ফ্রিউইংসের প্রদর্শনীর আজ শেষ দিন - বেহালার দিন প্রতিদিন এর ক্যানভাসে আজ আরো শিল্পীর কথা

 ক্যানভাস 

একজন মজেন বাংলার রূপে, আরেকজন জেহাদি 
শিবনাথ নস্করের ছবি

 -  কাজল ভট্টাচার্য

গাছপালা, নদী পুকুর, নিমেষেই এঁকে ফেলেন শিল্পী। বাস কংক্রিটের মহানগরী কলকাতায়। তবে ছেলেবেলে থেকে শৈশব ছুঁয়ে বেড়ে ওঠা বোড়ালে। সত্যজিত রায়ের পথের পাঁচালির সেই প্রেক্ষাপটে। চোখের সামনে দেখেছেন জলজঙ্গল সাফ করে কংক্রিটের দখলদারি বেড়ে চলা। তবু মনের কোণে থেকে গেছে বাংলার সেই  শস্যশ্যামলা রূপ। সেই রূপ তুলে ধরতে স্বচ্ছ জলরংয়ের চেয়ে ভালো আর কোন মাধ্যমই বা হতে পারে? স্বাভাবিক ভাবেই জলরংয়ের খেলায় মজেছেন রসিক শিবনাথ নস্কর। ভেজাপাতায়, কখনও বা হ্যান্ডমেড পেপারে রং খেলিয়ে আঁকতে ভালবাসেন। 

অঙ্কনশিক্ষার এই গোটাটাই সোপার্জিত। পেশার সঙ্গে নেশার কোনও সম্পর্ক নেই শিল্পী শিবনাথের। জীবিকা জড়িয়ে চিকিৎসা জগতের থেরাপির সঙ্গে। জীবন বলতে ছবি, যা নিঃসন্দেহে বর্ণময়। 'কাজের চাপে আর কতটুকুই বা সময় পাই?' স্বগতোক্তি করেন শিল্পী। তবু কাজের শেষে একশরীর ক্লান্তি নিয়ে যখন বাড়ি ফেরেন, তখন সঞ্জিবনী সুধার অব্যর্থ দাওয়াই শিবনাথের জলরং থেরাপি।

বাপ্পা ভৌমিকের ছবি

অতো রোমান্টিসিজমের ধার ধারেন না বাপ্পা ভৌমিক। ফ্রিউইংসের প্রদর্শনীতে দেখা গেল তাঁর ছবিও।  ক্যানভাস জুড়ে জেহাদ। প্রতিবাদ সামাজিক, লিঙ্গ বৈষম্যের। বৈষম্যের নগ্নরূপ তুলে ধরতে বাপ্পার ছবির চরিত্ররাও উলঙ্গ। যৌন নির্যাতনের মুখোমুখী হলেই নারী সেখানে করালবদনী। কখনও কালী আবার কখনও ডাকিনী যোগিনী। সেই নারীর কোমল বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে শার্দুলের তীক্ষ্ম দাঁত। আবার কখনও শিল্পী সোচ্চার বাক স্বাধীনতা নিয়ে। কিন্তু সেখানেও দ্বিচারিতা। মানুষ বলে এক করে আর এক। ছবিতে রাজনীতিও অচ্ছুত নয়। সমাজ দূষণমুক্ত করার দাবি তোলেন বাপ্পা রংতুলিতে। 

তবে বাপ্পার ছবির জগতের অনেকটাই জুড়ে কালিকলমের কাজ। কালো কালির অজস্র রেখার কারিকুরির মধ্যে আচমকাই এক ঝলক লাল। সেই লাল কখনও হৃদয় ভেদ করে বেরিয়ে আসা শোণিত, আবার কখনও এক তীব্র প্রতিবাদ। 'এরমধ্যেই কমবেশি সাড়ে পাঁচশো পেন অ্যান্ড ইনকের কাজ করে ফেলেছি,' বলেন শিল্পী। 
এখনও অনেক পথচলা বাকি তরুণ শিল্পীর। তবে এরইমধ্যে নিজের চলার পথ বেছে নিয়েছেন বাপ্পা ভৌমিক।

মন্তব্যসমূহ