি খাঁচার দরজা খুলে পাখিটাকে উড়িয়ে দেবার কথা বলেছ?
মোহরের কথা তুমি কী করে জানলে? আমি তো তোমায় বলিনি!
ছবি হাসল, কাম অন সন্দীপদা। আমি ছবিরানি। একটা দলের হিরোইন। ঘটে কিছু বুদ্ধিশুদ্ধি তো আমার থাকবে নাকি! কাল আমাকে ড্রাঙ্ক অবস্থায় পেয়েও যখন তুমি ছুঁয়ে দেখলে না, তখনই আমার সন্দেহ হয়েছিল। এ লাইনে দু'চারজন বাদ দিলে সবার কাছেই আমি মাল। বিছানার মাল। সেখানে তুমি--- যাক, সে কথা। কাজেই আমি যে হেরেছি সেটা কাল রাতেই বুঝেছিলাম। কিন্তু কার কাছে হারলাম সেটাও তো জানতে হবে।
ধাঁধাটা আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। ছবি কীভাবে মোহরের সন্ধান পেয়েছে আমি বুঝতে পেরেছি। বললাম, কার কাছে হারলে সেটা নিশ্চয়ই আমার ডায়েরি পড়ে জেনেছ?
ব্রিলিয়ান্ট! সকালে তোমাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে তোমার ঘরে গেলাম। দেখলাম ডায়েরিটা ফরাশের ওপর পড়ে আছে। কৌতূহল হল। দু'চারপাতা ওল্টাতেই পেয়ে গেলাম মোহরকে। তুমি হয়তো বলবে এভাবে কারোর ডায়েরি পড়া অন্যায়। কিন্তু আমি বলব, নাথিং ইজ আনফেয়ার ইন লাভ অ্যান্ড ওয়ার। আর তা ছাড়া, চুরি না করলে বাটপারের সন্ধান পেতাম কী করে! তোমাকে বললে তুমি নিশ্চয়ই বলতে। কিন্তু বমাল সমেত রাক্ষসীকে নিজে ধরার যে আনন্দ সেটা অন্য কেউ তাকে ধরিয়ে দিলে পাওয়া যায় না।
মোহরকে রাক্ষসী বলল ছবি। কষ্ট পেলেও আমি কিছু বলতে পারলাম না। আমার জীবনদেবতাও তাই চান। মানুষের ক্ষমা আরও বড়ো হোক। সহিষ্ণুতা আরও গভীর হোক। সিঁড়ির সব থেকে উঁচু ধাপটিতে বসে মানুষ দেখতে ভালোবাসে ছবি। দূর থেকে দেখলে দেখা তো ভুল হবেই৷
ছবি নিঃশব্দে কাঁদছিল। আঁচল দিয়ে চোখ মুছছিল বারবার। কিছুক্ষণ পর বলল, জানি তুমি কী ভাবছ। সবই যখন জানতাম তা হলে তোমাকে প্রপোজ করলাম কেন? এতদিন ধরে যা ভেবেছি একবার অন্তত তোমায় না বললে নিজের কাছেই যে অপরাধী থেকে যেতাম সন্দীপদা। আফশোসকে আমি বড়ো ভয় পাই। তাই বলেছি। যাক গে, আমার প্রশ্নের উত্তর কিন্তু তুমি এখনও দাওনি। মোহরকেও কি তুমি খাঁচার পাখি উড়িয়ে দেবার কথা বলেছ?
হ্যাঁ ছবি। তাই বলেছি। মোহর বলেছে ও আমাকে ওর ভেতরেই রাখবে, বাইরে কোনওদিন আনবে না। এও কি খাঁচার পাখি উড়িয়ে দেওয়া নয়?
কিন্তু আমি যে তোমার মোহরের মতো দেবদাস হতে পারি না, সন্দীপদা! দেবদাস হবার জন্য আমি জন্মাইনি গো। আমার জন্য পুরুষমানুষ দেবদাস হবে তবে না আমি ছবিরানি। দুঃখটা কোথায় জানো? আজ আমি স্টার। কাল সুপারস্টার হব। দামী ফ্ল্যাট কিনব। সব থেকে দামী গাড়িটা কিনব। কিন্তু আকাশছোঁয়া সাকসেস দিয়েও তোমার ওই তরল আলতার শিশি আমি ভাঙতে পারব না।
ছবি থামল। এখনও ওর চোখ দেওয়ালে আঁকা অদৃশ্য দিগন্তের দিকে। যে দিগন্ত সম্ভবত ও-ই দেখতে পায়। একটা কথা জানার ইচ্ছে ছিল। তোমার মনে এত কনট্রাডিকশন কেন ছবি? পরে ভাবলাম, থাক। যে আগুন হতে চায় পোড়াবার মতো কিছু না পেলে সে তো নিজেকেই পোড়াবে। আর তা ছাড়া, কনট্রাডিকশন ছাড়া কি আধুনিক হওয়া যায়? বললাম, আমায় এবার যেতে হবে ছবি। একটু একা থাকতে হবে। নয়তো তোমাকে আমি বুঝতে পারব না।
যাবে? যাও তা হলে--
চলেই আসছিলাম। ছবি ডাকল, শোনো। তোমাকে যখন খুব দেখতে ইচ্ছে করবে, তখন ফোন করলে আসবে তো?
আসব
খুব ভালো রান্না আমি করতে পারি না। যদি একটু খারাপ খেতে হয়, খাবে তো?
তুমি আমাকে যা খাওয়াবে আমি তাই খাব।
ছবিকে ছবির কাছে রেখে ওর ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। তবে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেও ওর আলো থেকে বেরিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে কোনওদিনই সম্ভব হবে না। জীবনে যখন অন্ধকার ঘনিয়ে আসবে, ওর কথা আমার মনে পড়বে। হয়তো ওর কাছে চলেও যাব একমুঠো আলোর জন্য। মনে আশা থাকবে, অন্ধকার তো কী হয়েছে! আমার একটা সাঁঝতারা তো আছেই। যাই না তার কাছে।
(ক্রমশ)

মন্তব্যসমূহ