বেহালার দিন প্রতিদিন বিশেষ - চোদ্দ শাক ও চোদ্দ প্রদীপ কথা , জেনে নিন কেন এই ধারা আমাদের মধ্যে এল ?

 চোদ্দ শাক বিশেষ 


চোদ্দ শাক শুধু রীতি নয়, এই সময়ের ঋতু পরিবর্তনের রোগ প্রতিরোধক



  - সৌমাগ্নি দাস

( কালী পুজোর আগের দিনকে বলা হয় ভুত চতুর্দশী। এদিন বাড়িতে চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানো আর চোদ্দ শাক খাওয়ার রীতি আমাদের প্রচলিত একটি ধারা। কেন এই ধারার প্রবর্তন , কেনই বা এটা আপামর বাঙ্গালীর রীতির মধ্যে ঢুকে পড়ল এই প্রথা ? )

প্রচলিত একটি কাহিনীর কথা বয়া যাক,  কালী পুজোর আগের দিন নাকি সেই সব মানুষেরা মর্তে নেমে আসেন, যারা এই লোকের বাসিন্দা নন,  ,মানে যম লোকের বাসিন্দারা মর্তে নেমে আসেন , আর গৃহস্থের বাড়িতে ঢুকে পড়েন পুজো নিতে। কেউ বলেন , সেদিন আসেন প্রাগ জ্যোতিষ পুরের রাজা ,নরকাসুর, যিনি তাঁর পরাক্রমে স্বর্গ দখল করে নিয়েছিলেন, আবার কেউ  রামের চোদ্দ বছরের বনবাসকে এর সঙ্গে জূড়ে দিয়েছেন, কেউ বলেন আমাদের চোদ্দ পুর্ব পুরুষ , যারা যমলোকে রয়েছেন,তাদের সেই লোক থেকে বাড়িতে আসার ছাড়পত্র দেওয়া হয় ওই কালীপুজোর আগের দিন, অর্থাৎ কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশীর দিন। আমরা তাদের আসার স্মরণে বাড়িতে চোদ্দ প্রদীপ জ্বালিয়ে অপেক্ষা করে থাকি। আবার অনেকে এটাকে ভুত চতুর্দশীও বলেন। একদিকে নরকাসুর অন্য দিকে যম লোকের বাসিন্দারা যাতে আমাদের ঘরে ঢুকতে না পারে , তাই বাড়ির চারিদিকে ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয়ে থাকে। এই ১৪ র সঙ্গে মিল করা হয় চতুর্দশী তিথিটাকে।

এদিন আমরা চোদ্দ রকমের শাক খেয়ে থাকি। যাকে আমরা চোদ্দ শাক বলে থাকি। সেই সময়ে এই রীতি আমাদের পুর্বপুরুসদের সঙ্গে আয়ুর্বেদ এর সাথে যুক্ত মানুষজন মিলে তৈরি করেছেন। কেননা এই সময়ে এক ঋতু থকে আরেক ঋতুর পরিবর্তন আসে। নানা রোগের প্রকোপ আমাদের আক্রমণ করে । সেই রোগ সংক্রমণ থেকে বাচতেই নানা গুণ সম্পন্ন চোদ্দটি শাক খাওয়া হয়। এই সময় যেহেতু ঠান্ডার আমেজ এসে যায়, হাওয়ায় ভাসে হিম যা থেকে নানারকম রোগ সৃষ্টি হয়, তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ানোর জন্যে এই চোদ্দশাক খাওয়ার প্রথা। তাই এগুলো খাওয়াই ভালো। আর যাই হোক এতে ক্ষতি তো কিছু নেই। তবে এই সমস্ত শাক এখন সব জায়গায় ঠিকমত জোগাড় করা সম্ভব নয়। তবুও যোগাড় করার চেষ্টা করে থাকি আমরা। 

এই চোদ্দটি শাক হল ।

১। ওল, ২। কেঁউ , ৩। সর্ষে , ৪।বেতো, ৫। কাল্কাসুন্দে , ৬। নিম, ৭। জয়ন্তী, ৮। হিংচে বা হেলেঞ্চা, ৯।শাঞ্চে, ১০। পলতা, ১১। শুষনি , ১২।ভাট পাতা, ১৩। গুলঞ্চ, ১৪। শৌলফ। এখন অনেক শাক আমরা চিনিনা বা পাওয়া যায়না , তাই পরিবর্ত হিসাবে পুঁই , লাল নোটে, পালং , মুলো এমনকি কলমি শাককেও জুড়ে নিয়েছি চোদ্দ শাকে। 

এবার দেখে নেওয়া যাক রীতির এই ১৪ শাকের মধ্যে কোন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লুকিয়ে আছে । 

১। ওলঃ কৃমি,বায়ু,কফ ও পিলে রোগের ক্ষেত্রে ভালো।

২।কাল্কাসুন্দেঃকোস্টকাঠিন্য, অ্যালার্জি,অর্শ,ফিসচুলায় উপকারে আসে।

৩। বেতোঃ কৃমিনাশক, অম্বলে কাজ করে।

৪। জয়ন্তিঃ বহুমুত্র,স্বেতী,জ্বরে উপকারি।

৫। গুলঞ্চঃজ্বর ,পিত্তদোষ।

৬। শুষনিঃ হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ,হাই ব্লাড প্রেশারে উপকারি।

৭।  হিঞ্চেঃ হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়, পিত্তনাশক হিসাবেও কাজ করে।

৮। কেউঃ কুষ্ঠ , চুলকানি,বমিভাব, ব্রঙ্কাইটিস,আরথ্রাইটিস রোগে উপকারে আসে।

৯। নিমঃ নিমের অনেক গুণ তাই বললাম না।

১০। শুলফাঃ বাচ্ছাদের গ্রাইপ ওয়াটার এর একটা উপাদান এই শাক থেকে আসে।জরায়ুর ফাইব্রয়েড ,চোখের রোগ,স্নায়ু রোগেও উপকারি।

১১। ভাটঃ ক্যান্সার প্রতিরোধ করে,কোলেস্টেরল,ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে।

১২।পলতাঃ রক্ত বর্ধক ও রক্ত শোধক, লিভার ও চর্ম রোগে উপকারি, রক্তে শর্করার পরিমান কমাতে সাহায্য করে।

১৩। শালিঞ্চাঃ ডায়াবেটিস , চখ,চুল ও ত্বকের জন্য উপকারি।

১৪।সর্ষেঃ ত্বক,যকৃত,চোখের পক্ষে উপকারি।এই শাকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন কে-সি-ই ছাড়াও আছে ক্যালসিয়াম,পটাসিয়াম,ম্যাগ্নেসিয়াম, ও আয়রন আছে।

ছবি সৌজন্যঃ সংগৃহীত

মন্তব্যসমূহ