বেহালার দিন প্রতিদিন রবিবাসরীয় বিশেষ - ক্যানভাসের জগত/ কাজল ভট্টাচার্যের কলমে ক্যানভাসের রূপকার শর্মিলা

 

ক্যানভাসের জগত 


 নারীশরীরে ফুল ফুটিয়েছেন শর্মিলা



কাজল ভট্টাচার্য , কলকাতা 

শর্মিলা কি কবিতা লেখেন?
অবশ্যই লেখেন। তবে কালিকলমে নয়, রংতুলিতে। ক্যানভাসের বুকে আঁকা কবিতার পর কবিতা। রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধ হোক কী বীরভূমের বগটুইয়ের বধ্যভূমি, সেই নৃশংসতার কোনও ছাপ পড়ে না শর্মিলার কল্পজগতে। ছোঁয়া লাগে না বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোনও জটিলতার। 
শর্মিলার বাস ভাবজগতে। সেই জগতে নারী মানে শক্তি। শক্তির উৎস। নারীর গর্ভ থেকেই উঠে আসে পৃথিবীর প্রবল পরাক্রমশালী আলেকজান্ডার থেকে সেই মহামানব। সেই নারীকেই ক্যানভাস জুড়ে এঁকেছেন তিনি পরম মমতায়।


'আমার নারী ভালবাসার,' বলেন শর্মিলা। প্রকৃতির প্রেমে লালিত সেই সুন্দরীরা। তাদের বর্তুল স্তনে ফোটে ফুল। ভরাট বুকে জড়ানো পুষ্পসুবাস। যোনিদেশ আড়াল করে লতা গুল্ম ফুল পাতা। কোনও আড়াল আবডাল রাখেননি শর্মিলা। তাই শরীরে একফালি কাপড়ের চিহ্ন নেই। সৌন্দর্য ওপচানো যৌবন। 'সৌন্দর্যের এই সমাহারকেই দেখাতে চাই,' বলেন শর্মিলা। একটা দুটো নয়, মোট আটত্রিশখানা ছবির সিরিজ সাজিয়ে ফেলেছে শর্মিলা পাল। সবমিলিয়ে নারীশরীর সৌন্দর্যের মহাউৎসব। 
কিছু শিল্পীর ছবি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। শর্মিলার ছবি নিয়েও হয়েছে। শিল্পজগতে পা রেখেই বিতর্কের ঝড় তুলতে পেরেছেন শিল্পী। ভবিষ্যতে হয়তো তিনি সাবধানী হবেন। জড়াতে চাইবেন না বিতর্কে। তবে অতিরিক্ত সাবধানী হলেও বিপদ। শিল্প তখন আবেগের সুনামি না হয়ে বসন্তের বাতাস হয়ে গেলে, বঞ্চিত হন দর্শকরা। 


রোজ নৈহাটি থেকে কলকাতা দৌড়ানো। যারা ওই লাইনে যাতায়াত করেন তাঁরাই জানেন লোকাল ট্রেনের ভিড় ঠেলে ওই যাতায়াত ঠিক কতটা কষ্টসাধ্য। ওই পথেই নিত্য যাতায়াত ঝড়ের বেগে উঠে আসা তরুণী শিল্পী শর্মিলার। সবমিলিয়ে তিনি নিজেই যেন এক শক্তির উৎস। একমুখ হাসি দিয়ে নিজের যাবতীয় ক্লান্তি আড়াল করে অতিথি দর্শকদের আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত দেখা গেলো শিল্পীকে। হরিদেবপুরের ক্যাওড়াপুকুর মিশন মোড়ের ভেতরে ঢুকলেই প্রখ্যাত ভাস্কর রামকুমার মান্নার রংমাটি শিল্পকলা চর্চা কেন্দ্র। ভাস্কর নিজেই উদ্যোগী হয়ে রংমাটিতে শর্মিলার প্রদর্শনী আয়োজন করেছেন। ছবি সাজাতে হাত মিলিয়েছেন দেবজ্যোতি রায়। ২৭ মার্চ অনুষ্ঠান উদ্বোধনে হাজির হয়েছিলেন নায়িকা মুনমুন সেন। প্রদর্শনীর শেষদিন ৩ এপ্রিল। 


এই প্রদর্শনীতে শর্মিলা যে ছবিগুলো দেখালেন তা মূলত গোলাপি রংয়ে আঁকা। মিষ্টি প্রেমের রং। এত গোলাপি রং দেখে স্বাভাবিকভাবেই মনে পড়ে যায় পিকাসোর 'পিঙ্ক বা রোজ পিরিয়ড'- এর কথা। সেখানে ছিলো আনন্দের প্রকাশ। একাকীত্বের ছবি দেখা গেছিলো পিকাসোর 'ব্লু পিরিয়ড'- য়ের ছবিতে। শর্মিলার আগামিদিনের ছবিতেও কি সেরকম কোনও চমক অপেক্ষা করে আছে?

মন্তব্যসমূহ