বেহালার দিন প্রতিদিন বিশেষ সত্যজিৎ জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলী - তপেনতর্পন ও ফিরেদেখা

 তপেন চট্টোপাধ্যায় বিশেষ 


তপেনতর্পন  ও ফিরেদেখা 

  


    
 
পার্থ সারথি সরকার : 

 
  চলছে সত্যজিৎ রায়ের জন্মশত বর্ষ । সেই সুত্র ধরেই বরেণ্য পরিচালকের যারা মানস পুত্র ছিলেন , তাঁদের মধ্যে গুপি গাইন ,বাঘা বাইনের সেই কিংবদন্তী চরিত্র  " গুপী " মানে  তপেন চট্টোপাধ‍্যায়ের  অনেক অজানা কথা )
 ছোটবেলায় বার্ষিক পরিক্ষার পর 
বাবা- মা এর সঙ্গে দেখেছিলাম বিশ্ব বরেণ‍্য পরিচালক সত‍্যজিৎ রায় এর তৈরী সিনেমা " গুপী গাইন বাঘা বাইন "  , শিশুমনে অনেক তৃপ্তি আর কল্পনার ফানুষ ওড়াতে ওড়াতে সেদিন সিনেমা হল থেকে বের হয়েছিলাম । কল্পনার উড়োজাহাজ বহুদিন  আমাদের মনে ভেসে ছিল । সিনেমায় দেখা গুপী-বাঘার জুতো জোড়া বেশ মনে ধরেছিল , তাই বাবা বাড়ি থাকলেই আমি আর ভাই বাবার বড় জুতোয় পা গলিয়ে মাঝে মাঝেই হাতে হাত দিয়ে তালি দিতাম । যদি ভূতের বরে আমরা কল্পনার রাজ‍্যে যেতে পারি । আর যেতে না পাড়ার জন‍্য , খালি নিজেদেরকেই দোষ দিতাম ...নিশ্চয় মন্ত্রটা ভুলে গেছি ...হতাশ হতাম , দুঃখ পেতাম -- সেই আবার পড়তে বসতে হবে , বকুনি খেতে হবে ....
১৯৮৮ সাল , তখন আমি  " সিনে এ্যাডভেঞ্চারে" পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি ।
 আমার সম্পাদক , শ্রী অতনু পাল আমায় ডেকে বললেন - বসো একটা সুখবর দিই ।
আমি সাগ্ৰহে জিজ্ঞাসা করলাম কি ?
উনি বললেন , তপেনদা আমাদের বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি হিসাবে জয়েন করছেন । 
আমি বললাম - তপেন চট্টোপাধ‍্যায় ? যিনি অমুক দৈনিকে বিজ্ঞাপন দেখেন ?
উনি বললেন - হ‍্যাঁ , ওখানে ছেড়ে দেবেন , আমাদের সাথেই থাকবেন কথা দিয়েছেন ।
যেদিন তপেন চট্টোপাধ্যায় আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন , সেদিন সকলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন আমাদের সম্পাদক । 
কিন্তু প্রথম দেখায় আমার খুব একটা ভালো লাগেনি ওঁনাকে । কারণ পরিচিত হবার সময় , আমার দিকে একবারও না তাকিয়ে শুধু হুম বললেন ..
পরে সম্পাদক কে আমি বলেছিলাম , ওঁনার বেশ অহংকার আছে মনে হলো ..
সম্পাদক , হাসতে হাসতে বললেন - তোমার ধারণা ভুল ।
বিজ্ঞাপন নিয়ে অফিসে  আলোচনা চলাকালীন , দু-একটা কথা বলেছিলাম , যা তপেন বাবুর পছন্দ হয় ও আমার পিঠে হাত দিয়ে বলেছিলেন ..বাঃ 
ঐ ৮৮সালেই আমার তপেনদার সঙ্গে পরিচয় । তপেন চট্টোপাধ্যায় সমন্ধে প্রথম দিনের ধারণা অচিরেই মুছে গেল ,আর কিছুদিনের মধ‍্যেই ঘনিষ্টতা । আমাকে কেন জানিনা খুব ভাল বাসতেন । মাঝে মাঝেই ওনার গাড়িতে করে আমাকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতেন । সবটাই যদিও কাজ কেন্দ্রিক ‌ । একটা কথা বলা হয়নি , তপেনদার একটা এ্যম্বাসেডর ছিল এবং নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করতেন । 
অফিসে এলেই সম্পাদকের সঙ্গে কথা শেষ করেই আমাকে খুঁজতেন আর রোজ মজার মজার জোকস্ বলতেন ।তপেনদার বলা ও আমার শোনা  জোকস্ এর সংখ‍্যা খুব কম করে তিনশর ও বেশী ।  কিন্তু ক্ষমা করবেন তার একটা জোকস্ ও আমি এখানে উল্লেখ করতে পারছি না  ,  কারণ সেগুলো বেশিরভাগ শ্লীল ছিল না ।
এক বিরল গুনের অধিকারী ছিলেন তপেন চট্টোপাধ‍্যায় -- সদা হাস‍্যময় , মিশুকে গুনের জন‍্য  মানুষের সঙ্গে অকপটে মিশে যেতে পারতেন । তাঁর পরিচিতির গন্ডি ছিল বিশাল , সকলের সঙ্গে ছিল এক মধুর সম্পর্ক ।
একবার একটা ফাংশানে গিয়েছিলাম তপেনদার সঙ্গী হিসাবে । ফাংশানে যাওয়া বিশেষ পছন্দ ছিল না । কোন এক বিজ্ঞাপন সংস্থার অনুরোধে , উনি রাজি হয়েছিলেন । উদ‍্যক্তারা গাড়ি দিতে চেয়েছিলেন , কিন্তু তপেনদা রাজি হননি । বলে ছিলেন , আমি নিজের গাড়ি নিয়েই যাব , তবে তেল ভরে দেবে ‌ । আমাকে বলেছিলেন , আলো( তপেনদার স্ত্রী) যেন না জানে ও এসব পছন্দ করে না । আমি বললাম আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করবে ? 
তপেনদা - তুমি তো বাড়িতে আসো , তাই কেলাতে কেলাতে হয়তো বললে আমি আর তপেনদা গিয়েছিলাম ..তাহলে তোমার কপালে দুঃখ আছে বলে দিলাম । 
আমি বললাম , ঠিক আছে বলবো না । বাড়িতে কি বলেছেন ?


তপেনদা - শুটিং এর কাজ আছে । 
যাই হোক তপেনদার গাড়িতেই কালনার দিকে রওনা হলাম ।  শক্তিগড় আসতে গাড়ি থেকে নেমে,  আমি ডিম -পাঁউরুটি আর চা খেলাম । তপেনদা লিকার চা না পেয়ে দুটো সিঙারা আর ভেজিটেবিল নিল । একটু পরেই মুখ বিকৃত করে মুখ থেকে চিবোনো ভেজিটেবিল বার করতে দেখি আধ-খাওয়া বিড়ি শুদ্ধ ই চিবিয়েছে । আমি বুজলাম , এবার কেলো । তপেনদা উঠে চিৎকার চেঁচামেচি করতে ওরাও তর্ক করা শুরু করলো । কিছু লোক চিনতে পেরে , দোকনদারের পৈতৃক নাম ভোলাতে সচেষ্ট হল ।  আর কিছু লোক তপেনদাকে ঘিরে ধরলো , অটোগ্ৰাফ চাইতে থাকলো  তপেনদা  তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে আমাকে ডাকলো । আমি গাড়িতে উঠতেই , দোকানের মালিক ছুটে এসে তপেনদার হাত ধরে খুব করুন সূরে ক্ষমা চাইলো । 
 তপেনদা -  আপনাকে ক্ষমা করতে পারি , কিন্তু একটা শর্ত আছে । আমার গাড়িতে যে বসে আছে , সে একজন সাংবাদিক । কাল যদি ও কলকাতায় গিয়ে এটা নিয়ে লেখে - তাহলে আপনার দোকানের সুনাম কোথায় যাবে ভেবেছেন ? 
দোকানদার কাঁচুমাচু করে বললেন , কি শর্ত ? 
তপেনদা - যা হবার তা তো হয়েই গেছে ,আপনি আপনার ঐ কর্মচারীকে কোন শাস্তি দিতে পারবেন না ,ও ইচ্ছা করে করেনি এটা আমি বুঝি ...
দোকানদার ঘাড় নাড়লেন  ।
আমি তপেনদার মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে  , এক অন‍্য অচেনা "গুপী "কে আবিষ্কার করলাম । আমি কথা দিয়েছিলাম , এই ব‍্যাপারটা আর কোথাও বলবো না । আজ এতো বছর পর , অবাধ‍্য হলাম -- নাহলে যে, একজন প্রকৃত  মানুষ তপেনদার আসল পরিচয়টা যে অনেকের কাছে অজানা হয়ে যাবে । 
বর্ধমানের ঢোকার মুখেই  কয়েকজনকর্মকর্তা  আমাদের জন‍্য অপেক্ষা করছিলেন । আমাদের গাড়িতে তেল ভরিয়ে আমরা কাটোয়া গিয়ে যখন পৌঁছালাম তখন প্রায় দশটা । দেরী হবার কারণ , রাস্তা । তখন , এখনকার মতো ভালো রাস্তা ছিল না ।  
মঞ্চে তপেনদার পাশে আমার ও জায়গা হয়েছে । তপেনদা " গুপি বাঘা" র কিছু ডায়ালগ ও একটা গানের কয়েকটি লাইন গাইলেন । 
দর্শকদের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো । তপেনদার আলোয় আলোকিত হলাম আমিও , উষ্ণতার ভাগে ভাগীদার  হয়ে বেশ গর্বিত হবার সুযোগ হল ..
অনুষ্টান শেষ করে কলকাতা অভিমুখে  আমরা রওনা দিলাম । আমি কর্মকর্তাদের দেওয়া খাবার খেলেও তপেনদা খাননি । খাবার পর বেশ ঘুম ঘুম পাচ্ছিল , আমি তপেনদাকে বললাম পিঠে একটু ব‍্যাথা করছে , আমি একটু পেছনের সীটে  হেলান দেব ? 
তপেনদা সম্মতি দিতে , আমি পিছনে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । 
বর্ধমানে ঢোকার আগেই গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়লে আমার ঘুম ভেঙে যায় , তাকিয়ে দেখি , তপেনদা গাড়ি থেকে নেমে পান খাচ্ছে । আমি বললাম কি হলো ...গাড়ি দাঁড় করালেন !!
তপেনদা আমার দিকে তাকিয়ে - বোকা... ... আমি তোর ড্রাইভার , যে আমি গাড়ি চালাবো আর পিছনে বসে ঘুমাবি । 



আমার ঘুম ছুটে গিয়ে হা..হা..হা করে হেসে ফেললাম । 
তপেনদা - একটা ধাবা দেখে দাঁড়াতে হবে  , খিদে পেয়েছে । কাল সকাল সকাল বাড়ি ঢুকতে হবে , আলোর ইচ্ছে মতো বাজার করতেও হবে । 
আমি - কেন ? 
কাল আমার জন্মদিন ..
আমি - ও তাই ! ৩রা সেপ্টেম্বর আপনার বার্থডে ? জানতাম না তো ..
তপেনদা - তোকে সব জানাতে হবে ? আমার বিয়ের দিন , বৌকে জড়িয়ে ধরার দিন , বৌকে ...দিন, ফুলশয‍্যার দিন ...
আমি -- আমি হাসতে হাসতে , মুখে কিছু আপনার আটকায় না ? 
তপেনদা - আমি যাকে ভালবাসি , তারসঙ্গে বন্ধুর মতো মিশি ..
আমি - তপেনদা , আপনার জন্ম কত সালে ? 
তপেনদা - হাসতে হাসতে , কেন বলবো ? 
আমি - আপনার জীবনের কিছু কথা শোনান না । এরকম ভাবে তো সবসময় আপনাকে  পাইনা ।
তপেনদা - বলবো , সবটা নয় । আমি আমার একটা আত্মজীবনী লিখবো ‌ইচ্ছে আছে । তবে কিছুটা বললেও তোকে ঐ ধাবার বিল কিন্ত দিতে হবে ‌। 
আমি - ঠিক আছে দেব ।
একটা ধাবা দেখতে পেয়ে আমরা দাঁড়ালাম । কি খাবেন জিজ্ঞাসা করতে , তপেনদা বললেন -- দুটো রুটি , বেশী লঙ্কাদিয়ে ডবল ডিমের ভুজিয়া আর একটা কোল্ডড্রিংস। 
আমি সেই মতো অর্ডার করে নিজের জন‍্য একটা  কোল্ডড্রিংস বললাম । 
বসে আছি , খাবারের জন‍্য । এই গভীর রাতে ট্রাক ড্রাইভারদের ভীড় বেশী । 
আমি তপেনদাকে বলুন - 
তপেনদা - হ‍্যাঁ , শোন কালিঘাট মাইসোর রোড চিনিস ? আমার জন্ম হয়েছে ওখানে ১৯৩৮ সালে । 
অভিনয় করতে ভাল লাগত , তাই আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন আমি একটা নাটকে একটা ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম । নাটকের নাম ছিল "অচলায়তন " । এর পর একটু বড় হয়ে আমি অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং করি । তারপর বিভিন্ন জায়গায় ছোটো খাটো কাজ করি । 
আর বিভিন্ন জায়গায় নাটকের সাথে যোগ দিই । ডিটেল ইচ্ছা করেই বলছি না । আমার কাকা কবি চঞ্চল চট্টোপাধ‍্যায় মানিকদার খুব বন্ধু ছিলেন । 
কিছুদিন " সন্দেশ" পত্রিকাতে ও কাজ করেছি । তারপর মানিকদা যখন " গুপী বাঘা " করবেন , তখন আমাকে দেখা করতে বললেন । আমি যেতে , কিছু কথার পর আমাকে সিলেক্ট করলেন । ঐ দিন আমি আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলাম । এরকম আনন্দ আর জীবনে কোনদিন পাইনি , আমার আজ ও ঐদিনটার কথা মনে পড়ে । 
--- আমাদের খাবার চলে এসেছে । 
খেতে খেতেই 
তপেনদা - জানিস মানিকদাকে আমি ভীষন শ্রদ্ধা করি । তাই আমি রাস্তায় বা কারো বাড়িতে ড্রিংক করি  না । কাজের পর বেশীরভাগ দিন একবার করে মানিকদার কাছে যাই । ঐজন‍্য আমি বাড়ি ফিরেই ড্রিংক করি । 
আমি - কুঁদঘাটে কতদিন আছেন ? 
তপেনদা - তা অনেক বছর । তবে ভাড়া থাকি । 
ফিরতে ফিরতে ভোর হয়ে এল । 
কিছুদিন পর আমরা    " স্টার & স্টার"  এ যোগ দিলাম । 
আমরা আগের সবাই অপরিবর্তিত রইলাম , তপেনদা ও আমাদের সঙ্গেই থাকবে নিজেই জানালেন । আরো ঘনিষ্ট হলাম আমরা । সপ্তাহে দুদিন আসতেন তপেনদা । সোমবার আর বৃহস্পতি বার ।  আর এসেই খুঁজতেন ,  আতনু ... পার্থ কোথায় ?
হয়তো আমি স্টুডিও কভার করে ফিরবো, অপেক্ষা করতেন । আমাকে দেখেই  বলতেন , ফিসফ্রাই খাওয়া ..
আমিও আনতে দিতাম । এই ভাবেই চলছিল । 
একদিন গরমে স্টুডিওর নিউজ করে সবে ফিরেছি , আমাকে দেখেই -- পার্থ তোর জন‍্য বসে আছি । 
আমি - কেন ? 
তপেনদা - ফিসফ্রাই খাবো বলে । 
আমি - একটু রাগতো স্বরেই , আপনার কি একটুও লজ্জা করে না , আপানাকে দাদা বলে ডাকি আর রোজ আমার  ... মেরে খান । 
তপেনদা -- হাসতে হাসতে ..আমি তোকে আজ থেকে দাদা বলবো , তুই নাম ধরে ডাকিস । 
আমি - ঠিক আছে , এটা মনে রাখবেন । আপনি রোজ এসে খাবেন , আমি না থাকলেও সে ব‍্যবস্থা করে রাখবো । বলে , আমাদের অফিস বয় খোকনদাকে ডাকলাম ‌ । ও এলে ওকে টাকা দিয়ে বললাম আজ তপেনের জন‍্য দুটো ফিসফ্রাই আনো । 
তপেনদা - দেখ অতনু  ,খাওয়ানোর  আগেই নাম ধরছে  ।
অতনু - হা..হা..হা আমি এর মধ‍্যে নেই । 
এভাবেই চলছে আমাদের দাদা-ভাইয়ের মজা । অফিসে ঢুকলেই বলতাম , কি রে তপেন আজ কটা বিজ্ঞাপন এলো ..?
কিছুদিন পর তপেনদা অফিসে ফোন করে বললো , আজ  "Dey's Medical " এর একটা হাফপেজ বিজ্ঞাপন এসেছে , আমি কাজে ফেঁসে গেছি । সাতটার সময় বাড়ি এসে নিয়ে নিতে । 
যথারীতি অতনু আমাকে বিজ্ঞাপনটা কালেক্ট করতে বললো । আমি কুঁদঘাটে তপেনদার বাড়ি পৌঁছোলাম । সেদিন কলকাতার বহু জায়গার লোডশেডিং ছিল ‌ । 
দরজায় টোকা দিতে বৌদি খুলে দিল । সম্ভবত অন্ধকারে আমাকে চিনতে পারেনি । 
বৌদি জিজ্ঞাসা করলো , কাকে চাই ? 
আমি বললাম , একটু তপেনকে ডাকবেন ..
কথা শেষ হবার আগেই দেখলাম দড়াম করে দরজা বন্ধ হবার শব্দ , ভিতরে বেশ জোরে বৌদির গলা শোনা যাচ্ছে  - তুমি আজকাল কাদের সঙ্গে মেলামেশা করছো !! ! একটা অল্প বয়সের ছেলে তোমার নাম ধরে ডাকে ??? 
একটু পড়েই তপেনদা বেড়িয়ে - আয় ।
আমি জুতো খুলে ঢুকতে যাব , সেসময় লাইট চলে এলো ।
ঘরে এসে বসতে , বৌদিকে তপেনদা ডাকলো এবং অফিসের সব ঘটনা নিজে মুখে বলতেই বৌদি হাসতে হাসতে ...আমার দিকে তাকিয়ে ঠিক করেছো বলে সমর্থন করলেন ।  
একবার বাংলা ছবির এক ভিলেনের সাথে আমার খুব অশান্তি হয়েছিল । তপেনদা শুনে সত‍্যজিৎ রায় কে বলেছিলেন , সে সময় ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতে উনি তার আর এক বিখ‍্যাত ছবির শুটিং করছিলেন । শুনে সেই ভিলেন চরিত্রের অভিনেতাকে ডেকে বলেছিলেন । তুমি যে বাস্তবিক ভিলেন হয়ে গেছো , এটাতো জানতাম না ।
পরের দিন , ঐ ভিলেন আমার সাথে দেখা করে সব মিটিয়ে নেন ।
তপেনদার একটা মুদ্রা দোষ ছিল , সব সময় চোখের পাতা পিটপিট করতো  । আমি একবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম , শুটিং এর সময় কি করেন ? এরকম হয় ?
মাথা নেড়ে বলেছিলেন , একদম নয় । তখন আমি একেবারে অন‍্য মানুষ । 
গড়িয়াতে একটা জমি কিনেছিলেন , সেটাও একদিন আমাকে দেখিয়েছিলেন ।  খুব ইচ্ছা ছিল নীজের আত্মজীবনীটা শেষ করবেন । কিন্ত ২০১০ র ২৪শে মে যে তাকে সকলের থেকে চিরতরে দূরে সরিয়ে দেবে ..
না কেউ ভাবিনি ‌ এতো মানুষের ভালোবাসা , আত্মীয় না হয়েও যে সকলের সাথে আত্মীয় সুলভ আন্তঃরিক ব‍্যবহার ...আপনজন হারানোর বেদনা আজও আমায় যন্ত্রনা দেয় ..স্মৃতি যে এতো কঠিন যন্ত্রনা দেয় , এটা আগে জানতাম না । 
আর বলার ভাষা পাচ্ছি না ।  
আমার ধৃষ্টতা , আমার মজা ,   ..ঐ মজাগুলো যে আজ ও  এতো যন্ত্রনা দেবে আমার অজানা ছিল ।

মন্তব্যসমূহ