আজ কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো

কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো বিশেষ 

আজ কোজাগরী লক্ষ্মী পুজায় , মা পূজিতা হচ্ছেন ছয়টি রূপে  

সৌমাগ্নি দাস , কলকাতা , ২০ অক্টোবরঃ আজ কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। বাংলার প্রতি ঘরে পূজিতা হচ্ছেন তিনি। এবছর মতান্তর ছিল মঙ্গল না বুধ । কবে হবে পুজো। বাঙ্গালী অবশ্য দুদিন ধরেই পালন করছেন মা লক্ষ্মীর আরাধনা। ঘরে ঘরে সজ্জিত হয়েছে আলপনায়। নারকেল নাড়ু , আর খিচুরি ভোগের গন্ধে পরিবেশ একেবারে পাল্টে গেছে। শাঁখ আর উলুদ্ধনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত। মা আসছেন সবার ঘরে । তাই তাঁর আহ্বান যে ,যেভাবে পারছেন করছেন।

বাংলায় দুর্গোৎসবের পর আশ্বিন মাসের শেষে পূর্ণিমা তিথিতে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার আরাধনা করা হয়। বাঙালি হিন্দুর ঘরে ঘরে এক চিরন্তন প্রার্থনা। প্রায় প্রতি ঘরে ঘরেই দেবী লক্ষ্মীর পুজো হয়ে থাকে। লক্ষ্মী হলেন ধন সম্পত্তির দেবী। ধন সম্পদের আশায় ঘরে ঘরে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা হয়ে থাকে।

কোজাগরী শব্দের অর্থ: 'কোজাগরী' শব্দটির উৎপত্তি 'কো জাগতী' অর্থাৎ 'কে জেগে আছ' কথাটি থেকে। বলা হয়, 'যার কিছু (সম্পত্তি) নেই সে পাওয়ার আশায় জাগে, আর 'যার আছে (সম্পত্তি) যে না হারানোর আশায় জাগে'। আর সারারাত জেগে লক্ষ্মীর আরাধনা করাই এই পুজোর বিশেষ আচার। কথিত আছে কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমার দিন দেবী রাত্রে খোঁজ নেন - কে জেগে আছেন ? যে জেগে অক্ষক্রীড়া করে , লক্ষ্মী তাঁকে ধন সম্পদ দান করেন।
"নিশীথে বরদা লক্ষ্মীঃ জাগরত্তীতিভাষিণী।
বাংলায় নানা ভাবে লক্ষ্মী দেবীর কল্পনা করে
১) মূর্তিরূপে : মাটির দিয়ে তৈরী ছাঁচে বা কাঠামো তৈরি করে তাতে দেবী মূর্তি তৈরি করে পূজা করা হয়।
২) কলার বেড়ে লক্ষ্মীর পদচিহ্ন রূপে : কলার বাকলকে গোল করে নারকেলের নতুন কাঠি দিয়ে আটকানো হয়। তাতে সিঁদুর দিয়ে বাঙালি স্বস্তিক চিহ্ন আঁকা হয়। কলার বাকল দিয়ে তৈরী এই চোঙাকৃতি ভিতরে নিচুনি রাখা হয়। কাঠের আসনের উপরে লক্ষ্মীর পা অঙ্কিত আলপনার উপরে ৯টি চোঙা রাখা হয়। এই ৯টি বাকলের মধ্যে পঞ্চশস্য দেওয়া হয় সর্বশেষে শিস যুক্ত নারকেল রেখে লাল চেলি দিয়ে ঢেকে বউ সাজিয়ে লক্ষ্মী কল্পনা করা হয়।
৩) সপ্ততরী রূপে : নবপত্রিকা বা কলার পেটোর তৈরি নৌকা এই পূজার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই নৌকা এখনও বহু গৃহস্থেই তৈরি হয়ে থাকে। তবে বাজারেও এখন কিনতে পাওয়া যায় কলার পেটো। একে সপ্ততরী বলা হয়। এই তরীকে বাণিজ্যের নৌকা হিসাবে ধরা হয়। তাতে অনকেই টাকা -পয়সা, চাল, ডাল, হরিতকি, কড়ি, হলুদ সাজিয়ে রাখেন।
৪) লক্ষ্মীর মুখ সমন্বিত পোড়া মাটির ঘট: লক্ষ্মীর মুখ সমন্বিত পোড়া মাটির ঘটে চাল বা কখনো কখনো জল ভরে সেটিকে লক্ষ্মী কল্পনা করে পূজা করা হয়।
৫) পট চিত্র রূপে সরায়ঃ অনেক বাড়িতেই পূর্ববঙ্গীয় রীতি মেনে সরার পটচিত্রে পুজো করা হয়। এই সরাতে লক্ষ্মী, জয়া-বিজয়া সহ কয়েকটি বিশেষ পুতুলকে চিত্রায়িত করা হয়। লক্ষ্মী সরাও হয় নানা রকম, যেমন ঢাকাই সরা, ফরিদপুরি সরা, সুরেশ্বরী সরা এবং শান্তিপুরী সরা। নদিয়া জেলার তাহেরপুর, নবদ্বীপ এবং উত্তর চব্বিশ পরগনার বিভিন্ন স্থানে লক্ষ্মীসরা আঁকা হয়। তবে অঞ্চল ভেদে লক্ষ্মী সরায় তিন, পাঁচ, সাত পুতুল আঁকা হয়। এতে থাকে লক্ষ্মী, জয়া বিজয়া সহ লক্ষ্মী, রাধাকৃষ্ণ, সপরিবার দুর্গা ইত্যাদি। ফরিদপুরের সরায় দেবদেবীরা সাধারণত একটি চৌখুপির মধ্যে থাকেন। আবার সুরেশ্বরী সরায় উপরের অংশে মহিষমর্দিনী আঁকা হয় আর নীচের দিকে থাকেন সবাহন লক্ষ্মী।
এছাড়াও লক্ষ্মী হচ্ছেন শস্যের দেবী , তাই কোন কোন বাড়িতে নতুন ধানের ছড়া , বা কুনকেতে রাখা নতুন ধান কে লক্ষ্মী রূপে পুজো করা হয় এই দিনে ।
( তথ্য সৌজন্যঃ বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থ )

মন্তব্যসমূহ