দিন প্রতিদিন বিশেষ

 

আমেরিকার দখলদারি বিশেষ 

।। নস্ট্রাডামুসের ভবিষ্যদ্বাণী বিফলে, হতাশ ট্রাম্প ।।





কাজল ভট্টাচার্য, কলকাতা, নভেম্বর ০৬:

একেই বলে ধুন্ধুমার।

এই ট্রাম্প এগিয়ে যান তো এই পিছোন। এগোলেই হাসি আর পিছোলেই রেগে আগুন। কোনদিনই মেপেজুকে কথা বলেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। এদিনও তাই। তবে বদলে গেছে মুখের চেহারা।

জো বাইডেন অতো আবেগপ্রবণ মানুষ না। এগোন অথবা পিছোন, সংযত থাকেন। দু পক্ষেররই দাবি, তাঁরা জিতছেন। ওদিকে ভোটগণনা শুরুর পর বাইডন এগিয়ে যেতেই ট্রাম্প তাঁর নিজের চেনা কায়দায় হুমকি দিয়ে বসেন, "সুপ্রিম কোর্টে যাব। ভোটগণনায় কারচুপি হচ্ছে।" ডেমোক্রাটরা অবশ্য সেই হুমকি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, "লোকাল কোর্টেই মামলার দফারফা হয়ে যাবে। সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছনোর মতো প্রয়োজনীয় দলিল দস্তাবেজ নেই।" তবে মুখে যাই বলুক না কেন, সাবধানী ডেমোক্রাটরা ট্রাম্পের কোর্টে যাওয়ার হুমকি শুনেই খুলে ফেলেছে 'বাইডেন ফান্ড'। আবেদন জানানো হয়েছে মামলা চালাতে প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্যের।


আসলে প্রথম থেকেই পোস্টাল ব্যালটে ঘোর আপত্তি ছিলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের। কিন্তু করোনা সংক্রমণ এড়াতে এবার আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে আয়োজন করা হয়েছিল ব্যাপক সংখ্যার পোস্টাল ব্যালটের। এই আয়োজনে সায় ছিলো জো বাইডনের। পরবর্তী পর্যায়ে ভোটগণনা শুরু হতেই বিবাদ বাঁধে ছ'কোটি বাহান্ন লক্ষ পোস্টাল ব্যালট নিয়ে। ট্রাম্প দাবি করে বসেন- গণনা থামান। ওদিকে জর্জিয়ার মতো আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় ভোটগণনার কারচুপি ধরা পড়ার অভিযোগও করে রিপাবলিকানরা।


শুধু আমেরিকা না, গোটা বিশ্বের চোখ এখন আমেরিকার দিকে। চড়চড় করে চড়ছে উত্তেজনার পারদ। হোয়াইট হাউস এবার কার দখলে যায়? রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি ডেমোক্রাট জো বাইডনের। নজর কেড়েছেন ডেমোক্রাটের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিসও। ভারতীয় মূলের হ্যারিসকে ঘিরে ইন্ডিয়ান আমেরিকানদের মনে আকাশছোঁয়া উচ্চাশা। অদূর ভবিষ্যতে হোয়াইট হাউসের দখল নিতে পারেন জন্মসূত্রে ভারতীয় কমলা হ্যারিস। কারণ আমেরিকার ইতিহাসে প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্টের পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট হওয়ার নজির একাধিক। খোদ জো বাইডেন বারাক ওবামা জমানায় ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।



চেন্নাইয়ের শ্যামলা গোপালন পেশায় বায়োলজিস্ট। তাঁর মেয়ে কমলা হ্যারিস। বাবা জামাইকার ডোনাল্ড হ্যারিস অর্থনীতিবিদ। ডিভোর্সের পর কমলা আর তার বোনকে ব্ল্যাক চার্চের সদস্য করে মেয়েদের বড় করেন গোপালন। কিন্তু হ্যারিসকে নিয়ে তিনি হামেশাই মন্দিরে যেতেন। হ্যারিস তার স্মৃতিকথায় ভারতীয় মূলের উল্লেখ করেন। তবে তাঁর ভারতীয় মূলের কথা নিয়ে হ্যারিসের বারবার সোচ্চার হওয়াকে, ইন্ডিয়ান আমেরিকান ভোটারদের অনেকেই সুনজরে দেখতে চাননি। তাঁদের সাফ কথা ছিলো, ভারতীয় মূলের আমেরিকানদের ভোট পেতেই হ্যারিস তাঁদের আবেগে সুড়সুড়ি দিয়েছিলেন। তবে যে যাই বলুক হ্যারিসের স্বপ্নপূরণের সঙ্কল্পে রীতিমতো ঘটা করে পুজোআচ্চা হয়েছে তামিলনাড়ুর গ্রামেও।


ইন্ডিয়ান আমেরিকান ভোটারদের কাছে ভারতের স্বার্থরক্ষা ঠিক ততটা জরুরি ছিলো না, যতটা ছিলো তাঁদের নিজেদের স্বার্থরক্ষা। তাঁরা অনেকেই অভিবাসন নীতি, ভিসা, গ্রিন কার্ড মঞ্জুরির মতো একাধিক ইস্যুতে ট্রাম্পের ওপর খাপ্পা ছিলেন। এই ইন্ডিয়ান আমেরিকানদের কাছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দোস্তি, আদৌ গুরুত্ব পায়নি। এক্সিট পোলের সমীক্ষাতেও তা আগেভাগেই জানানো হয়েছিল। রিপোর্টের ভবিষ্যদ্বাণী ছিলো রেজিস্টার্ড প্রতি একশোজন ইন্ডিয়ান আমেরিকানদের ৭২জনই ডেমোক্রাটের দিকে। মাত্র ২২জন যাবেন রিপাবলিকানদের সঙ্গে। ভোটের ফলাফল হাতে আসা শুরু হতেই বোঝা গেছিলো, সমীক্ষার বিশ্বস্ততা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইন্ডিয়ান আমেরিকানদের ভোট টানতেই হ্যারিসকে তুরুপের তাস করেছিল ডেমোক্রাট পার্টি।


ইন্ডিয়ান আমেরিকানদের প্রথম পছন্দ ছিলো বাইডেন। তাঁর হয়ে রীতিমতো প্রচারও চালান। আমেরিকার বর্তমান আর্থ- সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই ইন্ডিয়ান আমেরিকানরা কিন্তু রীতিপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ। ২০০০ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত এঁদের জনসংখ্যা বেড়েছিল প্রায় দেড়শো শতাংশ। আজকের আমেরিকায় এঁরা দ্বিতীয় বৃহত্তম অভিবাসী গোষ্ঠি। শিক্ষাদীক্ষা, প্রভাব প্রতিপত্তিতে এই ভারতীয়রা ইতিমধ্যেই পেছনে ফেলে দিয়েছে ইহুদিদের। এঁদের অনেকেই আবার আমেরিকার প্রতিষ্ঠিত ধনকুবের। এঁদের দাবি, ভারতের মতো আমেরিকাতেও ডেমোক্রাটিক সরকার তৈরি হলে, তার সুফল ভোগ করবে ভারতও। 


উভয় কক্ষ মিলিয়ে মোট ৫৩৮ আসন। হোয়াইট হাউস দখলের জন্য দরকার ২৭০টি। ভোটগণনা চলার সময় থেকেই অনেক রাজ্যে ছোটখাটো অশান্তি দানা বাঁধে। বিক্ষুব্ধ মানুষরা রাস্তায় নেমে পড়েন। এই খবর লেখা পর্যন্ত এগিয়ে ডেমোক্রাট পার্টি। ট্রাম্পের চেহারাতেই স্পষ্ট, চাপে পড়ে গেছেন তিনি। তাঁর এই অবস্থা দেখে ক্ষোভে ফুঁসছেন ট্রাম্পের সমর্থকরা। ওদিকে ভেঙে পড়েছেন নস্ট্রাডামুস ভক্তরাও। তাঁদেরও সন্দেহ, ভোটগণনায় নিশ্চয়ই কারচুপি হচ্ছে। নইলে বাইডেন কোনও মতেই এগোতে পারতেন না। কারণ নস্ট্রাডামুস বলে গেছিলেন, এবারেও জয় ট্রাম্পের। বিফলে যেতে বসেছে ভারতের ট্রাম্প প্রেমীদের পুজোআচ্চাও। 


এখন শুধুই অপেক্ষা। বাইডেন টার্গেট ২৭০ ছুঁতে চললেও শেষ মুহূর্তের কোনও চমক অপেক্ষা করে নেই তো? কী বলেন ট্রাম্প? অঙ্কের হিসেবে অবশ্য সেরকম সম্ভাবনা ক্রমেই ধুসর থেকে ধুসরতম হয়ে চলেছে।

মন্তব্যসমূহ