নিমতিতা ষ্টেশনে বোমার আঘাতে মন্ত্রী জাকির হোসেনকে গুরুতর আহত মন্ত্রী জাকির হোসেনকে আনা হল কলকাতায় , আহত মন্ত্রীকে দেখতে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী , তুললেন গভীর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
বিশেষ প্রতিনিধি , কলকাতা ও মুর্শিদাবাদ , ১৮ ফেব্রুয়ারিঃ বোমায় আক্রান্ত শ্রম প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতায় নিয়ে আসা হল কলকাতার এস এস কে এম হাসপাতালে। সঙ্গে আনা হল আরো ১৪ জনকে। এই ঘটনায় মোট আহতের সংখ্যা ৩০ ছাড়াতে পাড়ে। এদিকে মন্ত্রীর অবস্থা আশঙ্কা জনক । তাঁর হাত ও পা এর বেশ অনেকটা অংশ আঘাতে গুরুতর জখম। এই ঘটনাকে ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে চাপান উতোর শুরু হয়ে গেছে। কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দলের বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য নিমতিতা স্টেশনে ট্রেন ধরতে আসছিলেন। এমন সময়েই বোমা মারা হল শ্রম প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের উপর। শুধু জাকির হোসেনই নয়, বোমার আঘাতে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ১৪ জন। ঘটনায় মন্ত্রীর বাঁ হাত, বা পা গুরুতর আহত হয়েছে। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মুর্শিদাবাদ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । জাকিরের ঘনিষ্ঠরা এই হিংস্রতায় স্তম্ভিত। কাঁদতে কাঁদতে জাকিরের এক অনুগামী বলেন,"ওই লোকটা কোনও ভুল কথা বলেনি, কারও ক্ষতি চায়নি। আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।" তৃণমূলের স্পষ্ট অভিযোগ, তৃণমূলকে রুখতেই এই আক্রমণ। কুনাল ঘোষ বলেন,"উন্নয়নমূলক কাজে প্রতিপক্ষের অপেক্ষা। তৃণমূলকে ভাঙার কাজ যারা করছে সেই কংগ্রেস বিজেপি বামপন্থীরা।" যদিও এই অভিযোগ মানতে রাজি নন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর কথায়, "সমাজবিরোধীরা রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। নির্বাচন আসছে টেনশন বাড়ছ। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে। আজ শুভেন্দু অধিকারীর ওপরই হামলা হয়েছে।" আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অধীর চৌধুরীও। ঠিক কী ভাবে দুষ্কৃতীরা আক্রমণ করল? প্রাথমিক তথ্য বলছে, আগামী কাল নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বুথ কর্মীদের নিয়ে নেতাজী ইন্ডোরে সম্মেলন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেখানে যোগ দেওয়ার টিকিট আগেভাগেই কাটা ছিল জাকির হোসেন-সহ তাঁর অনুগামীদের।
তাই এদিন ট্রেন ধরতেই অনুগামীদের নিয়ে নিমতিতার দিকে রওনা হন জাকির হোসেন। গাড়ি থেকে নেমে স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন জাকির, এমন সময়েই হামলা করেন দুষ্কৃতীরা। রীতিমতো জনবহুল এলাকায় এই হামলায় ব্যবসায়ীরা ভয়ে দোকান বন্ধ করে দিতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, জাকিরকে হামলা সুপরিকল্পিত। কারণ জাকিরের সঙ্গে আজ খুব বেশি নিরাপত্তারক্ষীও ছিলেন না। জাকির হোসেনকে কারা কেন আক্রমণ তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মুর্শিদাবাদে দলের মুখ আবু তাহেরর সঙ্গে দলের কিছু সদস্যের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তৃণমূল বহিস্কার করেছে ডাকসাইটে নেতা মোশারফ হোসেনকে। তিনি যাচ্ছেন কংগ্রেসে। দল ছাড়ছেন আরেক দাপুটে নেতা নীলরতন আঢ্যও। এদিন মোশারেফকে বহিস্কারের কাজ জাকিরই করেছিলেন। কাজেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল । ঠিক যেমন উড়িয়ে দেওয়া যায় না কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতী আক্রমণের সম্ভাবনার কথাও। তবে দলমত নির্বিশেষে জাকির হোসেনকে অজাতশত্রু বলে মনে করেন বেশির ভাগ নেতাই। কাজেই তাঁর উপর হামলায় কার্যতই স্তম্ভিত অনেকেই।
দিন কয়েক আগেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবাবি সভা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন জাকির হোসেন। জেলায় তাঁর দলের শক্তি প্রমাণ করেছিল সেই সভা। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, জাকির আহত হলে বা ক্ষতিগ্রস্থ হলে দলের আত্মবিশ্বাসে ভাঙন ধরবে, এমনটা ধরে নিয়েও হামলার ছক করা হতে পারে।
আজ তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বেরিয়ে এসে বলেন , এই ঘটনার পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র আছে। আর জাকির হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে দেখতে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছেন পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন