দল বদলের ঢেউ এর আছড়ে পড়ে এখন দ্বিতীয় তৃণমূল হচ্ছে বিজেপি , এটা কি ভাবে নেবেন ভোটার ? কাজল ভট্টাচার্যের কলমে তার প্রতিফলন

 



।। ভোটারের মনবদল করতে পারবেতো নব্য বিজেপি ? ।।




কাজল ভট্টাচার্য, কলকাতা, ২ ফেব্রুয়ারিঃ 

তৃণমূলের সংশোধিত সংস্করণ হয়ে যাচ্ছে নাতো বঙ্গ বিজেপি?
শিবির বদল হলো, কিন্তু জার্সি পাল্টানো মুখগুলো কিন্তু সেই পুরনো।

দিলীপ ঘোষকে বাদ দিলে, বঙ্গ বিজেপির প্রথম সারীর মুখ বলতে কিন্তু এখন দলছুট তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারাই। "আপদ বিদায়!" মন্তব্য জোড়া ফুল শিবিরের। গদ্দাররা দল ছেড়ে যাচ্ছেন। ওদিকে হাটখোলা পদ্ম শিবিরের দরজা। দলছুটরা ঢুকছেন আর বলছেন, মানুষের জন্য কাজ করতেই শিবির বদল।

ধন্যবাদ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। তিনি অন্তত কোনও লুকোছাপা করেননি। তিনি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনী কুরুক্ষেত্রের এও এক রণকৌশল। বিপক্ষকে দুর্বল করে দেওয়া। সেই সঙ্গে নিজের শক্তি বাড়ানো। কিন্তু এই শক্তি বাড়ানোর কৌশলটা যদি হয় বিপক্ষের সৈন্যসামন্ত দিয়ে, তখন কিছু আশঙ্কার অবকাশ থেকে যায় বৈকি। তবে আপাতত বাস্তব এটাই, বঙ্গ বিজেপির কুরুক্ষেত্র অভিযান শুরু হয়েছে, তৃণমূল দলছুটদের কাঁধে বন্দুক রেখেই।


একুশে নির্বাচনী কুরুক্ষেত্রের রণে বঙ্গ বিজেপির সেনাপতি দিলীপ ঘোষ। আছেন এরাজ্যে পদ্ম শিবিরের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। ভোট ময়দানে দিলীপ ঘোষ কীভাবে মাঠ সাজালেন? ফরোয়ার্ড, সেন্টার, স্ট্রাইক, হাফব্যাক ফুলব্যাক সবই তৃণমূলের দলছুট খেলোয়াড়রা। সবচেয়ে এগিয়ে খেলছেন শুভেন্দু অধিকারী। এবার সম্ভবত তাঁর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মেলাবেন রাজীব চট্টোপাধ্যায়। শুভেন্দু যেমন রাজনীতিতে চৌখস, তেমন সাফসুতরো ইমেজের জন্য বেশ জনপ্রিয় রাজীব। বাস্তবে শুভেন্দু বা রাজীবের মাপের জননেতা বঙ্গ বিজেপি আজও একটিও তৈরি করতে পারেনি। এরপরের লাইনে থাকছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মতো রাজনৈতিক অভিজ্ঞরা। এঁরা প্রত্যেকেই সরাসরি ময়দানে নেমে লড়াই করার ক্ষমতা রাখেন। 

তবে এই নয়া দলছুটরা যখন ছিলেন না, তখনও কিন্তু কামাল করে দেখিয়েছিল পদ্ম শিবির। এক লপ্তে আঠারোটি লোকসভা আসন দখল করে ভিত নড়িয়ে দিয়েছিল বিরোধী শিবিরের। দিল্লির বিজেপি শীর্ষ মহলের নেতারা সেই কৃতিত্বের দাবিদার বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন প্রাক্তন তৃণমূল শিবিরের চাণক্য মুকুল রায়কে। ওদিকে বিজেপিতে যোগ দিয়েই ক্ষমতার বিচারে আরও কুলীন হয়েছিলেন অর্জুন সিং। ছিলেন তৃণমূলের ভাটপাড়ার বিধায়ক, বিজেপির টিকিটে জিতে হলেন ব্যারাকপুরের সাংসদ। বলা যায় পদোন্নতি হলো। 


ভাড়াটে সৈন্য দিয়েই বঙ্গ দখলের স্বপ্ন দেখছে বিজেপি। এমনটাই অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেস সমেত রাজ্যের অন্যান্য বিজেপি বিরোধী শিবিরগুলির। বিরোধী শিবিরের ওই অভিযোগকে আরও উসকে দিয়ে বিজয়বর্গীয় ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, জোড়াফুল শিবিরের একচল্লিশজন বিধায়ক এক পা বাড়িয়েই আছেন বিজেপি'র দিকে। ওদিকে শুভেন্দুর হুঙ্কার এবার তীব্রতর হতে চলেছে রাজীবের মতো এক পুরনো জনপ্রিয় সতীর্থকে সঙ্গে পেয়ে। যদিও ওই হুমকিকে এখনও ফাঁকা আওয়াজ বলে চলেছে জোড়া ফুল শিবির। তাঁদের দাবি দলভাঙার চক্রান্ত যতো তীব্র হচ্ছে, ততোই একরোখা মনোভাব নিয়ে ঘটনা মোকাবিলায় নেমে পড়ছেন দলের সাচ্চা কর্মীরা।

প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত ক্রিয়া আছে। পদার্থবিদ্যার এই নিয়ম রাজনীতিতেও খাটে কিনা জানা নেই। তবে কিছুদিন আগে সেরকমই এক ঘটনার আভাস দিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি দাবি করেছিলেন, বিজেপির ছ- সাতজন সাংসদ, তৃণমূলে যোগ দিতে চেয়েছেন। তবে তারজন্য অপেক্ষা করতে হবে মে মাস পর্যন্ত। এছাড়া তৃণমূল ছেড়ে যে বিধায়করা বিজেপিতে গিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই নাকি এখন দলে ফিরতে চাইছেন। এমন ঘটনা যে আগে ঘটেনি তাও নয়। মাত্র ছদিন বিজেপিতে কাটিয়েই নিজেদের পুরনো শিবিরে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন, নদিয়ার চাকদা বনমালিপাড়ার প্রায় একশোজন তৃণমূল কর্মী, সমর্থক। 

দলভারী নাহয় হলো। কিন্তু এখনও প্রাক নির্বাচনী রণকৌশলে কমপক্ষে একটি জায়গায়, তৃণমূলকে কিছুতেই টেক্কা দিতে পারছে না বিজেপি। তা হলো, বঙ্গ বিজেপির মুখ কে? বাংলা বাঙালি যাঁদের বিজেপি'র মুখ হিসেবে চিনতো, আপাতত তাঁরা পেছনের সারীতে। তাহলে কি নব্য বিজেপি থেকেই কাউকে আগামিদিনে বেছে নেবেন দলের শীর্ষ নেতারা? নাকি সেখানে অপেক্ষা করছে কোনও চমক।

শুরু থেকেই বাংলার মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ দেখে। রাজ্যের ক্ষমতায় আসার বহুদিন আগে থেকেই চেনা এক মুখ। বিজেপির বেলায় হলো ঠিক উল্টোটা। আগে বাংলার মানুষ বিজেপি বলতে বুঝতো, তপন শিকদার, তথাগত রায়দের। এদের মধ্যে প্রথমজন প্রয়াত, দ্বিতীয়জন বর্ষীয়ান আর ভোটযুদ্ধেও তিনি নেই। এছাড়াও ছিলেন রাহুল সিনহা, শমীক ভট্টাচার্যরা। দিলীপ ঘোষকে এনে সরানো হয়েছে রাহুলকে। এখন আর রাহুলের মুখ তেমনভাবে চোখে পড়ে না। আর রসালো বাকপটু শমীককে কদাচিত দেখা যায় জনসভা, টিভির ডিবেট বা সাংবাদিক সম্মেলন করতে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে দমদম কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ের কাছে পরাজিত হয়ে, আপাতত তিনি দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ওদিকে আবার দিলীপ ঘোষকে বাংলার মুখ বলে দলের ভেতরেই চাপে পড়ে গেছিলেন সৌমিত্র খাঁ। 

অবস্থাটা যখন এরকম, তখন এক আশঙ্কাকে কি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায়?
তৃণমূল বিরোধী শিবিরগুলির দাবি, এবার ভোট হতে চলেছে প্রতিষ্ঠান বা শাসক বিরোধী। ওদিকে বিজেপিও তার প্রচারে তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যর্থতার পাহাড় সাজাতে ব্যস্ত। সবমিলিয়ে এবার যদি বাস্তবেই শাসকদল বিরোধী ভোট হয়, তার আঁচের ছোঁয়া থেকে বাঁচতে পারবেতো পদ্ম শিবির? খাতাকলমে বিজেপি বর্তমানে শাসক বিরোধী শিবির হলেও, সেই শিবিরে শাসক শিবিরের দলছুট মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কদেরই রমরমা। বিরোধীরা যাকে কটাক্ষ করে বলছেন নব্য বিজেপি। এই নব্য বিজেপিদের মুখগুলিকে মানুষ প্রায় গত এক দশক ধরে শাসকদলের মুখ বলেই চিনে এসছেন। বিজেপিকে ভোট দেওয়া মানে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তনীদের ভোট দেওয়া বলে ভেবে বসবেন নাতো ভোটাররা? এই সমীকরণের আন্দাজ করেই সম্ভবত আশার প্রহর গুনছে বাম কংগ্রেস জোট।





মন্তব্যসমূহ