করোনা আবহে গঙ্গা সাগর মেলা সেই অর্থে এবার অনেকটাই ম্লান
( এই বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গঙ্গা সাগর মেলা। এবছর করোনা অতিমারিতে কেমন হচ্ছে এই মেলা । সেটা নিয়েই আলোকপাত করলেন সৌমাগ্নি দাস , এ বছরের মোক্ষস্নানের সময় , ১৪ জানুয়ারি , সকাল ৮.৩০ থেকে বিকেল ৫.৪৬ পর্যন্ত। তবে মনে করলে সূর্য ওঠার সন্ধিক্ষণেও স্নান করতে পারেন )
গঙ্গাসাগর মেলা হল কুম্ভমেলার পরে , দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দু মেলা । সাগর দ্বীপের
দক্ষিণে হুগলি নদী বঙ্গোপসাগরে যেখানে পতিত
হচ্ছে। এই স্থানটিকেই হিন্দুদের কাছে পবিত্র তীর্থ বলে মনে করেন সবাই । তাই প্রতিবছর মকর সংক্রান্তির
দিন এখানে বহু লোক তীর্থস্নান করতে আসেন; তবে
বিহার-উত্তরপ্রদেশ থেকে আগত অবাঙালি পুণ্যার্থীদের ভিড়ই হয় সর্বাধিক। গুজরাট , মহারাষ্ট্র ,
রাজস্থানের মানুষের কাছেও মুক্তির পুন্যভূমি এই সাগরতট।
গঙ্গা সাগর মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল । ২০২১ সালের কোরোনা অতিমারীকে মাথায় রেখে এবারে বিশেষ আয়োজন। মাননীয় জেলাশাসক এবং বিশিষ্ট আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিতিতে প্রদীপ জ্বালিয়ে গঙ্গাসাগর মেলার উদ্বোধন করা হয়। মেলার সতর্কতার জন্য বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা এবং পূর্নাথীদের সাহায্যের জন্য প্রশাসনের আয়োজন করা হয়েছে।
করোনা
অতিমারীর ,কারণে এই ২০২১ সালে , সেই মত মেলার আয়োজন হচ্ছে না। তবে , এবছর
হরিদ্বারে কুম্ভ মেলা থাকায় , এই গঙ্গা সাগর মেলার ওপর চাপ বেশ খানিক টা কম থাকবে
বলেই মনে করছে সবাই।
এবারের গঙ্গা সাগর মেলায় যারা যেতে চান , তাঁদের
জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন বেশ খানিকটা কড়া নজর দারি রাখার ব্যবস্থা
করেছে। যেমন প্রত্যেক পুন্যার্থির করোনা টেস্ট এর একটা বিষয় থাকছে, তেমনি
প্রশাসনের তরফ থেকে তৈরি করা হচ্ছে কয়েক লাখ মাস্ক, যেটা কিনা দেওয়া হবে প্রত্যেক
পুন্যার্থীকে। যানবাহনের ক্ষেত্রেও থাকছে কড়া করোনা স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার
প্রক্রিয়া। কপিল মুনির মন্দিরে থাকছে না প্রবেশাধিকার। মকর সঙ্ক্রান্তিতে জেলা
প্রশাসন ভার্চুয়াল স্নানের ব্যবস্থা করছে। অন লাইনে পুজো দেবার ব্যবস্থাও থাকছে।
পরিবেশগত
ভাবে গঙ্গা সাগর মেলা প্রাঙ্গনকে ইতিমধ্যেই যত রকম ভাবে পারা যায় , জীবাণু মুক্ত
করার কাজ শুরু হয়ে গেছে। এছাড়াও প্রত্যেকটি প্রবেশ পথে থাকছে স্বয়ংক্রিয়
স্যানিটাইজেসন ব্যবস্থা। যদিও এবার মেলার আয়োজন হচ্ছেনা , তবুও সব রকম সতর্কতা
নিয়ে রাখতে কসুর করছে না প্রশাসন। কলকাতা থেকে এই সময়ে চলবে করোনা ও ডেঙ্গু বিষয়ে
সচেতনতা। সে রকমই যানবাহনের ক্ষেত্রেও থাকবে নিয়ন্ত্রন।
২০২০
সালের গঙ্গা সাগর মেলায় রেকর্ড সংখ্যক পুন্যার্থি হয়েছিল, ৫৫ লক্ষ। এই প্রাঙ্গনেই
আগামী দিনের অতিথি , অর্থাৎ নব জাতকের জন্ম হয়েছিল ৪০ জনের। প্রসঙ্গতঃ
অবাঙ্গালীদের কাছে একটি মিথ আছে , এই সাগরে এলেই পাওয়া যাবে আগামী প্রজন্মকে, যে
কিনা শত সহস্র পাপ থেকে মুক্তি দেবে সবাইকে। অনেকে আবার সন্তানে দীর্ঘায়ু কামনা
করে এই গঙ্গায় উতসর্গ করেন তাঁর সন্তনকে।
এভাবেই
ভারতীয় সংস্কৃতির ও ঐতিহ্যের দিক হয়ে উঠেছে গঙ্গাসাগর মেলা।
এবারের
মেলা আয়োজনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন মেদিনীপুর, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগণা সমেত এক বৃহৎ
অংশের কারিগরেররা। কেননা , তাঁদের সারা বছরের তৈরি হস্ত শিল্পের সম্ভার এই মেলাতেই
পুরোটাই বিক্রি হয়ে যায়, আবার আছে খাবারের দোকান , পুজোর সামগ্রীর দোকান , এমনকি
এখানে আসা মানুষ জনের জন্য যারা খাবার প্রস্তুত করেন বা খাবার তৈরির উপকরণ সরবরাহ
করেন । তাঁদের মাথায় হাত পড়ে গেছে। এর একমাত্র কারণ এবছর মেলার আয়োজন সেই মত
হচ্ছেই না।
এবছরের গঙ্গা সাগর মেলার শুরুর মুহূর্ত একবার দেখে নেওয়া যাক
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন